
ঢাকা: বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক ৪৬৯টি পদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৯৯২ সালে এ পদের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮৯৭টি। ২১ বছর পর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৬৬টিতে।
মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি’র বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক পদের সংখ্যা নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পাশাপাশি পদের মান উন্নীত হওয়ার ১৬ বছর পর ভুতাপেক্ষভাবে অনুমোদন পেয়েছে কানুনগো পদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবও। এ ছাড়াও বৈঠকে উত্থাপিত ছয়টি প্রস্তাবেই সায় দিয়ে অনুমোদন দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ কমিটি।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থাপিত নয়টি প্রস্তাবই অনুমোদন করেছে কমিটি। অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ বিভাগ (নন-পুলিশ কর্মকর্তা/কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ১৯৯৬’ সংশোধন প্রস্তাব, কানুনগো (উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার) পদ দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদমর্যাদায় উন্নীতকরণ ও বেতন স্কেল বৃদ্ধির ভূতাপেক্ষ অনুমোদন, বিদ্যুৎ বিভাগের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গবেষণা কাউন্সিল আইন, ২০১৩ এর (পিইআরসি) প্রণয়ন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিশাখা ও শাখা স্থাপনের জন্য পদ সৃজন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের জন্য ২৬টি সহায়ক পদ সৃজন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গ্রন্থাগারিক পদের নিয়োগ বিধিমালা ২০১২ প্রণয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জারি বিভাগের জন্য রাজস্ব খাতে পদ সৃজন এবং এস্টাবলিষ্টমেন্ট অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটি ইন ঢাকা (ফার্স্ট ফেইজ) প্রকল্পের জন্য রাজস্ব খাতে পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনমোদন দেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার বলেন, গত ২০ বছরে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে কয়েক হাজার কর্মকর্তা যোগ দিলেও নতুন করে গ্রেডভিত্তিক পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। এ ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ করতে সংশোধন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা।
প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির জন্য পাঠানো সার-সংক্ষেপে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ করে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়, তাতে গ্রেড-১ এর মঞ্জুরিকৃত ৩টি পদের জন্য ৩টি, গ্রেড-২ এর ১২টি পদের জন্য ১৩টি, গ্রেড-৩ ২৬টি পদের জন্য ৩০টি, গ্রেড-৪ ১০টি পদের জন্য ১০টি, গ্রেড-৫ এর ২৫০টি পদের জন্য ২৫২টি, গ্রেড-৬ এর ২ হাজার ১৬১টি পদের জন্য ২ হাজার ১৩১টি (বাকি পদ বিলুপ্ত) এবং গ্রেড-৯ এর এক হাজার ৭০৪টি পদের জন্য এক হাজার ৯৩৭টি পদ প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রস্তাবটিই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগবিধি পরীক্ষণ সংক্রান্ত উপ-কমিটি গত ২২ জানুয়ারি ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি-’তে উত্থাপনের জন্য সুপারিশ করে।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ১ মার্চ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। গত ২১ বছরে এ ক্যাডারের জনবল বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসনিক: প্রশাসনিক) গঠন ও ক্যাডার বিধিমালা ১৯৮০ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক প্রকৃত পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ ও তফসিল হালনাগাদ করতে ২০০৯ সালের ১১ জুন ৮ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটি নানা প্রক্রিয়া শেষে ২০১২ সালের ৮ মে প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেডভিত্তিক প্রকৃত পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ করে। কমিটি এ সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধি ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল ২৯৪-২৯৮/২০০৩ মামলার রায়কে বেজলাইন ধরে গ্রেডভিত্তিক পদ ও পদের সংখ্যা নির্ধারণ করে।
১৯৯২ সালে নির্ধারণকৃত পদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৮৯৭টি। এরপর নতুন করে অনেক পদ সৃষ্টি হলেও বিচার বিভাগ আলাদা হওয়াসহ নানা কারণে বেশকিছু পদ বিলুপ্তও হয়।
অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডারে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা চার হাজার ১৬৬টি। এর মধ্যে কিছু পদ অবলুপ্ত হওয়ায় বর্তমান পদের সংখ্যা দাঁড়ায় তিন হাজার ৯৬৯টি। ১০ শতাংশসহ (ছুটি, প্রেষণ ও প্রশিক্ষণ) পদের সংখ্যা দাঁড়ায় চার হাজার ৩৬৬টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৩
এএইচএস/এএসআর/এবি/আরআইএস