ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় হিজরতের বছর

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৪৮, মার্চ ২৩, ২০১৬

দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত সব মসজিদের ফজিলত সমপর্যায়ের হলেও চারটি মসজিদের ফজিলত অন্য সব মসজিদ থেকে ভিন্ন। তন্মধ্যে বায়তুল্লাহর মর্যাদা সবার ওপরে। এরপর ধারাবাহিকভাবে মসজিদে নববী, বায়তুল মুকাদ্দাস ও মসজিদে কুবা। প্রথমোক্ত তিন মসজিদের ফজিলত সর্বজনবিদিত হলেও চতুর্থটির ব্যাপারে খুব একটা আলোচনা হয় না।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের অভিমুখে সর্বপ্রথম যে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন, তার নাম কুবা মসজিদ। এখানে তিনি সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করেন। হিজরী প্রথম বর্ষে এটা নির্মিত হয়।

মসজিদে কুবা মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে ও মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। মসজিদে নববী থেকে এর দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হতো। এরই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায়- মসজিদে কুবা।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম দিন আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনা অভিমুখে হিজরত করেন। আর এ হিজরতের মধ্য দিয়ে মদিনা শহরকে কেন্দ্র করে ইসলাম ও কোরআনের বাণী বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পর সাহাবিরাও পর্যায়ক্রমে মদিনা গমন করেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন ও মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাকের মতে নবী করিম (সা.) এখানে সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে মসজিদে কুবার ভিত্তি স্থাপন করেন এবং এতে নামাজ আদায় করেন। নবুওয়ত প্রাপ্তির পর এটাই প্রথম মসজিদ, যার ভিত্তি তাকওয়ার ওপর স্থাপিত। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমের সূরা তওবায় বিশদ বর্ণনা রয়েছে। নবী করিম (সা.) কর্তৃক ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হওয়ার পর পৃথিবীর বুকে নির্মিত প্রথম মসজিদ হলো- এই কুবা মসজিদ।

বিশ শতকে আবদুল ওয়াহেদ আল ওয়াকিলের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিশন সৌদি আরবের পুরনো সব মসজিদ পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করে। এ সময় কুবা মসজিদটিরও পুনর্নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে কুবা মসজিদ চত্বরে মূল মসজিদ ছাড়াও আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। এই মসজিদে মহিলাদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে।

মদিনাবাসীর সরলতা এবং মদিনার পবিত্রতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ১৯৮৬ সালে মসজিদটির পুনর্নির্মাণকালে ব্যাপকভাবে সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের চতুর্দিকের সুবজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য প্রদান করেছে।

মসজিদে কুবায় নামাজের ফজিলতের কথা অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্বারোহণ করে কিংবা হেঁটে মসজিদে কুবায় আগমন করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। অন্য এক হাদিসে রয়েছে, প্রতি শনিবারে রাসূল (সা.) কুবায় আগমন করতেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি ওমরাহর সমপরিমাণ। -সুনানে তিরমিজি

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে একটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। -ইবনে মাজাহ

তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও তাদের আমলের এই ধারা অব্যাহত আছে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে দুই ধরনের মসজিদের আলোচনা করেছেন। তন্মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর স্থাপিত মসজিদ বলে মসজিদে কুবা ও মসজিদে নববীকে বুঝানো হয়েছে। পবিত্র হজ ও ওমরা পালনকালে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে কুবায় নফল নামাজ আদায়ে সচেষ্ট থাকেন।



বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এমএ/


সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান