
- শিমুলী শেষ পর্যন্ত তবারকের লগে শুইলো? আর কাউরে পাইলো না, আমগোরেও চোখে পড়লো না!
- শুইতে দেখছোস?
- দেখি নাই, বোঝাই তো যায়। কোনো মাইয়া যখন শোয় তখন সেটা তারে দেখলেই বুঝন যায়। তবারকরে দেখলেও বুঝা যায়। দেহস না একলগে ঘোরে, খাইতে যায়, ক্লাসও করে এক লগে বইসা। শিমুলীর শরীর দেহস নাই এ কয়দিন, আগের সেই জড়তা নাই, একটা খেলাখেলি ঢঙ আসছে অহন। আরে এ মাইয়ারে তো আর পরশুদিন থিকা দেখতেছি না, দুই বছর ধইরা দেখতেছি। আর কোনো পোলা যে শিমুলীর লগে পড়ে-টড়ে হেইডা তার আচরণ দেখলে মনে অয় না।
- তা শুইছে কোথায়?
- কোথায় আবার! শিমুলীর নিজের বাসায়। তবারকের তো আর ঢাকায় কেউ থাকে না। শিমুলীই ম্যানেজ করছে। বাসা খালি থাকে না ধর এক আধ-দিন। মিডলক্লাসের বাসা তো তুই দুই একদিন খালি পাবিই। কামের মায়ারে একা রাইখা যায় বাইরে দিয়া তালা লাগায়া। এমন কোনো চান্সই নিছে শিমুলীয়া। আরে বেটি তোর এতো খাঁই থাকলে আমগোরে কইতি। আমরা কি দেখতে খারাপ। ওই হালায় তো দেখতে উন্দুরের মতো। কথাটাও ঠিক কইরা কইতে পারে না।
- তাইলে তো শিমুলী এখানে কর্তা, আর তবারক ভজা। হে হে হে।
- হ, আর ওই মাগী হারাদিন ওর লগে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে।
- হ, তুই ক। ওই পোলার তো কথাই হয় না। চেহারাও হয় না। আল্লায় দিছে এক চেহারা, মাশাল্লাহ।
- ওর লগে কথা কইছোস এই ব্যাপারে।
- কার লগে
- শিমুলী
- নাহ, কেমনে, ও তো ফিইরাও তাকায় না। এমুন ভাব যেন আমরা বিছুটি। অথচ প্রথম দিকে এ আমগো লগেই কতো খাতির, সাবের একটু আয় না আমার লগে, একটা জিনিস কিনুম। তা কোনোদিন ওর কোনো কথায় না করছি। আর এহন ওর দেমাগে বাঁচি না। শইলডায় আগুন ধইরা যায়। এসব বিষয় নিয়া তো বেশি কথাও কওন যায় না মনে কর।
- আমার লগেও তো খাতির আছিলো। আমি তো ভাবছিলাম প্রেম বুঝি হয়াই গেছে। কিন্তু মগর বাইন মাছের মতো পিছলায়া গেল।
- ক তো তবারক কোন ভুলে ওই মাইয়ারে ভুলাইছে।
- জানি না, আমার মনে হয় শিমুলীর রুচি খারাপ। মিডল ক্লাস ফ্যামিলিতে এমন খারাপ রুচি বিরাজ করে। কহন কী করে, কারে ভাল্লাগে, বুইঝা উঠতে পারে না। পরে পেট বাঁধায়, মুশকিলে পড়ে। এসব কাহিনী কি নতুন দেখতেছি। আমাগোর পাশের বাসায় একজন আছিলো, ফিরোজা আপা। তারও একই কাহিনী। শিমুলীরে যদিও আমার এমন মনে হয় নাই আগে।
- হ, শিমুলীয়ারে তো আমরা আলাদাই দেখছিলাম। সুন্দর, ডাগর চোখ, ভরা বুক, একটা ফ্লেশি ভাব আছিলো। দেইখাই মনে হয় সতেজ, আনকোরা। ভালো ঘরের মাইয়া। পোশাক-আশাকও খারাপ পড়তো না। পিজা-টিজা খাইতো দুপুর বেলায়, ভাত খাইতো না। কথায় একটা ড়, ড় ভাব আছিলো। হাসতো তো পরাণ খুইলা। মানে মেয়েলি জড়তা অন্তত আচরণে তো দেহি নাই। একদিন তো শালসা খাওয়ারও বাসনা করছিলো আমার কাছে। লয়া যাই নাই, আমারই একটু ভয় লাগছিলো। সেই মাইয়া কিনা একটা গাঁইয়া পোলার লগে ঘষাঘষি করে।
- তবারক তো একটা ওর্থলেস, জিন্স প্যান্টটাও পড়তে পারে না। আরে পাছা না থাকলে কি জিন্স পড়া যায়। এখনও নরমাল প্যান্ট পড়ে। শার্ট একটা পড়ে যার কোনো সুরত নাই। এহনও ওর গায়ে খাডালের গন্ধ পাবি। মনে আছে তগো, প্রথম যেদিন পরিচয় হইলো ওর লগে, নাম কয় তবারক। ফের জিগাইলাম, কয় তবারক। বাড়ি কই, নয়াকান্দা। বাপে মনে অয় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টর না চাষা কিছু একটা অইবো। ফেসবুকে তো অরে আমিই একাউন্ট খুইলা দিলাম। একটা ছবি বাইর করছিলো, মাটির উঠানে খাড়ায়া আছে, নীল প্যান্ট আর সাদা জামা গায়ে, পেছনের দামায় ল্যাপ ঝুলতেছে লাল রঙের, খয়েরি ফুল-তোলা কোনা মাইয়ার জামাও আছে ছবিতে এক্কেরে গ্রামীণ পরিবেশ। এমন একটা দরিদ্র পোলার লগে শিমুলী কাম করে, তাজ্জব দুনিয়া। দেহিস একদিন মুসিবতে পড়বো এই মাইয়া।
- তবারকের লগে আমার যেদিন প্রথম দেখা, আমারে কয়— আসালামুআলাইকুম। আমি কই ওয়ালাইকুম, কী নাম তোমার। কয় তবারক। আমি কই কী বক? জ্বি তবারক। হা হা, যেন ক্লাস ফাইভে পড়ে। এমন কইরা নামের বানান করতে কইলাম, অয় তো বানানও করলো। মোহাম্মদ তবারক ইসলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। শাওয়ার খুইলা গোসল করতে পারে না এমন একটা পোলায় নাকি আবার প্রেম করে। মনে অয় কসকো সাবান নিয়া আইছিলো গোসল করতে। সেই তবারক আইজ আমাদের জেলাসির কারণ হয়া দাঁড়াইলো।
- জেলাসি কস ক্যান।
- এইডা জেলাসি না তো কী?
- না, মানে আমরা একটা বিষয় নিয়া আলাপ করতেছি। ধর এমন কোনো একটা প্রেম নিয়া আলাপে সমস্যা কী?
- না জেলাসিতেও আমি সমস্যা দেখি নাই।
- তাইলে আবার তর্ক তুলস ক্যান, এই প্রেম কেমনে অইলো তা-ই ক।
- আমি অবশ্য একটা জিনিস দেখছি।
- কী দেখছোস?
- শিমুলীর মামার বাসা আছে না ভুতের গলিতে?
- হ আছে তো
- আমি তারে আর তবারককে ওইখানে যাইতে দেখছি। এই ধর পাঁচটার দিকে। বার তিনেক আমি তাগোরে ফলো করছিলাম। তিনবারেই ওরা পাঁচটার দিকেই গেছে। ওই সময় মামা নিশ্চয়ই বাসায় থাকেন না। তার তো চেম্বার আছে সোবহানবাগে বোধহয়। পাঁচটার দিকে তো তার বাইর হওনেরই কথা। বা ছয়টার দিকে। আমি এক দিন আটটা পর্যন্ত খেয়াল করছি, ওরা বাইর হয় নাই। মামারেও ঢুকতে দেখি নাই।
- মামার লগে এ বিষয় কথা কইছিলি।
- নাহ, খালি ফলো করছি।
- মানে তুই সেই তিন ঘণ্টা খাড়ায়া আছিলি।
- তা কইতে পারোস, চা-বিড়ি খাইছি, হাঁটাহাঁটি করছি। তিনদিনে মনে কর আমার চারশ’ টেকা খরচ।
- আর কিছু করোস নাই?
- তবারকের মোবাইল চেক করছি। তাতে শিমুলীর তিন-চারটা মেসেজ পাইছি। একদিন তবারকরে ভয় দেখায়া ওর লগে রাতে আছিলামও। আমার ধারণা আছিলো রাইতে ওরা কথা কয়। সেদিন তবারকের ফোনে টাকা আছিলো না। আমি ওরে টাকা ভইরা দিয়া কথা কইতে কইছিলাম। মাইরের ভয়ও দেখাইছিলাম। কিন্তু সেদিন বেশি কথা হয় নাই। মানে আমি আসলে তবারকে চার্জও করছিলাম ওরা কী করে, কই যায় এসব বিষয়ে। তবারক তো আসলে এক্কেরে ভিতু, কোয়েলের ছানা যেন। ডিম ফুইটা বাইর হয়ার ভয়টা তার এখনও আছে। তো আসলে ওরে বেশি ভয় দেখানোর ফলটা আমার জন নিরাপদ হবে না মনে হইলো।
- এইডা একটা ভালো পয়েন্ট ধরছোস। দূর্বলের প্রতি মেয়েদের একরকম প্রেম তৈরি হয়। এইটারে ঠিক প্রেম না বইলা কোমলতা কইতে পারোস। এই কোমলানুভূতি পরে প্রেম হিসাবে ধরা দেয়। তাগো দুই জনের মধ্যে এখন কি আসলে প্রেমই চলতেছে!
- এতক্ষণের গীত-বাদ্য কিছুই তোর কানে ঢুকলো না। এই যে ওরা বাসায় যায়, মামার বাসায় যায় এসব কী? এক লগে খায়, মোবাইলে কথা কয়। এইগুলারে কি তুই প্রেম কইতে চাস না। মেসেজ কী লেখা আছিলো রে।
- বেশি কিছু না, খাও, ঘুমায়ও, ঔষুধটা খাইছো কি না।
- তো এইগুলারে কি প্রেম কইতে চাস না। কইতে চাস ওরা ভাই-বোইন?
- মানে তবারক যদি ভিতু টাইপ পোলা হয় তাইলে ওর লগে প্রেম করতে যাবে কেন শিমুলী।
- আরে বালটা হেইয়া কি আমরা বুঝি, আমগো কথাও তো এইডাই।
- শিমুলীরে একবার জিগান যায়, নাকি কস। মানে আমাগো যেহেতু ইন্টারেস্ট আছে।
- আমি জিগাইছি।
- কস কী!
- হ, জিগাইছি। আমারে মুখ ঝামটা মারছে। কয় তোমার কী তাতে?
- তরা কেউ কি শিমুলীর লগে বিশেষ কোনো খারাপ আচরণ করছোস?
- নাহ।
- ইমানে ক।
- এই ধর ফেসবুকে মেসেজ পাঠাইছিলাম পারভারটেড মেসেজ, সিডউসি করার চেষ্টা করছিলাম। এহন এইডারে তুই অপরাধ মনে করতারোস। আমারও তাতে আপত্তি নাই। কী করুম, খারাপ তো কিছুটা আছিই।
- আমিও করছিলাম, ওয় বুঝে নাই। ঘুরতে ঘুরতে কলা ভবনের পিছনে চইলা গেছিলাম। আমার আসলে সেদিন মাথাটাই খারাপ আছিলো। বেশি কিছু যদিও করি নাই। মানে ধর এই একটু জড়ায়া ধরার চেষ্টা আরকি। আমার ধারণা ছিলো তার লগে আমার প্রেমই আছে। সেদিন বুঝলাম— না, প্রেম নাই।
- আমি ফোন করছিলাম একবার, বললাম আসো ঘুরতে যাই। খালি তুমি আর আমি। এই শেষ, আর কোনো কিছু করি নাই। কিন্তু শিমুলীর ভাব দেখলে মনোয় এতেই সব করা হয়া গেছে।
- আমি করছিলাম একদিন উল্টা ঘটনা, তবারকরে নিয়া মশকরা করতে ছিলাম। ওরে বলছিলাম সিগারেট আইনা দিতে, ও তো দেয় না, পরে কবে জানি কইছিলাম পানি আনতে তাও সে আনে না। ওরে নিয়া হাসাহাসি, ধামকি-ধুমকি এসব দিতেছিলাম। শিমুলীয়া কোনোদিন আমার লগে যাইচা কথা কয় নাই। সেদিন কইলো, জেনি আমি তবারকের নাম নিয়া হাসাহাসি করতেছিলাম, আর অয় ভ্যাপলার মতো কান খোঁচাইতেছিলো। শিমুলী আইসা কয় কী ব্যাপার। তোমরা ওর লগে এমন করতেছো কেন। আমি কইলাম তাতে তোমার কী। সে কয় আমার কী মানে। তোমার একটা বাজে আচরণ করবা আমার সামনে আর আমি চুপ করে থাকবো নাকি। বইলা নিয়া গেল আমার সামনে থিকা।
- তবারকরে জিগাইছিলো এ বিষয়ে। আমি জিগাইছিলাম, কইলাম তো। ও কয় এসব কিছু না। তাইলে কী সব কিছু তা-ও কয় না।
- ওরে কিছু করোস নাই?
- করছি।
- কী?
- ওর একটা প্যান্ট পোড়াইছি।
- মানে কী!
- হ, ওরে যে প্যান্টটা শিমুলী কিনা দিছিলো। আমি গেছিলাম ওগো পিছে পিছে একদিন। মার্কেট পর্যন্ত। শিমুলীই কিনা দিছে। আমার নিজ চোখে দেখা। আরেহ যে পোলা দুই বছর ধইরা দুইটা প্যান্ট পিন্দে অরে প্যান্ট কিনা দিয়া হাতেম তাই সাজতে গেছে শিমুলী। আমাগোরে কুনুদিন একটা কিছু খাওয়াইছে ক? এমুন পিরীত। আমার সহ্য হইলো না।
- তুই একাই কামডা করলি, হি হি হি, আমাগোরে ডাকলি না। ল শালার বাকি সব কিছু একদিন জ্বালায়া দেই। সব জ্বালায়া দেই খালি লুঙ্গি ছাড়া। লুঙ্গি পইড়া তো ও আর বাইর অইতে পারবো না।
- হি হি হি, হ, ওর রুমে যাই ল। এহন আছে না শিমুলীয়ার বগল তলে আছে কে জানে।
- হা হা, ল যাই।
- কিন্তু একটা বিষয় আমারে ক তো।
- কী!
- শিমুলীর মামার নাম কী?
- উম, মনে অয়, আজিজুল হক।
- হ আজিজুল হক।
- ক্যান
- আমি ওর প্যান্টে একটা প্রেসক্রিপশন পাইছি।
- তো তাতে কী?
- তাতে আজিজুল হক নামটা লেখা আছিলো।
- ওহ, উনি জানি কিসের ডাক্তার।
- সাইক্রিয়াটিস্ট।
বাংলাদেশ সময় : ১৫০০ ঘণ্টা, ০৮ ডিসেম্বর ২০১২
টিকে, [email protected]