কবিতার জীবন ও একজন শহীদ কাদরী | ফকির ইলিয়াস

বিশেষ রচনা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৬:১৬, আগস্ট ১৪, ২০১৪

নিউইয়র্কে কেমন আছেন শহীদ কাদরী? ১৪ আগস্ট জন্মদিন এলেই এ প্রশ্নটি করেন তাঁর কাব্যপ্রেমীরা। তিনি ভালো আছেন। আছেন কবিতার ভুবনে। আছেন ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ নিয়ে। প্রবাসী বাঙালিদের যে অনুষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাংলা কবিতা অঙ্গনে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে— হচ্ছে।

একটি ভাবনা আমাকে প্রায়ই জাগ্রত রাখে। তা হলো, একজন কবির কবিতা কিভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। কবির চোখ দিয়ে আমরা নিজেদের যাপিত জীবনের আখ্যানকে কিভাবে দেখি। শহীদ কাদরী আমার প্রতিবেশি কবি। একই শহরে থাকি, প্রায় একই এলাকায়। জ্যামাইকা থেকে উডহ্যাভেন খুব দূরে নয়। তাঁর প্রতিটি কবিতা আমি যখন পড়ি— খুব ঘনিষ্টভাবে মিলিয়ে দেখি আমার পথচলার মিলন-বিরহ।

হ্যাঁ, তিনি তাঁর কবিতায় প্রতিনিয়ত নিবন্ধন করে যাচ্ছেন আমাদের বহমান সমকাল। তাঁকে বলা যায় সমকালদ্রষ্টা কবি। চারপাশের চলমান জীবন আর স্বপ্নের বীজ ধারণ করে, মানুষের জন্য তিনি সৃজনের যে ছায়া বুনে যান, ক্রমশই তা হয়ে ওঠে প্রজন্মেরও একান্ত চাওয়া পাওয়া। আমরা তন্ময় হয়ে দেখি, দূর বিদেশে থেকেও স্বজাতি, স্বদেশ, স্বকালের প্রতি একান্ত প্রহরীর ভূমিকা পালন করেন তিনি। কবি শহীদ কাদরী। এই পরবাসী বাঙালীর প্রাত্যহিক সহযাত্রী তিনি। ২০১১ সালে একুশে পদক পেয়েছেন এই কবি। এরপর পেয়েছেন বাংলা একাডেমী মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার ২০১২। চলায়-মননে, আমাদের চারপাশ ঘিরে পুষ্ট হয়ে উঠছে তাঁর কবিতা।
তিনি বলেন—

যদি মুখ খুলতেই হয়
আমি বলবো : আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা
ক্রমশ কমে যাচ্ছে, উত্তর বাংলায়
শীতের পোশাক যাওয়া দরকার,
আমেরিকা না বেজিং— সাহায্যের হাত
প্রসারিত হবে কার দিকে? এ ব্যাপারে
সুশীল সমাজ কী মনে করেন?
কার কণ্ঠে তুলে দেবো
কবিতার এই মণিহার?
আমি জানি গুপ্তঘাতকেরা
ছড়িয়ে রয়েছে আমার শহরে।
তাদের নিধন চেয়ে
কবিতাকে অস্ত্রের মতো
ব্যবহার করতে চেয়েছি আমি বহুবার।
(যদি মুখ খুলি)

শহীদ কাদরী বহুল পঠিত কবি। এই প্রজন্মের মননের প্রতীক তিনি। সবসময়ই তার কবিতা আলোচিত। কারা আলোচক? আলোচক নতুন প্রজন্মের কবি, পাঠক, গবেষক, কাব্যপ্রেমী। শহীদ কাদরী সেই কবি যিনি বলেছিলেন—

বন্য শুকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ
ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই,
গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ
মেয়েলি গানের— তোমরা দু’জন একঘরে পাবে ঠাঁই
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না..

আমরা ভাবতে পারি, একটি জাহাজ চলছে। সমুদ্রের নীল আভা ঘিরে রেখেছে জাহাজের পাটাতন। ক্যাপটেন বসে আছেন ডেকে। খুব দূরে তার চোখ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। সদা সতর্কতার হুইসেল শুনে শুনে ক্যাপটেন পার হচ্ছেন জোছনা-সাগর। কিংবা একজন সামরিক ক্যাপটেন এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তার বাহিনী। তার বুট স্পর্শ করছে মৃত্তিকার সবটুকু সবুজ। শিশিরে ভেজা বুলেটের খোসা কুড়াতে কুড়াতে তিনি একাধিক ফাগুনকে দাঁড় করাচ্ছেন তার মুখোমুখি।

