
ঢাকা: চাহিদার তুলনায় চালের উৎপাদন বেশি হলেও গত পাঁচ বছরে চালের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যদিকে চালের অবাধ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি আয়ও কমে গেছে।
২০০৫ সালে প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ২৪ টাকা। আর ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ টাকায়। ২০১১ সালে এই গড় আরও উর্ধ্বমুখী।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল ২৬৫ দশমিক ৩০ লাখ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২৭৩ দশমিক ১৮ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২৮৯ দশমিক ৩১ লাখ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩১৩ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে হয় ৩২২ দশমিক ৫৭ লাখ মেট্রিক টন।
অর্থ্যাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদন বাড়ে শতকরা ২১ দশমিক ৫৮ ভাগ।
খাদ্য ভবনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে বাংলাদেশে চালের চাহিদা ছিল ২২৯ লাখ, ২০০৬ সালে ২৩২ লাখ, ২০০৭ সালে ২৩৬ লাখ, ২০০৮ সালে ২৩৯ লাখ, ২০০৯ সালে ২৪২ লাখ ও ২০১০ সালে ২৪৬ লাখ মেট্রিক টন।
অর্থ্যাৎ ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে চাহিদা বাড়ে শতকরা ৭ দশমিক ৪২ ভাগ।
হিসাব অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে।
অন্যদিকে সরকার ২০০৮ সালের ৬ মে থেকে চালের অবাধ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি আয় কমে গেছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র।
ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে চালের রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আয় আরও বেড়ে হয় ৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
কিন্তু অবাধ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে চালের রপ্তানি আয় কমে হয় মাত্র ১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি আয় কমে যায় শতকরা ৭৩ দশমিক ৪৭ ভাগ।
একদিকে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে, অন্যদিকে অবাধ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি আয়ও কমেছে। তারপরও সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না চালের দাম। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হচ্ছে, বাজারে ছাড়তে হচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ সালে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম ছিল ৩২ টাকা, মিনিকেট ২৪ টাকা, নাজিরশাইল ২৩ টাকা, আমন পাইজাম ২২ টাকা ও পারিজা চালের দাম ছিল ১৯ টাকা। এসব চালের গড় দাম ছিল ২৪ টাকা।
২০০৬ সালে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম ছিল ৩৮ টাকা, মিনিকেট ২৮ টাকা, নাজিরশাইল ২৬ টাকা, আমন পাইজাম ২৩ টাকা ও পারিজা চালের দাম ছিল ২০ টাকা। এসব চালের গড় দাম ছিল ২৭ টাকা।
২০০৭ সালে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৩২ টাকা, নাজিরশাইল ৩৩ টাকা, আমন পাইজাম ২৬ টাকা ও পারিজা চালের দাম ছিল ২৫ টাকা। এসব চালের গড় দাম ছিল ৩৩ টাকা।
২০০৮ সালে চালের দাম আরও বেড়ে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম হয় ৬৯ টাকা, মিনিকেট ৪৩ টাকা, নাজিরশাইল ৪৩ টাকা, আমন পাইজাম ৩৭ টাকা ও পারিজা চালের দাম হয় ৩৫ টাকা। এসব চালের গড় দাম ছিল ৪৫ টাকা।
চালের দাম কিছুটা কমে ২০০৯ সালে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম হয় ৬৩ টাকা, মিনিকেট ৪০ টাকা, নাজিরশাইল ৩৮ টাকা, আমন পাইজাম ৩০ টাকা ও পারিজা চালের দাম হয় ২৮ টাকা। এসব চালের গড় দাম ছিল ৪০ টাকা।
তবে ২০১০ সালে দাম আবার বেড়ে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম হয় ৬৭ টাকা, মিনিকেট ৪২ টাকা, নাজিরশাইল ৪৪ টাকা, আমন পাইজাম ৩৬ টাকা ও পারিজা চালের দাম হয় ৩৫ টাকা। চালের গড় দাম দাঁড়ায় ৪৫ টাকা।
অর্থ্যাৎ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ চালের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। বর্তমানে এ দাম আরও উর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে সূত্র।
পাঁচ বছরে চালের দাম দ্বিগুণ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য ভবনের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘উৎপাদন ও চাহিদা সমান হলেই দাম কমানো সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা দিয়ে দেখলে দেখা যাবে, উৎপাদিত অনেক চাল গুদামে, আড়তে, বাড়িতে মজুদ আছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে সরবরাহ কম। আর এর ফলেই চালের দাম বাড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যে পণ্য বা দ্রব্য সংযুক্ত, সে পণ্য বা দ্রব্যের দামও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হয়। তা না হলে দুর্নীতির সুযোগ থাকে।’
চালের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে, ব্যবসায়ীদের দেশের ভেতরে ব্যবসা করার নির্দেশ দিয়েই শুধু চালের দাম কমানো সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চালের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘চালের দাম সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। আর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা নেই সরকারের। কারণ সরকার তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করলে তারা যদি একদিনও চাল সরবরাহ বন্ধ রাখে, তবে সরকার বিপদে পড়ে যাবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১১