শাখাওয়াৎ নয়ন এর উপন্যাস ।। অদ্ভুত আঁধার এক

শাখাওয়াৎ নয়ন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০০:২৯, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৩

শেষ পর্ব

স্বপ্নদুস্থ দীর্ঘরাত
ইমাম সাহেব পালিয়ে যাওয়ায় সালেহার সাময়িকভাবে দোররার ভয় কাটলেও স্থায়ীভাবে কাটে না। সে একঘরে হয়েই থাকে। পরস্পরের কাছে শুনতে পায়, নতুন ইমাম নিয়োগ করে অথবা অন্য এলাকা থেকে মাওলানা-মৌলভি এনে তার বিচারের ব্যবস্থা করবেই করবে। দিনের পর দিন এত কষ্ট, এত অভাব, এত মানসিক চাপে সালেহা এক মুহূর্তও ঘুমোতে পারে না। ঘুমোবে কী করে? কিছুদিন হলো রাতদুপুরে সালেহার ঘরের ওপর ঢিল পড়া শুরু হয়েছে। ঘুমের মধ্যে বাচ্চা দুটিকে নিয়ে সে লাফিয়ে ওঠে।

যখনই চোখটা একটু লেগে আসে, সালেহা তখনই অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। মানুষ নাকি যা কিছু চিন্তা করে, তা-ই স্বপ্নে দেখে। সালেহা রাতের পর রাত আলমের কথা ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যেই সে আলমের বাড়ি ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে। সালেহা কোনো দিনই তা চিন্তা করে না। আলমকে যতবারই স্বপ্নে দেখেছে, ততবারই তাকে খুব অচেনা লেগেছে। আলম কেমন করে জানি কথা বলে!

ইমাম সাহেব পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সালেহা অদ্ভুত একটা স্বপ্ন বারবার দেখে। ভয়ংকর চেহারা, জটাধারী দীর্ঘদেহী একটা লোক এসে তাকে বলে-
বালিশে ঘুমাছ ক্যা?
তয় কীহে ঘুমাইমু?
ঘুমাইতে কিছু লাগে নাকি?
হ। বালিশ ছাড়া ঘুমাইতে পারি না।
মইরা গ্যালে কবরে কীহে ঘুমাইবি? দুনিয়াতে কত মানুষ বালিশ ছাড়া ঘুমায় জানোছ?
না। জানি না।
বালিশ ফালা কইতাছি। বালিশ ফালা। নইলে কিন্তু তোরে এহনই মাইরা হালামু। বালিশ চাপা দিয়াই মারমু।

বিশাল লোকটা প্রকাণ্ড একটা বালিশ নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। সালেহা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুতেই শব্দ বের হয় না। তার গোঙানির শব্দে রিপনের ঘুম ভেঙে যায়। রিপন জিজ্ঞেস করে-
কান্দো ক্যা, মা?

সালেহার ঘুম ভেঙে যায়। ভয়ে কাঁপতে থাকে। উঠে বসে। পানি খায়। বুকের মধ্যে ধড়ফড় করতে থাকে। আয়াতুল কুরসি, দোয়া ইউনুস পড়ে বুকে ফুঁ দেয়। ভাবতে থাকে, এসব কী দেখে সে? এই স্বপ্নের অর্থ কী? সালেহা খাবনামা বইতে এই অদ্ভুত স্বপ্নের অর্থ খোঁজে, কিন্তু কিছুই খুঁজে পায় না। সালেহা দিনের পর দিন একই স্বপ্ন দেখতে থাকে। কী করবে সে, তার কিছুই বুঝতে পারে না। দুঃস্বপ্নের ভয়ে সালেহা একরকম অনিদ্রায়ই রাত কাটায়। যখনই একটু চোখ লেগে আসে তখনই দেখে, ভয়ংকর কণ্ঠে সেই জটাধারী লোকটি কথা বলছে। সেই প্রকাণ্ড বালিশটি নিয়ে এগিয়ে আসছে। সালেহা স্বপ্নের অর্থ মেলানোর চেষ্টা করে। সে ভাবতে থাকে, তাহলে কি বশির তালুকদার তাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবেন? ফেলতেও পারেন। দোররা যেহেতু মারতে পারেননি এবং গ্রাম থেকেও উচ্ছেদ করেননি। তাহলে কি এটা তাঁর নতুন ষড়যন্ত্র?

স্বপ্নের মাধ্যমে কি আল্লাহ পাক সালেহাকে আগাম খবর দিচ্ছেন? দিতেও পারেন। আইয়ুব নবীকে তো আল্লাহ পাক স্বপ্নে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র ইউসুফ সম্পর্কে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তিনি আল্লাহ তাআলার ইশারা বুঝতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে ইউসুফকে ঠিকই তাঁর সৎভাইয়েরা কিনানের এক গভীর কূপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। স্বপ্নে বালিশ দেখার বিষয়টা নিয়ে যে সালেহা কারো সাথে একটু আলাপ করবে, সেই মানুষও নেই। সে দু-একজনকে বলেছে। তারা বলে-
জিন-ভূতের আছর পড়েছে।

সালেহা বিশ্বাস করে না। শেষ পর্যন্ত সে ঠিক করল, রাতভর নামাজ পড়বে, তসবিহ গুনবে। তাহলে যদি আল্লাহ পাক এই বিপদ থেকে নাজাত দেন।

তার পরও দুঃস্বপ্ন সালেহার পিছু ছাড়ে না। স্বপ্নদুস্থ দীর্ঘরাত তার নির্ঘুম কাটে। নির্ঘুম থাকতে থাকতে সালেহার মাথাযন্ত্রণার অসুখ হয়। ব্যথার যন্ত্রণায় মাথাটা সারাক্ষণ টনটন করে। চিকিৎসা করানোর উপায় নেই। তাই কখনো দড়ি দিয়ে, কখনো ছেঁড়া কাপড় দিয়ে মাথাটা টাইট করে বেঁধে টানটান হয়ে শুয়ে থাকে। তাতে ব্যথার কিছুটা উপশম হয়। কিন্তু পুরোপুরি কি আর যায়? একদিন দুপুরবেলা বেশরী বেগম এসে সালেহার মাথায় দড়ি বাঁধা দেখে বললেন-
মানুষ দেয় গলায় দড়ি, তুমি মাতায় দিছাও কোন দুঃখে?
মোর কি দুঃখের কোনো অভাব আছে? সোমাজের মাইনষে দড়ি বানছে মোর পায়, মুই বানছি মাতায়।

দিনে দিনে সালেহার মেজাজ-মর্জি খিটখিটে হয়ে যায়। যখন-তখন বাচ্চাদের মারধর করে। বাচ্চা-কাচ্চা তো দূরের কথা, তার নিজের জীবনটাই নিজের কাছে বোঝা মনে হয়। শেষ পর্যন্ত আর না পেরে সালেহা বালিশে ঘুমানো ছেড়ে দেয়। তার পর থেকে সেই দুঃস্বপ্নটি সে আর কোনো দিনই দেখেনি। সালেহা এখনো ঘরের মেঝেতে বালিশ ছাড়াই ঘুমায়। বালিশ ছাড়া মাটিতে ঘুমালে সত্যিই ভিন্ন ধরনের এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়। মৃত্যুর অনুভূতি। মনে হয়, সে মরে গেছে। অন্ধকারে কবরের মধ্যে শুয়ে আছে। এখনই হয়তো মনকির ও নকির ফেরেশতা হিসাব নিতে আসবেন কিংবা কবরের আজাব শুরু হয়ে যাবে।

এত রকম চাপের মধ্যে থাকতে থাকতে রিপনও একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। রিপনের গায়ে থেকে থেকে আগুন-গরম জ্বর আসে। জ্বরে বাচ্চাটা কাঁপতে থাকে। সে নানা রকম উলটা-পালটা কথা বলে চিৎকার করতে থাকে। ছেলের কষ্ট কি কোনো মা সহ্য করতে পারে? সালেহা রিপনের মাথায় পানি ঢালে। ভেজা কাপড় দিয়ে বারবার গা মোছে। দোয়া-কালাম পড়ে শরীরে ফুঁ দেয়। নামাজে বসে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও ছেলের রোগমুক্তি প্রার্থনা করে। সালেহা তার স্বামীর প্রতীক্ষায় পথের ধুলোয় চোখের পানি ফেলতে থাকে। সন্তান দুটি ঘুমিয়ে পড়লে তাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদে। তার নির্ঘুম দুঃখের রজনী দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় একটি কাক্সিক্ষত ভোরের অপেক্ষায়।

পরী রোগ

রিপনের জ্বর দিনে কমে তো রাতে বেড়ে যায়। এত সুন্দর ছেলেটা দেখতে দেখতে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। রিপনের বয়স যখন সবে এক-দেড় মাস, তখন থেকেই কী সুন্দর করে হাসে! কী সুন্দর রঙ পেয়েছে! যে দেখত, সে-ই কোলে নিত। চাঁদের মতো ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাটার এখন পাঁজরের হাড় গোনা যায়। যা দেখে, সে তাতেই শুধু ভয় পায়। ভয়ের চোটে চিৎকার করে বলতে থাকে-
মা, সাদা জামাকাপড় পরা কারা জানি মোরে লইয়া যাইতাছে, লইয়া গ্যাল। মা, ধরো। ওরা মোরে মাইরা হালাইব।
কই? না বাবা। তুমা রে কেউই লইয়া যাইতাছে না। তুমি মোর কোলে। মুই তুমারে ধইরা রাখছি।

সালেহা রিপনকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে। কী রেখে কী করবে সে ভেবে পায় না। কিন্তু রিপন একই কথা চিৎকার করে বলতে বলতে নীল হয়ে যায়। মুখ দিয়ে সাদা ফেনার মতো বের হয়ে আসে। অজ্ঞান হয়ে দাঁতে দাঁত লেগে যায়। দুশ্চিন্তায় সালেহার নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। তার ছেলেটাই যদি না বাঁচে, তাহলে সে বাঁচবে কী নিয়ে? ভবিষ্যতের সব আশাই তার শেষ হয়ে যাবে।

ছেলেটাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। কিন্তু কীভাবে? একে তো টাকাপয়সা নেই। তার ওপর সালেহার বাড়ির বাইরে যাওয়ার হুকুম নেই। সমাজের লোকেরা তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিচ্ছে না। সালেহা শুনেছে, শান্তি কুণ্ডু নামক একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আছেন। তিনি গরিবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেন। তাঁর চিকিৎসার সুনাম আছে। সালেহা রিপনকে কায়েসের সাথে শান্তি কুণ্ডুর কাছে পাঠিয়ে দেয়। ডাক্তার সবকিছু শুনে বললেন-
রিপন কোনো কারণে ভীষণ ভয় পেয়েছে।
কায়েস জিজ্ঞেস করে-
কী করতে অইব এহন?
ওর ভয় দূর করতে হবে।

শান্তি কুণ্ডুর কথা কায়েস তো দূরের কথা গ্রামের কেউই বিশ্বাস করে না। কিন্তু সালেহার ঠিকই বিশ্বাস হয়। বিশ্বাস না হওয়ার কী আছে? তারা তিনজন মানুষই তো ভয়ের মধ্যে আছে। এত ভয়ের মধ্যে জীবন কাটালে কোনো মানুষ কি সুস্থ থাকতে পারে? কিন্তু গ্রামের লোকজন বলে অন্য কথা-
বাণ মারছে। হাত-পায়ের নখ, চুল নিয়া বাণ মারছে।
আবার কেউ কেউ বলে-
পরীতে ধরছে। ঝাড়ফুঁক করতে অইব। শান্তি কুণ্ডুর ওই শামুকের আণ্ডা খাওয়াইলে কাম অইব না।
শামুকের আণ্ডা কী?
আহা! বুঝলা না? ওই যে সাগুর দানার মতো ওষুধ।

কায়েসের মাধ্যমে রিপনের চিকিৎসার জন্য সালেহা গ্রামের মাতবরদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়। সালেহার অনুরোধে কায়েস ঝাড়ফুঁকের জন্য মন্তাজ ফকিরকেও খবর দিয়ে আনে। মন্তাজ ফকিরের পরনে টকটকে লাল রঙের ফতুয়া আর লুঙ্গি। মাথায় জটাধারী চুল, লাল গামছা বাঁধা। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। বাম হাতে একটা তামার চুড়ি। ডান হাতে একটি বিশেষ ধরনের লাঠি। লাঠির হাতলটি উদ্ধত সাপের ফণার মতো। দেখলেই মনে হয় যেন তাঁর হাতে একটা ফণা তোলা সাপ। কী ভয়ংকর ব্যাপার! তিনি খবর পেয়ে রিপনকে দেখতে এসেছেন। মন্তাজ ফকির সবকিছু শুনে রিপনকে দেখে ফিসফিস করে বলেন-
খন্নাছটা তাইলে এহন তুমাগো বাইত্তে? মুই তো অরেই খুঁজতাছি। মুই অরে তেইত্তাসন থেইক্যা ধাওয়াইতাছি। অরে এইবার আর ছাড়োন যাইব না। এইবার অরে মুই খাইছি।

মন্তাজ ফকির তাঁর বাবরি চুলগুলো কখনো দুলিয়ে কখনো ঝাঁকিয়ে কথা বলছেন। তাঁর আধো লাল আধো কালো পান খাওয়া দাঁতগুলো মাঝেমধ্যে বের করে ভয়ংকরভাবে কথা বলছিলেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সালেহার মনে হয়েছে, জিন-পরীর চেয়ে মন্তাজ ফকিরের চেহারা, মুখভঙ্গি কোনো অংশেই কম ভয়ংকর নয়। লোকটির চোখের দিকে তাকানো যায় না। টকটকে লাল। সম্ভবত সারা রাত তন্ত্রমন্ত্র সাধনা করেন। গ্রামের লোকেরা তাঁকে খুবই বিশ্বাস করে। কোহকাফ নগর থেকে তিনি জিন নিয়ে আসেন। এলাকায় তাঁর নাম-ডাক আছে। তিনি অমাবস্যার রাতে অন্ধকার ঘরে জিন এনে রোগীদের তিনি বিভিন্ন রোগের দাওয়াই দেন। যারা জিনের ব্যাপারটি পুরোপুরি বিশ্বাস করে না, তারা অনেকেই জিনের লোমশ হাতের থাপ্পড় খেয়েছে। আর যারা বিশ্বাস করেছে, তারা নিরঞ্জনের দোকানের চমচম, কাশ্মীরি বেদানাও খেয়েছে। জিন নিজে ভারি কণ্ঠে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেছে-
কাশ্মীরের ওপর দিয়ে আসছিলাম, তাই মনে হলো তোদের জন্য কিছু নিয়ে যাই।
হঠাৎ মন্তাজ ফকিরের কথায় সালেহা সংবিৎ ফিরে পায়।
মন্তাজ ফকির বলেন-
বাইত্তে জিন-পরীর আছর অইছে। কুফুরি কালাম পইড়া বাড়ি বন্ধক দিতে অইব। রিপনকে এট্টা তাবিজও দিতে অইব।
সালেহা জিজ্ঞেস করে-
বাড়ি বন্ধক দিতে কী কী লাগব?
হেইডা তো এহন কওন যাইব না। তুলা রাশির একজনকে তোমাগো বাড়িতে ভারে বহাইতে অইব। ভারে বইয়া হে-ই কইব কী কী লাগব। তয় একখান লাল গামছা, লাল লুঙ্গি, দশ হাত কইতম, দুই প্যাকেট আগরবাতি, এক দলা ধূপ, এক পোয়া কেরোসিন, একটু জাফরান, এক গজ লাল কাপড়, বারোডা মঙ্গলবাতি, আর দেহি ভারে বইয়া কী কী কয়?
এই সব কোতায় পাওয়া যায়?
তুমি এসব চিন্তা কইরো না। টাহা দিলে মুই-ই কিন্না আনমু সব।
তাবিজের জন্য কয় টাকা লাগব?
সোনার তাবিজ হলে সবচেয়ে ভালো অইত। কিন্তু তাতে দামডা অনেক পইড়া যাইব। দেহি রুপার তাবিজ দিয়া কিছু করণ যায় কি না?’
সব মিল্লা কত টাকা লাগব?
মন্তাজ ফকির ঠোঁটটা ফুলিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন-
লাগে তো দেড় থেকে দুইশো টাকার উপরে। কিন্তু তুমাগো যা অবস্থা! কিন্তু একশো সোয়াশোর নির্মে কিছুই করণ যাইব না।

এত টাকার কথা শুনে সালেহার মাথায় হাত, আত্মা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। এত টাকা সে কোথায় পাবে? টাকা নেই। রিপনকে কোনো দাওয়াই না দিয়েই মন্তাজ ফকির চলে যান। কিন্তু মায়ের কাছে ছেলের জীবন বলে কথা। চেষ্টা থেমে নেই। তালগাছ দুটি বিক্রির চেষ্টা করে সালেহা। পারে না। দুই-তিন দিন পর গহীনাকূল গ্রামের পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী নাছিমা বাড়িতে আসে। সালেহা ট্রাংকের ভেতর থেকে রুপার পয়সাটি বের করে নাছিমার হাতে দিয়ে বলে-
এইডা রাইক্যা মোরে কিছু টাহা দিবি?

নাছিমা গহীনাকূল গ্রামে পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করে। গহীনাকূলের মানুষ সম্পর্কে সে কম-বেশি জানে। পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য এই গ্রামের লোকেরাই ফতোয়া দিয়েছিল। প্রায় দুই-তিন মাস তাকে কোনো কাজই করতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সরকারি লোক বলে গ্রামের লোকেরা তার সাথে পেরে ওঠেনি। সালেহার কাছ থেকে সবকিছু শুনে নাছিমা রুপার পয়সাটি ফেরত দিয়ে জিজ্ঞেস করে-
আপনের কত টাহা লাগব?
সোয়াশো।
নাছিমা রুপার পয়সাটি বন্ধক না নিয়েই পরদিন এসে টাকা দিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে-
খালা, রিপন রে ডাক্তার দ্যাহান। ঝাড়ফুঁকে কাজ অইব না।
দেহি কী অয়? ব্যাকটি তো কয় ভালো অইব।

মন্তাজ ফকিরকে আবার খবর দিলে এক অমাবস্যা রাতের সন্ধ্যায় একজন সহযোগী নিয়ে তিনি সালেহার বাড়ি আসেন। বাড়ির চারদিকে মন্ত্রপড়া সরিষা ছিটিয়ে, লোহা-তামা পুঁতে, ধূপ-আগরবাতি জ্বালিয়ে বাড়ি বন্ধক দিয়ে দেন। মন্তাজ ফকির চলে যাওয়ার আগে রিপনের কোমরে মন্ত্রপড়া একটা রুপার তাবিজ বেঁধে ফুঁ দিয়ে দেন। এত কিছুর পরও সালেহার ছেলেটা সুস্থ হয় না। তার ঘরের ওপর রাতের বেলা ঢিল পড়তেই থাকে। কে জানে, এরপর আরো কী কী পড়বে? একসময় সালেহার বুঝতে আর বাকি থাকে না যে, ঘরের চালে ঢিল মারা জিন-পরীর কাজ নয়। কিন্তু এত দুঃসহ মানসিক চাপ সে আর কত দিন সইতে পারবে?

এভাবে চলতে থাকলে সালেহার মেয়েটাও হয়তো একদিন অসুস্থ হয়ে পড়বে। তারপর কী হবে? তারা কি তিনজনই অসুখে পড়বে? নাকি সালেহা পাগল হয়ে যাবে? রিপন একদিন জিজ্ঞেস করে-
মা, মোগো, এত কষ্ট ক্যা?
মোরা দুঃখে আছি তো হেইয়ার লেইগ্যা মোগো এত কষ্ট।
দুক্ষু কী, মা?
সালেহা কী উত্তর দেবে ভেবে পায় না। কিছুক্ষণ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বুক ভরে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বলে-
বড় অইলে বুঝবি, বাবা।
বড় অইলে বুঝমু ক্যা, মা? ছোডগো দুক্ষু নাই?

রিপনের এখন প্রশ্ন করার বয়স। হাজারটা প্রশ্ন করাই তার কাজ। সালেহা তার বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দেয় না বা দিতে পারে না। কিন্তু এতটুকু একটি বাচ্চার দুঃখ বিষয়ে কৌতূহল দেখে সে বিস্মিত হয়। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও উত্তর দেয়-
হগলেরই দুক্ষু আছে। তয় এত তাড়াতাড়ি বোঝনের দরকার নাই।
মোগো দুক্ষু যাইব কবে, মা?
তোর বাপে আইলেই যাইব।

বাবার কথা শুনে রিপন চুপ করে থাকে। আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। হয়তো সে-ও বোঝে তার বাবা কবে আসবে তা কেউ জানে না। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরেও বেঁচে থাকতে চায়। অসম্ভবের মাঝেও সম্ভাবনা খোঁজে। সালেহা কায়মনে প্রায়ই ভাবে, হঠাৎ করে যদি একদিন আলম চলে আসত, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। সালেহার মতো একজন নারীর জীবনে স্বামীই সব। তার আর কে আছে? সমাজের কতজনের জন্য সে কত কিছু করেছে! অথচ বিপদের সময় তার পাশে কেউ নেই। একমাত্র আইজ্জা পাগলা ছাড়া তার প্রতি এত বড় অন্যায়ের প্রতিবাদ আর কেউই করেনি। সালেহা মাঝেমধ্যে নিজের করতলের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের ভাগ্যটাকে তার দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ভাগ্য কি দেখা যায়? এত কষ্ট, এত দুঃখ, এত চাপ সহ্য করবে কীভাবে? সালেহা মাঝেমধ্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে, তার হাত দুটি এত ছোট কেন? এত দুর্বল কেন? তার যদি অনেক লম্বা শক্তিশালী দুটি হাত থাকত, তাহলে একদিন আকাশ ধরে ওপরে উঠে যেত।


দীর্ঘশ্বাস নিয়তিসমান

একের পর এক স্মৃতি সালেহার মনটাকে ভারি করে তোলে। ঝড় এখনো পুরোপুরি থামেনি। থেকে থেকে একটু একটু বৃষ্টি, মাঝেমধ্যে দমকা বাতাস আসছে। তবে রেডিওতে সকালের খবরে বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হেনেছে। ঝড়ের রাত শেষে দ্বিধাদুর্বল আলো ফুটেছে। সালেহা স্কুলঘরের দরজা-জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। নিজের মনে প্রশ্ন করে-
ঝড়ের পরেও কি ঝড় হয়?

হয়তো হয়। গহীনাকূল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সবাই নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছে। সবার আগে আইজ্জা পাগলা পা বাড়ায়। ভাবখানা এ রকম যে কোথায় যেন যাবে। সে মাঝেমধ্যেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আবার ফিরেও আসে হঠাৎ করেই।

সালেহা বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবে। কিন্তু বাড়ি ফিরে গেলে কি তাকে আবারো বন্দিদশায় পড়তে হবে? নিশ্চয়ই পড়তে হবে। বিপদে সবাই এক জায়গায় এসেছিল। একই টিনের চালের নিচে অবস্থান করেছিল। সবার বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু সালেহার বিপদ তো কাটেনি। যদি তা-ই হয়, তাহলে ঝড় থামল কেন? এমন ঝড় তো ভালোই, যে ঝড়ে সমাজের সবাই একত্রে মিলেমিশে থাকে। কেউই তখন একঘরে হয়ে থাকে না।

ঝড়ে খেতের ফসল সব মাটিতে মিশিয়ে সমান করে দিয়েছে। রাস্তায় গাছ পড়ে আছে। সালেহা ছেলেমেয়ে দুটিকে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখে, তার ঘরটি কাত হয়ে পড়েছে। সারা বাড়ি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। যেখানে-সেখানে কাঁটা, ডালপালা পড়ে আছে। বাড়িতে ঢোকার পথের কাঁটাগুলো সরানো দরকার। কিন্তু এত জঞ্জাল পরিষ্কার করতে তার অনেক সময় লাগবে। লোকজন ডেকে ঘরটাকে ঠিক করা দরকার। কিন্তু আজই তা করা যাবে না। ঝড়ে অনেকেরই ঘরবাড়ি ভেঙেছে। নিজেদেরটা ঠিক না করে সালেহাকে সাহায্য করবে কে? তাই কোনোমতে ঘরের দরজা খুলে ট্রাংকটি রাখল। উত্তর পাশের বেড়ার অনেকখানি ভেঙে গেছে। সালেহা মুরগিগুলোকে খোয়াড় থেকে ছাড়ল। মোরগটি বের হয়েই উচ্চ শব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করল।

ঘরদোর ঝাড়– দেয়া দরকার। রিপন-হেনাকে কিছু খেতে দিতে হবে। রাতে ঠিকমতো খেতে পারেনি। ওদের ক্ষুধা লেগেছে। কোনোমতে ঘরটা একটু ঝাড়– দিয়ে রিপন-হেনাকে বসতে বলল। কাঁথা-বালিশগুলো মাটিতে পড়ে আছে। সেগুলো তুলতে গিয়ে সালেহার হাতে কী জানি ঠেকল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা একটা অনুভূতি হলো। হয়তো বৃষ্টির পানিতে কাঁথা-বালিশ ভিজে গেছে। সে গা করে না। কিন্তু হাতের মধ্যে হঠাৎ ঠাণ্ডা কী যেন একটা নড়েচড়ে উঠল। বাবা রে...মারে...বলে এক চিৎকারে কাঁথা-বালিশ ফেলে দেয় সালেহা। তারপর বাচ্চা দুটিকে নিয়ে এক লাফে ঘরের বাইরে চলে আসে।

দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে, ঘরের মেঝেতে একটা ফণা তোলা সাপ। ফোঁস ফোঁস করছে। কাঁথা-বালিশের মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে ছিল। সালেহা ভালো করে তাকিয়ে দেখে, মাথায় পদ্মফুলের ছাপ। পদ্ম গোখরা সাপ। ভয়ংকর বিষধর। কমছে কম সাড়ে তিন হাত লম্বা তো হবেই। সালেহা কী করবে? কাকে ডাকবে? কে আসবে? সাপটির গতিবিধির ওপর চোখ রাখা দরকার। কোথায় যায়? কী করে? তা ছাড়া এই ঘরে বাচ্চাদের নিয়ে থাকবে কীভাবে? তারা মেঝেতে ঘুমায়। রিপন মাঝেমধ্যেই রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে বলত-
মা, পিডের নিচে এমুন গরম গরম লাগে ক্যা?
গরম লাগব কোত্থেকে? তোর লেইগ্যা কি কেউ মাডির নিচে আগুন জ্বালাইছে?

সালেহার মাথায় নতুন চিন্তা আসে। তার মনে হয়, তাহলে কি অনেক দিন থেকেই ঘরের পিড়ায় ইঁদুরের গর্তে সাপ থাকা শুরু করেছে? করতেও পারে। সেই গর্ত কি ঘরের মেঝে পর্যন্ত বিস্তৃত? হতেও পারে। ইঁদুরের গর্ত মাটির নিচে কোন দিক থেকে কোন দিকে গেছে কীভাবে বলবে? সাপ নাকি মানুষের ওম খুব পছন্দ করে। কিন্তু সাপের শরীর তো হিমশীতল হয়। সেই অনুযায়ী ঠাণ্ডা লাগার কথা। তাহলে রিপনের গরম লাগত কেন? পরক্ষণেই মনে পড়ে। সাপের নিঃশ্বাস গরম হয়, সেই কারণে গরম লাগতে পারে। তাহলে কি তারা সাপের সাথেই বসবাস করছে? ভাবতেই তার শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। কিন্তু বাচ্চাদের এ বিষয়ে কিছুই বলে না।

সাপটি আস্তে আস্তে খুঁটির গোড়ায় ইঁদুরের গর্তের দিকে যাচ্ছে। হ্যাঁ, যা ভেবেছে তা-ই। ইঁদুরের গর্তেই ঢুকছে। সালেহা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে ঝুঁকি নিয়েই মসলা বাটা পাটা দিয়ে গর্তের মুখটি বন্ধ করে দেয়। সালেহা ভাবে, যাক শত্র“ এবার বন্দি হয়েছে। এখন বিপদ তার। সময়মতো সাপুড়ে ডেকে সাপটাকে ধরাতে হবে। আবার ভাবে, সাপটাকে না ধরালেই ভালো হয়। সাপটা ভীষণ ভয় দেখিয়েছে সত্য, কিন্তু কোনো ক্ষতি তো করেনি। মানুষের চেয়ে অনেক ভালো। যদি কেউ সিঁধ কাটতে আসে অথবা রাতের বেলা ঘরের পেছনে ঢিল ছুড়তে আসে, তাহলে জলকাদেরের মতো একদিন সাপের কামড় খেয়ে মরবে। গহীনাকূলের কুখ্যাত চোর জলকাদের তো সিঁধ কাটতে গিয়ে সাপের কামড়েই মরেছে। কিন্তু গর্তের অন্য প্রান্তটা কোথায় কে জানে। অন্য প্রান্ত যদি খোলা থাকে, তাহলে তো বিপদ আছে।

পঙ্গু শালিকটি খোঁড়াতে খোঁড়াতে সালেহার সামনে এসে উদাস ভঙ্গিতে তাকায়। সালেহার মনে কামড় দিয়ে ওঠে। শালিকটি একা কেন? আরেকটি কোথায়? ঝড়ে মরে যায়নি তো? এক শালিক দেখে তার মাথায় নতুন চিন্তা ঢোকে, আবার কোন বিপদ আসে কে জানে? ওই সাপটির কোনো জোড়া সাপ নেই তো?

সালেহা অজানা বিপদের কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তা থেকে বাড়িতে ঢোকার পথের কাঁটাগুলো সরাতে যায়। হেনা হঠাৎ উচ্চ শব্দে বলে-
মা! মা! দ্যাহো, কেডা জানি বউ লইয়া মোগো বাড়ি আইতাছে।
সালেহা চোখ তুলে তাকায়। রিপন বলে-
আব্বায় আইছে।

হেনা রিপনের পিছে পিছে দৌড়ায়। আনন্দ আর ধরে না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আলম হেনাকে কোলে তুলে হাতে বিস্কুট দেয়। রিপন হঠাৎ করে কিছু একটা বুঝে মায়ের কাছে সরে আসে। আলম রিপনকে কাছে ডাকে। বিস্কুট দিতে চায়। কিন্তু রিপন নেয় না। সালেহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আলম এত দিন পর বউ নিয়ে বাড়িতে এসেছে। বউয়ের পরনে নতুন শাড়ি। সালেহা নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারে না। তাহলে এত দিন মানুষ যা বলেছে, সত্যিই বলেছে। কিন্তু এ রকম সত্যের মুখ তো সালেহা কখনো দেখতে চায়নি। কোনো মেয়েই তা কামনা করে না। আলম বাড়িতে এসেই বলে-
বাপ রে বাপ! কী যে বিপদে পড়ছিলাম! রাইতের তুহানে লঞ্চ ডুইব্বা যাইতে লাগছিল। সারেং ব্যাটা চরে উডাই দিয়া বাঁচাইছে।
সালেহা মনে মনে বলে-
লঞ্চটা ডুবল না ক্যা? ডুবলেই তো ভালো অইত।
যদিও তিন-চার মাস আগে সালেহার বাড়িতে এক গণক এসেছিলেন। গণক লোকটি সালেহার মুখ দেখেই বলেছিলেন-
তোর তো বিরাট বিপদ আইতাছে। তোর স্বামীরও বিপদ। বিরাট বিপদ।
কার বিপদ বড়?
দুজনেরই বড় বিপদ।
কী করণ লাগব? হে তো নিখোঁজ।
কী যে কও। এমুন এট্টা তাবিজ দিমু! এক মাসের মইধ্যে বাড়িতে আইব। না আইয়া কূল পাইব?

কথাটি বলেই গণক লোকটি দাঁত বের করে একটা ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিলেন। সালেহা সেই হাসি দেখে একটু লজ্জা পেয়ে যায়। তারপর গণক লোকটিই আবার বললেন-
তয় আসার পথে এট্টা বিরাট ফাড়া আছে। ফাড়া কাডানোর জন্য ব্যবস্থা নেওন লাগব।

হাতে কোনো টাকা নেই। কিন্তু ঘরে দুই সের আটা ছিল। এক সের আটার বিনিময়ে সালেহা স্বামীর বিপদ মুক্তি এবং তাড়াতাড়ি বাড়ি আসার দাওয়াই দেয়া একটা তাবিজ নিয়েছিল। সালেহা এত দিন ভাবত, আলম বাড়ি এলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তার সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে। আলম বাড়ি এসেছে ঠিকই, কিন্তু সাথে করে সালেহার জন্য একজন সতীন নিয়ে এসেছে। যার আসার কথা সুখের সওদাগর হয়ে, সে এসেছে দুঃখওয়ালা হয়ে।

আচ্ছা! সতীনবিরোধী কোনো তাবিজ কি আছে? গণক লোকটি তো সতীনের ব্যাপারে কিছু বলেননি। সালেহা তাহলে সতীন ঠেকানোর জন্যও একটা তাবিজ নিত। আলম বাড়িতে এসেই বউ নিয়ে ঘরে ঢোকে। সালেহা বাজপড়া মানুষের মতো উঠোনের কোণে পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘরের ভেতর থেকে আলমের ছোট বউ কুলসুমের চাপা কান্নার শব্দ শুনতে পায়। আলম কুলসুমকে নিচু গলায় শুধু একটা কথাই বারবার বলছে-
ওরে তো এহনই খেদাইয়া দিমু। তুমি কান্দো ক্যা, কুলসুম? কাইন্দো না তো!
কিন্তু কুলসুম কোনো কথাই শুনতে চায় না। একটু পর পর শুধু বলে-
মিথ্যুক। বিশ্বাসঘাতক। প্রতারক। বাড়িতে নাকি তার কেউই নাই। এরা কারা?

তারপর আবার কান্না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না। আলম একবার বাইরে যায় তো একবার ঘরে আসে। কী করা যায় ভাবতে থাকে। একটু পরে সালেহাকে ডেকে বলে-
খানাপিনার ব্যবস্থা করো।

সালেহা খানাপিনার ব্যবস্থা কী করবে? তার ঘরে কি কিছু আছে? এক-আধ সের আটা ছাড়া আর কিছুই নেই। তা ছাড়া কার জন্য খানাপিনার ব্যবস্থা করবে? সতীনের জন্য? কেউ কি তা করে? সালেহার কোনো ভাবান্তর হয় না। তার চোখে-মুখে একে একে গভীরতম বেদনার রেখা ফুটে উঠতে থাকে। আলম আরো কর্কশভাবে উচ্চ শব্দে সালেহাকে বলে-
খাড়াইয়া রইছস ক্যা? দ্যাহছ না, মেহমান লইয়া আইছি?

সতীন কি কখনো মেহমান হয়? না, হয় না। সালেহা তাই এক চুলও নড়ে না। রিপন ও হেনা তার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে তারা কী করবে কিছুই বুঝতে পারে না। রিপন যা-ও একটু মায়ের কষ্ট বোঝে, হেনা কিছুই বোঝে না। হঠাৎ কী যেন দেখে মোরগ ও মুরগিগুলো থেকে থেকে কক কক করছে। আলম আরো খেপে গিয়ে বলে-
মোরগটা ধর কইতাছি, জবাই কর এহনি।

মোরগ ও মুরগিগুলো সালেহা এত দিন যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে। নিজের ছেলেমেয়েকেও খাওয়ায়নি। সেই মোরগ এখন সতীনের পেটে যাবে? সালেহা আরো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আলম হায়েনার মতো এক লাফে মোরগটি ধরে। বাচ্চাসহ মুরগি দুটি কক কক করতে করতে ছুটে পালায়। মোরগটিকে উঠোনের মাঝখানে এনে মাথাটা পায়ের নিচে ফেলে কসাইয়ের মতো এক পোঁচে কল্লা ফেলে দেয়। গলা কাটা মোরগটা ছটফট করতে থাকে। দৃশ্যটি দেখে সালেহা হতভম্ব হয়ে যায়। পাথরের মতো স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে। একপর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করে। আলম সালেহাকে মারধর শুরু করে। চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পেয়ে আশপাশের বাড়ির লোকজন বের হয়ে আসে। বিবিসি, তাঁর বউ ও বেশরী ছুটে আসে। তারা আলম ও তার ছোট বউকে দেখে একে অপরের দিকে তাকায়। ইশারা-ইঙ্গিতে পরস্পরের সাথে কথা বলাবলি করতে থাকে-
পুরুষপোলারা দুই-চাইড্ডা বিয়া করতেই পারে। হ্যাতে কী অইছে?

তাদের কথা সালেহার কানে আসে। মুখ তুলে তাদের দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে, যার স্বামী দুই-চারডা বিয়া করছে হে-ই জানে, হ্যাতে কী অয়?

বশির তালুকদার সালেহার বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে কান পাতেন। এমন একটি অবস্থার কথা তিনি কখনো চিন্তাই করেননি। তাঁর মনটাই ভালো হয়ে যায়। মনে মনে বলেন-
কামের কাম তো আলমই কইরা হালাইছে। ভালো কইরা কিছু হোনার আগেই বাকিডু করতে অইব।
তিনি রাস্তা থেকেই আলমকে ডাকলেন-
আলম, বাইত্তে আইছস নি...এ আলম!
হ। কেডা, মাইজ্জা ভাই?
হ। এদিকে আয় দিহি। কতার কাম আছে।

ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে আলম রাস্তায় যায়। বশির তালুকদার আলমের সাথে নিচু গলায় কিছু কথা বললেন। সবকিছু শুনে রাগে আলমের চোখ-কান লাল হয়ে যায়। কাঁপতে থাকে। প্রায় সাথে সাথেই বলে-
বাড়ির তন বাইর কইরা দিলেন না ক্যা?
তোর বউ, তুই বাইর করতে পারোছ। মোরা ক্যামনে করি?

ঘরে কুলসুম কান্নাকাটি করছে। সালেহাকে বিদায় করাটাই সমস্যার সমাধান। কিন্তু সালেহাকে তাড়িয়ে দেয়ার সুযোগটি আলমের হাতে এত সহজে আসবে, ভাবতেই পারেনি। সে মোক্ষম সুযোগটি পেয়ে যায়। কোনোমতে সাঁকো পার হয়ে এক দৌড়ে বাড়িতে আসে। মুহূর্তের মধ্যে কাফেলাগাছের একটা ডাল ভেঙে সালেহাকে গরু পেটানোর মতো পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে যখন ক্লান্ত বোধ করে, তখন চুলের মুঠি ধরে টেনে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর রিপনকে কড়া ধমক দিয়ে বলে-
এ্যাই ছ্যামড়া! অর ধারে যাবি না। বোলাইলেও যাবি না। কতা হুনবি কইলাম। নইলে কিন্তু একটা আছাড় দিয়া ফুডাইয়া হালামু।
কথাগুলো বলা শেষ করেই আলম রাগী চোখে হেনার দিকে তাকায়। হেনা ভয়ে কেঁদে দেয়। তার পরও হেনাকে বলে-
কী, বুজছোস সব? তোরে কিছু কওন লাগব?

হেনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। কুলসুম ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখে, কিন্তু কিছুই বলে না। একটু পর কুলসুম টয়লেটে যাওয়ার জন্য রিপনকে পুকুর থেকে বদনা ভরে পানি এনে দিতে বলে। রিপন দেয় না। তাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে-
দুই দিনের এইডু পোলা! তার আবার ত্যাজ কত!

কুলসুম এবার হেনাকে বদনা ভরে পানি আনতে বলে। হেনা ভয়ে ভয়ে পানি আনতে গিয়ে পুকুরঘাটে পা পিছলে আছাড় খায়। তার পরও পানি এনে দেয়। সালেহা রাস্তায় ছাতিমগাছটির নিচে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে। তার শরীরের অনেক জায়গা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। ডান চোখের মধ্যে রক্ত জমাট বেধেছে। চোখটি ফুলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিল-ঘুষিতে সারাটা মুখ ফুলে-ফেঁপে এবড়োখেবড়ো। ঠোঁট, দাঁত দিয়েও রক্ত বেরোচ্ছে। চোখের নিচে, কপালে ও মাথায় কয়েক জায়গায় ফুলে গেছে। মাথার ফোলা, কাটা জায়গায় হাত দিলে রক্তের সাথে আঙুলে দলা দলা ছেঁড়া চুল আসে। সালেহা কখনো বাড়ির দিকে, কখনো ঘরের দিকে, কখনো ছেলেমেয়ে দুটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

দুপুরবেলা বশির তালুকদার তাঁর মেয়েকে দিয়ে আলমদের জন্য ভাত-তরকারি পাঠান। আলম কুলসুম ও হেনাকে নিয়ে পেট ভরে খায়। রিপনকেও ডেকেছে, কিন্তু সে কিছুই খায়নি। আলম কুলসুমকে বলে-
দ্যাখছ? পোলাডা মার মতোন কী বদ অইছে! এহনই কতা হুনে না।

আস্তে আস্তে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। সালেহা শরীরের ব্যথায় কাতরানোর শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দুঃখক্লান্ত, ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে গাছের নিচেই তার পুরো দিনটা কেটে যায়। রাস্তা দিয়ে কত মানুষ যাওয়া-আসা করে! সালেহা তাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তার সাথে একটি কথাও কেউ বলে না। সে তাতে একটুও অবাক হয় না। নিজের স্বামীই যখন এত অচেনা হয়ে গেছে, তখন সমাজের মানুষের কথা ভেবে আর কী হবে? সালেহা ভেবে পায় না, আলম তো এত খারাপ ছিল না। বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে তাকে না হয় আদর-সোহাগ করত না, কিন্তু মারধরও তো করেনি। মানুষ কি এতটাই বদলায়? হয়তো বদলায়। আলম, বশির তালুকদার, ইমাম এবং গহীনাকূল গ্রামের সমাজটার কথা ভেবে ভেবে সালেহা তার শরীরের সব ব্যথা ভুলে গিয়ে মনের ব্যথাটাই বড় বেশি করে টের পায়।

সারা দিন পর সন্ধ্যা হয়ে এলে সালেহা এই গ্রাম ছেড়ে কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকে। কিন্তু রিপন ও হেনাকে ছাড়া সে কোথাও যাবে না। অসহায় বাচ্চা দুটি উঠোনের কোণে দাঁড়িয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সালেহা তাদের নিতে আসে। ঘরের মধ্যে আলম ও কুলসুম চাপা গলায় কী যেন বলাবলি করে হাসাহাসি করছে। তাদের হাসির শব্দে সালেহার দুঃখপোড়া চোখ দুটি অশ্র“র অতলে ডুবে যেতে থাকে। চোখের পানি মুছতে মুছতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য সে পা বাড়ায়। পেছন ফিরে চোখের জলের ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকায়। ফিরে ফিরে মনে পড়ে তার অতল বেদনার দিনগুলোর কথা।

সালেহা কোথায় যাবে? সে কি শহরে গিয়ে বস্তিতে উঠবে? না, সেখানে যাবে না। ফয়েজুদ্দিনের বড় মেয়ে রানু বলেছে-
স্বামী ছাড়া মাইয়া মাইনষেরে গ্রামে আর কী টানাটানি করে, বস্তিতে স্বামী ছাড়া থাহনই যায় না। পঙ্গু-লুলা হইলেও স্বামী থাহন লাগে। নইলে নানা রহম বদমাইশে নানা রহম নির্যাতন করে।

সারাটা জীবন তো সালেহা বৈরী স্রোতের উজানেই হেঁটেছে। আর না। বাকি জীবনটা না হয় ফুলেশ্বরী নদীর কূল ধরে ভাটির দিকেই হাঁটবে। হাঁটতে হাঁটতে সাগরে গিয়ে পৌঁছবে। নয়তো ফুলেশ্বরী নদীর দুঃখের মোহনায় ঝাঁপ দেবে। তারপর লাশ হয়ে ভাসতে ভাসতে সাগরে চলে যাবে।

সালেহার খুব জানতে ইচ্ছে করে, সাগরের বুকে কতখানি জল? তার দুঃখের চেয়েও কি বেশি? তার সব দুঃখ সাগরের বুকে ঢেলে দেবে। সেই দুঃখ অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ার-ভাটায় সাগরের জলের সাথে ফুলে-ফেঁপে উঠবে। সাগরের ঢেউ হয়ে পৃথিবীর কূলে-অকূলে আছড়ে পড়বে। যদি কখনো গহীনাকূল গ্রামটিকে দেখতে ইচ্ছে করে, তাহলে কোনো এক পূর্ণিমা রাতে ফুলেশ্বরী নদীর জোয়ারের জলের সাথে একবার এসে দেখে যাবে।
বাচ্চা দুটির হাত ধরে সালেহা উঠোনের সীমানা পার হতে না হতেই হেনা বলে ওঠে-
মা, ঘরে তো হাপ, আব্বা রে কইয়া আহি? যুদি কামুড় দেয়?

সালেহা তার কোমলমতী শিশুকন্যার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। হেনা দৌড়ে গিয়ে ঘরের বাইরে থেকেই তার বাবাকে ডেকে সাপের কথাটি বলে। আলম হেনার কথায় কোনো কান দেয় না। হেনা নীরবে তার মায়ের কাছে ফিরে আসে। চলে যাওয়ার জন্য আবার তারা পা বাড়ায়। আলম ঘর থেকে বের হয়ে উচ্চ শব্দে সালেহাকে বিশ্রি ভাষায় ডেকে বলে-
এ্যাই মাগী, খাড়া! পোলা-মাইয়া লইয়া কই যাস? পোলা-মাইয়া কি তোর? মোর পোলা-মাইয়া থুইয়া তোর যেতায় যাইতে ইচ্ছা করে তুই যা। চোহের সামনের তোন তাড়াতাড়ি যা। নইলে কিন্তু তোর খবর আছে, কইলাম...।

কথাগুলো বলেই রিপন ও হেনাকে সালেহার হাত থেকে কেড়ে নেয়। সালেহাকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। সালেহা কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে-
মোরে মারেন ক্যা? মুই কী হারছি?
তুই জানোছ না? কী হারছোস এত দিন?

আলম তাকে জোরে জোরে লাথি মারে। রিপন তার মায়ের ওপর এমন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার বাবার পা দুটি জড়িয়ে ধরে। রিপনকেও একটা লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে-
সর। একটা আছাড় দিমু কইলাম। ওরে মাইরাই হালামু।

রিপন ছিটকে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। হেনা তার চিবুকের নিচে দুই হাতের মুঠি কোনাকুনি করে সেই ভয়ংকর নির্যাতন দেখতে থাকে। ভয়ে সে কাঁদতেও ভুলে যায়। সালেহা চিন্তা করে-
মাইনষে বউ থুইয়া আবার বিয়া করলে বড় বউ রে নির্যাতন করে। কিন্তু হেই জিন্যে কি এত...?

চিন্তা করে সালেহা কোনো কূলকিনারা পায় না। বশির তালুকদার হয়তো আলমের কাছে নালিশ করেছেন। কিন্তু কী নালিশ করতে পারেন, সালেহা পুরোপুরি বুঝতে পারে না। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে-
মুই কী হারছি? মোরে একবার কন।
বেশ্যা মাগী কোতাকার! আবার কয় মুই কী হারছি? সব হুনছি। তুই হারাডা গ্রাম নষ্ট করছোস। ছিনাল কোতাকার! উল্টা মোর ভাইর মান-সরমান নষ্ট করছোস। তুই মোর পোলাপান ধরবি না কইলাম।

সালেহার বুঝতে বাকি থাকে না। তাই আর চুপ করে না থেকে প্রতিবাদের সুরে বলেই ফেলে-
আফনের ভাই-ই তো এট্টা চরিত্রহীন। মাইনষের ধারে মুই সব কইয়া দিমু।
আলম পশুর মতো গর্জে ওঠে-
কী কইলি? তুই কী কইবি? এই, কী কইবি? খাড়া, তোরে কওয়াইতাছি সব...।

আলম দুই হাতে সজোরে সালেহার গলা টিপে ধরে। যতক্ষণ পর্যন্ত সালেহা ছটফট করতে পেরেছে, ততক্ষণ ছাড়েনি। যখন ছেড়েছে, তখন সালেহার শরীরে সামান্য কম্পন ছাড়া আর কিছুই নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে কুলসুম আলমকে বলে-
কী করেন এই সব? ঘরে আহেন তো।

আলম তখনো হিংস্র পশুর মতো অর্ধেক খাওয়া শিকার ফেলে যেতে চায় না। কুলসুম তাকে টেনে নিয়ে যায়। আলম ফোঁস ফোঁস করে বারবার বলতে থাকে-
ছাড়ো দিহি মোরে। ও মাইনষেরে নাকি সব কইয়া দিব...। ওরে মুই এহনই সব কওয়াইয়া ছাড়মু।

কুলসুম তাকে ঘরের দিকে টানে আর বলে-
আফনে আহেন তো, ঘরে আহেন।
আরে আইমু কী? দ্যাহো, দ্যাহো, কী ভং ধরছে! মরার মতো করতাছে? শালীর ঝি শালীরে আরো মাইর দেওন দরকার। এ্যাই! ভং থামা কইতাছি।

আলম ঘরে গেলে রিপন ও হেনা তাদের মাকে ধরে নিদারুণ কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের সেই কান্নায় কারো মনই গলে না। সালেহার হাত-পা নাড়ানো কিংবা এতটুকু শব্দ করার শক্তিও নেই। তার জিহ্বা বের হয়ে ঝুলে পড়েছে। তার পরও আস্তে আস্তে বাম চোখটা একটু খোলে। চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে। ভীষণ আবছা অস্পষ্ট দৃষ্টিতে ছেলেমেয়ে দুটির মুখের দিকে তাকাতে চেষ্টা করে। সালেহার চোখের অবশিষ্ট নোনা জলটুকু অধর বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে তার শরীর শীতল নিথর হয়ে যায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। অন্ধকার গাঢ় হতে থাকে। রাতের অন্ধকারের বুক চিরে সালেহা চলে যায় চির অন্ধকারের দেশে।
সমাপ্ত

বাংলাদেশ সময় : ১৩১৩ ঘণ্টা, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
এমজেএফ/ [email protected]


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান