
অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শরৎ যুগের পরে বাংলা সাহিত্য অনেক সমৃদ্দ হয়েছে। অনেক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু শরৎ-এর মতো শব্দের দানা দিয়ে মানুষের জীবন চিত্র কেউ আঁকতে পারেনি। কল্পনার জগতে তিনি বাস্তবের একটা প্রতিচ্ছবি দেখতেন। আর রঙ তুলি ছাড়াই সে চিত্র আঁকতেন। যেখানে ফুটে উঠত মানুষ জীবনের হাসি কান্না দুঃখ বেদনা। আর প্রেম। সে তো তার কল্পনায় ভিন্নমাত্রায় ফুটে উঠেছে। শরৎচন্দ্রের মতো হয়ত এমন ছবি কেউ আঁকতে পারেননি। সেজন্যই শরৎ আজও বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে অপরাজেয়। জীবদ্দশায়ই বিপুল সফলতা দেখেছেন। নিজের লেখা পাঠকদের মুগ্ধ করেছে। এটা লেখককে তৃপ্তি ও আনন্দ দিয়েছে। প্রতিনিয়তই তার জনপ্রিয়তা বৃদ্দি পেয়েছে। এর মূল কারণ সাহিত্য মানুষের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাহিত্যের মাঝে মানুষ যখন নিজের জীবনের চিত্র খুঁজে পান তখনই মানুষ সে সাহিত্য ধারণ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সৃষ্টির ব্যাপারে সর্বদাই ছিলেন সচেতন এবং যত্নশীল। যা লিখেছেন তা রঙ রূপ রসে ভরিয়ে জীবন্ত প্রাণবন্ত করে পূর্ণতা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ শরৎ-এর এমন লেখার বিরূপ সমালোচনাও করেছেন। তাদের ধারণা শরৎচন্দ্রের লেখার ভেতর শুধুই বেদনা। শরৎচন্দ্র শুধু মানুষকে কাঁদাতেই পেরেছেন। হাসাতে পারেননি। তার লেখায় দুঃখ বেদনার চিত্রটা বেশি ফুটে ওঠার একটা কারণ আছে। শরৎচন্দ্রের জীবনে দুঃখ বেদনাই ছিলো বেশি। সুখ তাকে স্পর্শ করেছে খুবই কম। হয়ত তার লেখায় নিজের অজান্তেই নিজের জীবন কাব্য ফুটে উঠেছে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবাননন্দপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। গ্রামটি ব্যান্ডেলের অদূরে সরস্বতী নদীর কাছে অবস্তিত। এগ্রামেই তার শৈশব কেটেছে। এখান থেকেই তার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলালও লেখাপড়া জানতেন। চাকরিও করতেন। কিন্তু তিনি সব সময়ই থাকতেন অস্থির। কোনো চাকরিতেই দীর্ঘদিন টিকতে পারতেন না। সে জন্য সংসারে অর্থ কষ্ট লেগেই থাকত। এক সময় অর্থ কষ্ট তীব্র আকার ধারন করে। মতিলাল স্ত্রী পুত্র কন্যাদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরালয়ে চলে যান। শরৎচন্দ্রের শিক্ষাজীবন নতুন করে এখানে শুরু হয়। ভাগলপুরে বসেই তেজনারয়ণ জুবিলী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৪ সালে এনট্রান্স পাস করেন। কলেজে ভর্তি হন এফ এ ক্লাসে। কিন্তু লেখা-পড়া আর অগ্রসর হলো না। অর্থাভাব এমন ভাবে গ্রাস করলো যে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে হলো। প্রথমে শরৎচন্দ্রের মাতৃবিয়োগ ঘটে। এর পর পিতা মতি লালের সঙ্গে শ্বশুরালয়ের বিরোধ লাগে। এক পর্যায় মতিলাল শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যান অন্যত্র। শরৎচন্দ্রের জীবনে দুর্গতি আরো বেড়ে গেলো। এই কষ্ট সৃষ্টের মাঝে শরৎচন্দ্র একটি বড় আশ্রয় পেয়েছিলেন। যে আশ্রয়ই তাকে সাহিত্য সাধনার পথ দেখিয়েছিলো। আর সে পথেই শেষ পর্যন্ত সফলতা পেয়েছেন। ভাগলপুরে শরৎচন্দ্রের এক বন্ধু জুটে ছিলো। হয়ত স্কুল কিংবা কলেজে পড়ার সময়। যাদের বাড়িতে সে সময় সাহিত্যচর্চা হতো। তারা গল্প উপন্যাস কিনতেন এবং ভারতী প্রভৃতি পত্রিকা রাখতেন। এখানেই শরৎচন্দ্রের সাহিত্য সাধনা শুরু। একই সময় শরৎচন্দ্র প্রবেশ করেন লেখার জগতে। জমাতেন সাহিত্যের আড্ডাও। আড্ডাধারিদের মধ্যে গল্প লিখতেন বিভূতিভূষণ, অনুপমা, গিরীন্দ্রনাথ, যোগেশচন্দ্র প্রমুখ। এসব গল্প প্রকাশিত হতো তাদের হাতের লেখা পত্রিকায়। পত্রিকাটির নাম ছিলো ছাঁয়া।
শরৎচন্দ্র শৈশব থেকে যৌবনের অনেকটা সময়ই ছিলেন সাংসারিক ও মানসিক যন্ত্রণায়। তার জীবনে ঐশ্বর্য তেমন একটা আসেনি বললেই চলে। তবে শেষ জীবনে অর্থ কষ্টটা একটু কমছিলো। শরৎচন্দ্র সবসময়ই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। দৈহিকভাবে ছিলেন অনেক লম্বা। প্রায় সময়ই পরতেন একটা লম্বা পাঞ্জাবি। হেমন্দ্র কুমার রায় তার এক নিবন্ধে শরৎ বাবুর কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন, একদিন শরৎ বাবু তার অফিসে এসেছেন। সে সময় তিনি আফিসে ছিলেন না। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এসে তার সহকারীকে বললেন, হেমন্দ্র বাবু কি আছেন? সহকারী শরৎবাবুর দিকে একবার তাকিয়ে বলল, না, বাবু নেই। শরৎবাবু তারপরও খানিক দাঁড়িয়ে থাকলেন। শরৎবাবুর পরনে লম্বা একটা পাঞ্জাবি। কোলে একটা কুকুর ছানা। শরৎবাবু বললেন, আমি একটু বসতে পারি। সহকারী খানিক দূরে একটি টুল দেখিয়ে বলল, ওখানে বসুন। শরৎবাবু সেখানে গিয়ে বসলেন। এর খানিক পরে হেমেন্দ্রবাবু এসে পড়লেন। শরৎবাবুকে দেখে চমকে উঠলেন। বললেন, শরৎবাবু আপনি এখানে বসে আছেন? শরৎ বাবু মৃদু হেসে সহজ উত্তর দিল উনি যে এখানে বসতে বললেন। আসুন আসুন ভিতরে আসুন। শরৎবাবুকে নিয়ে ভিতরে এলেন। সহকারীকে জিজ্ঞেস করলেন কিরে তুমি শরৎবাবুকে চেন না। সহাকারী সহাস্যে বলল, আমিতো বুঝেছি উনি দপ্তরী হবেন। একথা শুনে শরৎ বাবু শব্দ করে হেসে দিলেন। পরে ঐ সহকারীর সঙ্গে শরৎবাবুর সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। একসময় শরৎবাবু তাকে একটা কলম উপহার দিয়েছিলেন। শরৎবাবু যাদেরকে বেশি পছন্দ করতেন, তাদেরকে কলম উপহার দিতেন। হেমন্দ্র বাবুর এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শরৎবাবু অর্থনৈতিকভাবে কখনই সাবলম্বী ছিলেন না। কিন্তু কোন বাধাই তাকে স্তম্ভিত করতে পারেনি। সাহিত্য সৃষ্টির নেশা থেকে। তিনি অন্তর থেকে সাহিত্যকে ভালোবাসতেন। অন্তরের মধ্যে পোষণ করেছিলেন সাহিত্য প্রেমকে। তাই কোন লোভ-লালসা, ঐশ্বর্য্যও; যে সাহিত্য প্রীতি তার হৃদয়ে তা থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের হাতে খড়ি ভাগলপুরে তার অনেক গল্প উপন্যাস এখানেই লিখেছেন। আবার অনেক লেখা প্লট কিংবা চিত্র এখানেই এঁকেছেন। যা পরবর্তীতে যশ-খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে। এসময় তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে অভিমান, শুভদা, চন্দ্রনাথ, কাশিনাথ, দেবদাস, বাসা, বাগান, বোজা, পাষাণ শিশু প্রভৃতি। শিশুই পরবর্তীতে বড় দিদিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সাহিত্য সাধনা ও কর্মসংস্থানের জন্য একসময় সন্ন্যাস বেশ ধারণ করে দেশ ত্যাগ করেন। চলে যান বার্মায়। সেখানেও তার সাহিত্য চর্চা অব্যহত ছিল। বার্মা থেকে তিনি মাতুল সম্পর্কীয় এক সাহিত্যানুরাগী সুরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীর নামে একটি গল্প পাঠিয়েছিলেন গল্পটি কুন্তলীন সাহিত্য পুরস্কার পায় এবং কুন্তুলীন সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর শরৎচন্দ্রের সাহিত্য রচনায় উৎসাহবোধ আরো বেড়ে যায়। তারপর বার্মা অবস্থান করলেও নিয়মিত তিনি লেখা পাঠাতে থাকেন কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায়। একটি বড় গল্প পাঠালেন ‘ভারতীতে’। ভারতী তখনকার সময় সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে সম্রাটের আসনে। পত্রিকাটি চালাতেন স্বর্নকুমারী দেবীর কনিষ্ঠা কন্যা সরলা দেবী। এ পত্রিকায় শরৎচন্দ্রের বড় দিদি গল্পটি তিন কিস্তিতে প্রকাশিত হল। এরপর গল্প রচনায় শরৎচন্দ্রের নৌকার পালে হাওয়া লাগল। এতসব উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যেও শরৎচন্দ্রের ভিতর একটা অস্থিরতা ছিল। সেই অস্থিরতার মধ্যেও তিনি লিখে চললেন পুরনো ভাবায়িত কাহিনী। আবার সুমতি ও বিন্দুর ছেলের মতো কাহিনীও। ভারতীতে বড়দিদি প্রকাশের কয়েক বছর পরে ১৯১৩ সালে বড়দিদি বই আকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশ করেন যমুনা সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পাল। শরৎচন্দ্রের বই প্রকাশে তখনো তেমন কোন আগ্রহ ছিলো না। তিনি ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। সে নিষেধ উপেক্ষা করেই বইটি প্রকাশ করেন। আর এটাই ছিলো শরৎচন্দ্রের প্রথম প্রকাশিত বই। ফণীবাবু কয়েকখানা বই রেঙ্গুনে শরৎচন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বই পেয়ে শরৎ বাবু ১০-১০-১৯১৩ তে ফণী বাবুকে লিখলেন তোমার প্রেরিত বড়দিদি পিইছিলাম, মন্দ হয় নাই। তবে ওটা বাল্যকালের রচনা, ছাপানো না হইলে বোধ করি ভালো হইতো।
বড়দিদি শরৎচন্দ্রের প্রকাশিত প্রথম বই হলেও এ বই থেকে তিনি কোনো সম্মানী পাননি। সম্মানী পেয়েছিলেন তার দিত্বীয় প্রকাশিত বই বিরাজবৌ থেকে। এ বইটি প্রকাশ করেছিলো গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স। মাত্র দ’শ টাকায় বইটি বিক্রি করেছিলেন শরৎবাবু। তার পর চিঠি লিখেছিলেন ‘এই আজ ২০০ পেলাম। ছোট গুলোও পাঠাচ্ছি। লোভে পড়ছি নাকি তাও আবার ভাবছি। শুনি সাহিত্যিকের মুত্যু ইহাতেই ঘটে।’
চিঠিতে যে ছোটগুলোর কথা উল্লেখ করেছিলেন সেই ছোটগুলো হলো শরৎচন্দ্রের রামের সুমতি, বিন্দুরছেলে ও পথ নির্দেশ গল্প তিনটি।
শরৎচন্দ্রের সব লেখাই শক্তিশালী। তিনি তার লেখার মধ্য দিয়ে যা প্রকাশ করতে চেয়েছেন তা স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার শ্রেষ্ঠ রচনা বলা যায় দেবদাস ও শ্রীকান্ত।
দেবদাসের মধ্য দিয়ে তিনি প্রেমকে চির সবুজে রূপায়িত করেছেন। ফুটিয়ে তুলেছেন প্রেমের চিত্র। যে প্রেম জাত ধর্ম আর অর্থের দেয়াল মানে না। প্রেমের শক্তির সামনে এ দেয়াল ঠুনকো। এসব ভেঙে প্রেম নতুন এক জগত সৃষ্টি করতে পারে। তার এই উপন্যাস এত বেশি সমাদৃত হয়েছে যে, সে সময়তো পারু আর দেবদাস গোটা উপমহাদেশ জয় করেছে। আজও দেবদাস সবার কাছেই আকর্ষণীয় কাহিনী। এ কাহিনী নিয়ে বেশ কয়েকবার সিনেমা তৈরি হয়েছে। পাঠক দর্শক সবাইকেই প্রেমে পড়তে হয়েছে শরৎ এর দেবদাসের। দেবদাসও শরৎ এর বাল্য রচনা। শরৎ তখন রেঙ্গুনে। তার এ পান্ডুলিপি ছিলো মাতুল সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। সেখান থেকে ‘ভারতবর্ষ’র অন্যতম কর্ণধার বন্ধু প্রমথনাথ নিয়ে ভারতবর্ষে ছেপেছিলেন। এই উপন্যাস শরৎ কে আরো বেশি যশ-খ্যাতি এনে দেয়। শ্রীকান্ত উপন্যাসটি শরৎ এর জীবন আলখ্যে লেখা। এখানে শরৎ-এর প্রথম থেকে শেষ জীবনের দুঃখ দুর্দশাসহ ভবঘুরে জীবনের নানাদিক ফুটে ওঠে। তবে শরৎ-এর এ রচনাটি ছিলো ভ্রমণ কাহিনী। ভারতবর্ষে ধারাবাহিক ভাবে এটি প্রকাশিত হতে থাকে। ১৩২৮ সালের পৌষ সংখায় ভারতবর্ষে তৃতীয় পর্যায় শ্রীকান্ত ভ্রমণ কাহিনীর নবম পরিচ্ছেদ প্রকাশিত হয়। এর শেষ বাক্যটি ছিলো ‘তিনি আর কিছু বলিতে পারিলেন না, তেমনি অশ্রু মুছিতে মুছিতে নিশব্দে বাহির হইয়া গেলেন।’
এই শেষ লাইনগুলো ভারতবর্ষের অসংখ্য পাঠকদের কি এক ঘোরতর আকর্ষণের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। যার জন্যশুধু পাঠক নয়। ভারতবর্ষের মালিক ও সম্পাদক শ্রীকান্ত শেষ করার জন্য শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করলেন। শরৎচন্দ্র আর শ্রীকান্ত লিখলেন না। যোগ দিলেন মহত্মাগান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে। চরকা, খদ্দর প্রচারে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। এর দীর্ঘদিন পরে শ্রীকান্ত আবার প্রকাশিত হলো। তবে ভারতবর্ষে নয়। বিচিত্রা নামক একটি মাসিক পত্রিকায় শ্রীকান্ত ৪র্থ পর্ব নামে ছাপা শুরু হলো। শ্রীকান্ত ৪র্থ পর্ব একটানা বিচিত্রায় প্রকাশ হতে লাগল। পরে এ দিয়ে বই প্রকাশিত হলো শ্রীকান্ত চতুর্থ খন্ড। এর পঞ্চম খন্ড লেখার ইচ্ছাও পোষণ করেছিলেন। একথা জানিয়ে দিলীপ বাবুকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন শ্রীকান্ত চতুর্থ খন্ড যদি তোমাদের ভালো লাগে তাহলে পঞ্চম খন্ড লিখব। দিলীপ বাবু লিখেছিলেন খুব ভালো লেগেছে। শরৎবাবু এর উত্তরে লিখেছিলেন, তোমার এই বইটি ভালো লেগেছে শুনে খুশি হয়েছি। আর বইটি সত্যিই আমি যত্ন করে মন দিয়ে লিখেছিলাম হৃদয়বান পাঠকদের ভালো লাগার জন্যই। কিন্তু পরে আর পঞ্চম খন্ড লিখেননি।
জীবদ্দশাই শরৎচন্দ্রের পাঠক প্রিয়তা ছিলো ঈর্ষণীয়। তিনি যাই লিখতেন পাঠকের হৃদয়ে ঠাঁই পেত। পাঠক গ্রহণ করত। এত জনপ্রিয়তা সত্বেও শরৎচন্দ্রের কোনো লেখা দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়নি। শরৎবাবুর মৃত্যুর পর দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষ অনেক আফসোস করে ছিলেন। নিজেকে এক প্রকার আপরাধীই ভেবে ছিলেন। সে দায় শোধ দিতে তার মৃত্যুর পরে দেশ পত্রিকায় শরৎবাবুর একটা লেখা ছাপেন।
বাংলা সাহিত্যের এই কীর্তিমান লেখক আজও পাঠকের কাছে সমান সমাদৃত। তার অনেক লেখা বর্তমান সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে না মিললেও পাঠকের হৃদয়স্পর্শ করার কারণ শরৎ তার সব লেখায় সময় এবং সমাজের চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। যে জন্য পাঠক তার লেখায় সে সময় এবং সমাজের চিত্র খুঁজে পান।
শরৎচন্দ্র বাংলা সাহিত্যে এনেছেন নতুন এক ধারা। তার আগে এমন সাবলীল ভাষায় গদ্য খুব কমই লেখা হয়েছিলো তার লেখা সব শ্রেণীর পাঠক পড়তে পারে। সবার জীবন কাব্য ফুটে ওঠে। মায়ামমতায় একাকার করে সবার হৃদয়। এই অমর কথাস্রষ্টা ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট উপধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি অসংখ্য পাঠক ভক্তদের কাঁদিয়ে চলে যান পরপারে। ইহলোক ত্যাগ করলেও তিনি অমর হয়ে আছেন তার অমূল্য সৃষ্টির মাঝে।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩০ ঘণ্টা, ১৬ জানুয়ারি ২০১৩
এমজেএফ/ [email protected]