তিনিই আমাদের কবি শহীদ কাদরী। বাংলা কবিতার একজন ক্যাপটেন। একজন অধিকর্তা। নিয়ন্ত্রক। প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অতন্দ্র প্রহরী। উত্তরাধিকারের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। কবি শহীদ কাদরীর মুখচ্ছবি মানসপটে ভেসে উঠলেই আমরা শান্তির এক ঝাঁক পায়রাকে আমাদের আকাশ জুড়ে উড়ে যেতে দেখি। তার কবিতায় প্রবেশ করলেই আমরা মনের অজান্তে বলে উঠি, ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’।

সংকটের চিরায়ত কম্পন একজন মানুষের জীবনকে কি দিতে পারে পরিপূর্ণ উপলব্ধি? কিংবা ‘প্রত্যহের কালো রণাঙ্গণে’ দাঁড়িয়ে কোনো যোদ্ধা কি এঁকে যেতে পারে তার কাঙ্ক্ষিত প্রিয় মুখ? এমন অনেক প্রশ্নের জবাবই আমরা পেয়ে যাই তাঁর কবিতায়। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম নেয়া এই কবির জীবনবোধ যেন হয়ে যায় তার চার-পাঁচ দশক অনুজপ্রতিম কোনো কবির জীবন মধ্যাহ্ন।

শহীদ কাদরীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা চারটি। উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪) কোথাও কোন ক্রন্দন নেই (১৯৭৮), আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও ( ২০০৯)।

মাত্র চারটি কাব্যগ্রন্থে এই কবির জনপ্রিয়তা কেন এতো বেশি? এ প্রশ্নটি আসতেই পারে বিভিন্ন কারণে। কিন্তু একথা স্বীকার করে নিতেই হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত আলোকরশ্মি বিতরণের যে সব রসদ কবিতায় থাকা দরকার, তার সবই আছে তার কবিতায়। আর সে জন্যেই বোধ হয় শূন্য শতকের কোনো পাঠক-পাঠিকা এখনও খোঁজ নিতে তৎপর হন, শহীদ কাদরী কোথায় আছেন-কেমন আছেন।

না, আমি তাঁকে নাগরিক কবি বলতে রাজি নই। তাঁর উক্তি আমাদেরকে সম্মিলিত স্পর্শের ঢেউ ছড়িয়ে দিয়ে জানান দিয়ে যায়, তিনি পরিশুদ্ধ মানবগোষ্ঠীর কবি—

আমরাই বিকৃত তবে? শান্ত, শুদ্ধ এই পরিবেশে
আতর লোবান আর আগরবাতির অভিমর্ত্য গন্ধময়
দেবতার স্পর্শ পাওয়া পবিত্র গ্রন্থের উচ্চারণে
প্রতিধ্বনিময় সব্জীক্ষেতের উদার পরিবেশে
(নপুংসক সন্তের উক্তি/ উত্তরাধিকার)

দুই.
শহীদ কাদরী তাঁর কবিতায় যে দ্রোহের দ্যোতনা দেখিয়েছেন তা আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়েছে বৈষম্যের সমাজব্যবস্থা ভেঙে পরিশুদ্ধ মানবসমাজ গঠনের কথা। তাঁর সমকাল, তাঁর বিবর্তনচিত্র এমন কিছু ব্যঞ্জনার ছায়াপাত ঘটিয়ে গেছে যা পাঠক-পাঠিকাকে শুধু ভাবিয়ে তোলে না, নতুন করে জীবনান্বেষণের দরোজাও খুলে দেয়—

রক্তপাতে, আর্তনাদে, হঠাৎ হত্যায় চঞ্চল কৈশোর-কাল
শেখালে মারণ-মন্ত্র, আমার প্রথম পাঠ কি করে যে ভুলি
গোলাপ-বাগান জুড়ে রক্তে-মাংসে পচেছিল একটি রাঙা বৌ
ক’খানা ছকের ঘুঁটি মানুষের কথামতো মেতেছিলো বলে।
(উত্তরাধিকার/ উত্তরাধিকার)

এভাবে নিতান্ত নিজস্ব আয়না তৈরি করে সেখানেই কবি খুঁজেছেন নিজের অবয়ব। একান্তভাবেই নতজানু হয়ে গিয়েছেন তার কবিতার কাছে। প্রেমের ছায়াপর্দায় বর্ণের ঝলক দেখে দেখে পরিপুষ্ট মননের নদী তৈরি করে যান তাঁর উত্তরসূরিদের জন্য—

দেয়ালে ছায়ার নাচ
সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই
গাঢ় লাল মেঝেয়, ভয় পাওয়া রাত্রিগুলোয়
যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের
সচ্ছল আঁধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে
শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক
নিশব্দে ফিকে হলো; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই
মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়।
(স্মৃতি: কৈশোরিক/ উত্তরাধিকার)

তিন.
শহীদ কাদরী তাঁর ‘নিসর্গের নুন’ কবিতাটি যখন লেখেন তখন কেমন ছিল আমাদের রাজনৈতিক-সামাজিক চিত্র? যারা তা দেখি নাই, তাদের কাছে হয়তো তা এখনো থেকে যেতে পারে অনেকটা আবছা। কিন্তু সে চিত্রটি এখন কেমন? তার একটা তুলনামূলক চিত্র আমরা পেতেই পারি খুব সহজে—

আমিও সশব্দে নিসর্গের কড়া নেড়ে দেখেছিলাম
পুকুর পাড়ের ঝোপে চুপি চুপি
ডাকাত পড়ার ভয়ে স্পন্দমান নিঃশ্বসিত জল
কুলুপ লাগানো তার নড়বড়ে নষ্ট জানালায়
(নিসর্গের নুন/ উত্তরাধিকার)

কী স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শহীদ কাদরী? কোন অভিমান, কোন শঙ্কা, কোন টান তাড়া করে প্রতিনিয়ত তাকে? তার ‘অগ্রজের উত্তর’ কবিতায় আমরা অনেক আগেই জেনে গিয়েছিলাম সর্বদা রক্তনেত্র একজন কবি একরাশ চুলের বদলে উড়িয়েছেন শোকের পতাকা—

‘না, না, তার কথা আর নয়, সেই
বেরিয়েছে সকাল বেলায়, সে তো— শহীদ কাদরী বাড়ি নেই।’
(অগ্রজের উত্তর/ উত্তরাধিকার)

তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটি যখন প্রকাশ পায় তখন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বয়স প্রায় চার বছর। এই গ্রন্থে আমরা তার কাব্য বুনন লক্ষ্য করি ভিন্ন আঙ্গিকে। রাষ্ট্র মানে কি, এর একটি চিত্র তিনি দিয়েছেন শুরুর কবিতাটিতেই—

রাষ্ট্র বললেই মনে পড়ে স্বাধীনতা দিবসের
সাঁজোয়া বাহিনী

রাষ্ট্র মানেই স্ট্রাইক, মহিলা বন্ধুর সঙ্গে
অ্যানগেজমেন্ট বাতিল
রাষ্ট্র মানেই পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত
ব্যর্থ সেমিনার
রাষ্ট্র মানেই নিহত সৈনিকের স্ত্রী
রাষ্ট্র মানেই ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া
রাষ্ট্র মানেই রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা
রাষ্ট্র সংঘের ব্যর্থতা মানেই
লেফ্ট রাইট, লেফ্ট রাইট, লেফ্ট-!
(রাষ্ট্র মানেই লেফ্ট রাইট, লেফ্ট/ তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)

প্রেমের উষ্ণতা কবির পাঁজরকে দিয়ে যায় গল্পের সাজানো প্লট। তখন শ্রাবণের দেয়ালেও কবির হাতে লেখা হয়ে যায় অমর পঙ্‌ক্তিমালা। আমরা, পাঠক-পাঠিকারা পড়ে যাই সেই নিশব্দ পোস্টার—

শাদা রাস্তা চলে গেছে বুকের মধ্যে
পাতার সবুজ সম্মিলিত কাঁচা শব্দে
যে তোমাকে ডেকেছিলো ‘রাধা’
আধখানা তার ভাঙাগলা, আধখানা তার সাধা।
(বৈষ্ণব/ তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)

মানুষের চৈতন্য প্রবাহকে সর্বদা শানিত করে যাওয়াই কবির কাজ। এমন অনবদ্য চেতনাচিত্ত আমরা তাঁর অনেক কবিতায়ই পাই। আত্মমগ্নতার অভিঘাত ধারণ করে সব চলমানতাই হয়ে উঠে আমাদের প্রতিবেশী। যদিও কবি বলেন ‘কবিতা, অক্ষম অস্ত্র আমার’ কিন্তু আমরা কবিতাকে পেয়ে যাই ভোরের সূর্যের মতোই—

আর আমাকে ফিরিয়ে দিলে
মধ্যরাত পেরুনো মেঘলোকে ডোবা সকল রেস্তোরাঁ
স্বাধীনতা, তোমার জরায়ু থেকে
জন্ম নিল নিঃসঙ্গ পার্কের বেঞ্চি
দুপুরের জনকল্লোল
আর যখন-তখন এক চক্কর ঘুরে আসার
ব্যক্তিগত, ব্যথিত শহর, স্বাধীনতা!
(স্বাধীনতার শহর/ তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)

চার.
শহীদ কাদরী বলেন, একজন কবিকে খুব বেশী লিখতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তাঁর এই বাণীটুকু তিনি বারবারই প্রমাণ করেছেন তাঁর কবিতায়। তাঁর সাম্প্রতিক কবিতাগুলো পড়লে মনে হয়, তিনি কবিতা লিখছেন এই একুশ শতকের কোনো ভরাট দুপুরকে তার কাব্যক্যানভাস বানিয়ে—

তিনটে এসএমএস করলাম
দয়া করে উত্তর দাও।
তুমি যখন বাইরে যাও
ভয়ে আমি (কবির ভাষায়) কাঁপতে থাকি
আর যখন ফিরে আসো
মনে হয় আমি সেই লোক যে একদা
চন্দ্রপৃষ্ঠে হেঁটেছিল।
দ্যাখো, ভয় আমি পাই
কেননা ইতিহাসের অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে
আজ আমি জ্বরাগ্রস্ত—
বন্দী একটি বিদেশি বারান্দায়।

অথবা—

টুইন টাওয়ারে যেদিন বিমান আক্রমণ হলো
সেদিন তুমি নিউইয়র্কে।
আর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের সময়
আমি কলকাতায়। প্রায় আজীবন
বিচ্ছেদ ভাবাতুর আমি।
বেরিয়েছো সেই সাত সকালে
এখনও ফেরার নাম নেই।
মৃত্যুর আগে প্রত্যেকেরই প্রাপ্য
একটি শেষ চুম্বন— আমি কি তাও পাবো না।
(অপেক্ষা করছি / কালি ও কলম , ফেব্রুয়ারি ২০১১)

তাঁর বেশ কিছু কবিতা আছে, যেগুলো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ‘রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন?’, ‘নির্বাণ’, ‘গোধূলি’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কেন যেতে চাই’, ‘প্রেম’, ‘সঙ্গতি’, ‘একটি মরা শালিক’, ‘কেন যেন বলছে’, ‘আবুল হাসান একটি উদ্ভিদের নাম’, ‘উত্থান’, ‘বালকেরা শুধু জানে’, ‘একটি ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের জার্নাল’, ‘দাঁড়াও আমি আসছি’ প্রভৃতি কবিতার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়।

শহীদ কাদরী মানবসত্তার দ্রোহ এবং উত্থানকে চিত্রিত করেছেন তাঁর নিজের মতোই। আর এখানেই তাঁর বিশিষ্টতা উজ্জ্বল হয়ে আছে দশকের পর দশক। এবং থেকে যাবেও অনন্তকাল—

পাথর তোমার ভেতরেও উদ্বৃত্ত
রয়েছে আর এক নৃত্য।
(নর্তক/ কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই)

মাত্র দুলাইনের একটি কবিতা। কিন্তু কী গভীর আখ্যানে তিনি সেরেছেন তার নিজস্ব চিহ্নায়ন। তাঁর দূরদর্শীতা বারবারই একই প্লাটফর্মে এনেছে আমাদের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, শান্তির স্বপক্ষে। তিনি লিখছেন এখনও। তবে সে সংখ্যা খুবই কম। তাঁর পাঠকরা এখনো উদগ্রীব থাকেন নতুন কী লিখলেন কবি। শান্তি ও মানবতার পক্ষে তিনি এখনো যে কত বলীয়ান, তা তার পঙ্‌ক্তিগুলো পড়লে সহজেই বোঝা যায়—

এই গ্রহের মহাপুরুষরা কে কী বলেছেন
আপনারা সবই জানেন। এখানে বক্তৃতা আমার উদ্দেশ্য
নয়। আমি এক নগন্য মানুষ, আমি
শুধু বলি: জলে পড়ে যাওয়া ঐ পিঁপড়াটাকে ডাঙায় তুলে দিন
(আপনারা জানেন/ আমার চুম্বন গুলো পৌঁছে দাও)

শহীদ কাদরী এভাবেই এই উত্তর প্রজন্মকে দিয়ে যাচ্ছেন অনেকগুলো আশার শিউলি সকাল। মসৃণ গোলাপ আর তেজিসাহস দুটোই তিনি তুলে দিচ্ছেন মানুষের হাতে। এবং জোর গলায় বলছেন ভালোবাসাই দখল করে নেবে এই বিশ্বের সকল বেদনাকে—

আমি জানালা থেকে দেখলাম
মনজুর এলাহীর গোটা বাগান
জোনাকিরা দখল করে নিয়েছে—
বিনা যুদ্ধে, বিনা রক্তপাতে।
(বিপ্লব/ আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও)

বাংলা সাহিত্য, বাংলা কবিতা আর পাঠক-পাঠিকারা তাঁর কাছে খুবই ঋণী। এ ঋণ কোনোদিনই শোধ হবার নয়। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে আমাদের দায় কিছুটা লাঘব করেছেন। তিনি বলেছেন ‘চাই দীর্ঘ পরমায়ু’। আপনার সত্তা বাংলা কবিতারও পরমায়ু, প্রিয় কবি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।



বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৪


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান