ঈদের কেনাকাটায় জুতা

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৩৩, আগস্ট ১৬, ২০১১

ঢাকা: সারা বছর জুতার চাহিদা থাকলেও ঈদের জুতার ব্যাপারে সবাই একটু বেশিই সচেতন। সময়ের ফ্যাশন-সচেতন মানুষ ঈদে জুতা আর পোশাক মানিয়ে পরাকে রুচিশীল ব্যক্তিত্বের প্রকাশ বলে মনে করে।
   
তাই ঈদের কেনাকাটায় পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা কেনার ব্যাপারে ক্রেতারা মোটেও কৃপণতা করছেন না। ক্রেতাদের ব্যাপক এ আগ্রহের কারণে জুতা বিক্রির দোকানগুলোও ভরে উঠেছে হাল ফ্যাশনের জুতার সম্ভার নিয়ে।

এবার রোজার শুরুতেই পোশাকের দোকানগুলো কেনাবেচায় জমজমাট হয়ে উঠলেও রোজার মাঝামাঝিতে এসে জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের চাহিদা, পছন্দ আর সাধ্যের কথা মাথায় রেখে হাল ফ্যাশনের দেশি-বিদেশি নান্দনিক ডিজাইনের জুতা তৈরি করেছে উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো। হাতের নাগালেই যেকোন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো।

জুতা বাজারের জন্য বসুন্ধরা সিটি, এলিফ্যান্ট রোড, পলওয়েল মার্কেট, ফুলবাড়িয়া মার্কেট ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোই ক্রেতাদের কাছে প্রিয়।
 
তবে এছাড়াও নিউমার্কেট, গুলশান জিসিসি মার্কেট, রাপা প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা ও মৌচাক মার্কেটসহ বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি জুতা ও স্যান্ডেল।

বসুন্ধরা সিটির লেভেল ৬-এ রয়েছে জুতার বিরাট বাজার। এখানে রয়েছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড নাইক ও হাস পাপিসের শোরুম। এছাড়াও রয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ড জেনিস। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ২০০ জুতার দোকান রয়েছে। রয়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার পছন্দসই জুতো।

তবে বসুন্ধরা সিটির সবচেয়ে বিলাশবহুল জুতার শোরুম বাটা ও এপেক্স রয়েছে লেভেল ৭-এ। এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশে কেনাকাটার সুযোগ আকর্ষণ করবে যে কাউকেই।

জুতার দোকানের জন্য অনেক আগে থেকেই সবার কাছে পরিচিত এলিফ্যান্ট রোড। এখানকার দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাদের এতো ভীড় যে বিক্রেতাদের দম ফেলার সময় নেই।

এলিফ্যান্ট রোডে রয়েছে ডিজেল, এপ্রেক্স, বাটা, বাটারফ্লাই, লিবার্টি, সিক্সটি নাইন ছাড়াও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের শোরুম।

এছাড়া পলওয়েল মার্কেটে রয়েছে বিদেশি জুতার বাহারি সমাহার। ক্রেতাদের ভীড়ও ভীষণ। রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এখানে জুতার দাম কিছুটা কম বলে জানান ক্রেতারা।

মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য কেনাকাটায় আরামদায় ফুলবাড়িয়া মার্কেট। এখানে দেখা গেল  স্বদেশ সুজ, মাসুম সুজ, রুম্মান সুজ, রংধনু সুজ, কাজী সুজ, সিকদার সুজ, বসুন্ধরা সুজ, পদ্মা সুজ, যুমনা সুজ, ঝর্ণা সুজ এমন অসংখ্য জুতার দোকান। শুধু ক্রেতা নয়, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত  দোকানগুলো।

সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন জুতার বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তরুণরা নানা রঙের কেডস ও উঁচু হিলের জুতা বেশি কিনছে।

তারা জানান এবারের জুতার বাজারে লক্ষ করার মতো দিক হলো, গত কয়েক বছরের মতো এবার তরুণরা আর স্নিকারসের দিকে ঝুঁকছে না। আবার মেয়েদের সিøপারসের চাহিদা কিছুটা কমে হাইহিলের দিকে আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।

ঈদ শিশুদের কাছেই সবচেয়ে বেশি আনন্দের। তাই ঈদের কেনাকাটায় ভালো জুতার প্রতি তাদের আকর্ষণও ব্যাপকা। সে দিক থেকে পরিবারের সবাই শিশুদের আনন্দের পরিপূর্ণতা আনতে শিশুর পছন্দসই জুতাই কিনে দেয়।

রাজধানীতে গ্যালারি এপেক্স, বাটা, আড়ঙসহ সকল শোরুমেই শিশুদের জন্য সাজানো হয়েছে পছন্দের পসরা। এগুলোতে শিশুদের  জুতা, স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ। গ্যালারি এপেক্সের শতাধিক শোরুমে শিশুদের স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকায়।

এপেক্সের নতুন ডিজাইনের জুতার দাম পড়বে ৩২০ থেকে ১২০০ টাকা। আর সাধারণ জুতার শোরুমগুলোতে শিশুদের জুতা ৩০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় পাওয়া যাবে। বাটার শোরুমগুলোতে এগুলোর দাম ৩৫০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকার মধ্যে।

বসুন্ধরা সিটির লেভেল ৬-এর প্রায় সব জুতার দোকানেই শিশুদের জন্য ঈদের নতুন জুতা পাওয়া যাচ্ছে। এখানে সব জুতার দোকানে দুবাইয়ের ক্লাসিক ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, অ্যাটোমো এক হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা, চায়নার স্টার প্লো এক হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মেয়েদের পছন্দের ধরন অনেক বদলেছে সময়ের সঙ্গে। ঈদে মেয়েদের পছন্দের জুতার সঙ্গে সোল ও হিলে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বাজারে এবার বিভিন্ন ধরনের মেটাল ও ট্রান্সপারেন্ট হিলের জুতাই বেশি।

মেয়েদের দেশি জুতার মধ্যে ফ্ল্যাট দুই ফিতার স্যান্ডেল এবারে ভাল চলছে। পাথরের কম-বেশি ব্যবহার আছে এসব স্যান্ডেলে, সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে জরি, প্ুঁতি আর কুন্দনের নকশা।

জুতা কিনতে আসা রামপুরার বাসিন্দা নিতু বললেন, ‘ফ্ল্যাট স্যান্ডেলের পাশাপাশি কভারওয়ালা স্যান্ডেলের প্রতি মেয়েদের আগ্রহ বাড়ার কারণ হলো এ ধরনের স্যান্ডেল জুতা যে কোনো ধরনের পোশাকের সঙ্গে ব্যবহার উপযোগী।’

বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি দেশি স্যান্ডেল ও জুতার প্রতিও তরুণীদের আগ্রহ কম নয়। দেশীয় ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাচ্ছে দেশাল, আড়ং, মায়াসি, কাভা কাভা, বিবিয়ানা, যাত্রার শোরুমগুলোতে। দেশীয় জুতা স্যান্ডেলের দাম ৩৫০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই রয়েছে।

মেয়েদের থাইল্যান্ডের সোডা রেইনবো, পিকে, পাল্টি, ফ্যাশন আই, স্টাইল এমন মানসম্পন্ন জুতাও মিলছে বসুন্ধরা সিটির শোরুমগুলোতে। এসব ব্র্যান্ডের স্যান্ডেলের দাম ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।

অন্য ব্র্যান্ডের মধ্যে ম্যাক্স ৯০০ থেকে এক হাজার ৫৯০ টাকা, স্যানেরিতা একা হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা, টিপটপ ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকা, স্টার প্লো, ১৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

নামী ব্র্যান্ডে ছেলেদের জুতার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। নাইকির কেডসের দাম পড়বে ৪ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা। এপেক্স ও বাটাতেও জুতার দাম এক হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এলিফ্যান্ট রোডের টপসুজের মালিক ফরিদ চৌধুরী জানালেন, বিক্রি বেশ ভালো। বিদেশি পণ্য আনার জন্য বিমানে প্রয়োজনীয় বুকিং পাচ্ছেন না। এ নিয়ে তারা খানিকটা দুশ্চিন্তায় আছেন।

বাটা এবার ঈদ উপলক্ষে আনেছে ভিন্ন ধরনের ৪০০ কালেকশন। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য ইতিমধ্যে তাদের কাছে পৌঁছে গেছে কিছু আইটেম। দাম ১৭৯০ থেকে ১৯৯০ টাকা।

ছেলেদের জন্য এসেছে নতুন স্নিকারসও। দাম এক হাজার ৬৯০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। দুই একদিনের মধ্যে ঈদের সব কালেকশন চলে আসবে বলে জানান বাটার সেলসম্যান সাগর।

গ্যালারি অ্যাপেক্সে রয়েছে নতুন কালেকশন ও দেশি পণ্য কেনার সুযোগ। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য ৭৯০ থেকে ২ হাজার ৮০০, বাচ্চাদের ৪৯০ থেকে এক হাজার ৩৫০ ও মেয়েদের স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ৫৯০ থকে এক হাজার ৯৯০ টাকার মধ্যে। রয়েছে স্প্রিন্ট ব্র্যান্ডের কেডস।

এছাড়াও রাজধানীর যেকোন মার্কেটে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরন ও ডিজাইনের জুতা। ক্রেতা তার রুচি ও পছন্দ মিলিয়ে সামর্থের মধ্যে কিনে নিতে পারেন ঈদের প্রয়োজনীয় জুতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০, আগস্ট ১৬, ২০১১


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান