বিদায় জুনায়েদ জামশেদ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১০:১০, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
জুনায়েদ জামশেদ

জুনায়েদ জামশেদ

৪৮ জন আরোহী নিয়ে পাকিস্তানি একটি যাত্রীবাহী বিমান বুধবার বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ওই বিমানের ৪৮ আরোহীর মাঝে দেশটির জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ ও স্ত্রী ছিলেন।

৪৮ জন আরোহী নিয়ে পাকিস্তানি একটি যাত্রীবাহী বিমান বুধবার বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ওই বিমানের ৪৮ আরোহীর মাঝে দেশটির জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ ও স্ত্রী ছিলেন। সঙ্গীতশিল্পী থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারকে পরিণত হওয়া জুনাইদ জামশেদ তাবলিগের কাজে চিত্রল গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই।

১৯৬৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে তার জন্ম৷ বাবা জামশেদ আকবর খান ও মা নাফিসা আকবরের ৩ ছেলে ১ মেয়ের মাঝে তিনি ছিলেন প্রথম৷ তিনি ১ ছেলে ১ মেয়ের জনক ছিলেন৷ মেয়ের নাম আয়েশা জুনায়েদ৷

বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জামশেদের ছেলে জুনায়েদ লাহোরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করেন৷ এরপর শখের বশেই রাহেল হায়াত ও শাহজাদ হাসানের সঙ্গে ১৯৮৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশাত্মবোধক গান ‘দিল দিল পাকিস্তান’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দেশটির প্রথম পপ ব্যান্ড ‘ভাইটাল সাইন’৷ তাদের প্রথম হিট এ্যালবাম ‘দিল দিল পাকিস্তান’ এনে দেয় আকাশচুম্বী খ্যাতি। এই গানটিই ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের মোড়। পরিণত করে একজন শৌখিন সঙ্গীতশিল্পী থেকে পেশাদার শিল্পীতে।

বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে জুনায়েদ একজন পেশাদার প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন৷ সঙ্গীতটা আরম্ভ করেছিলেন অনেকটা শখের বশেই। কিন্তু এই প্রাথমিক সফলতার ফলে রাহেল ও সাজ্জাদ তাকে প্রেরণা যোগান। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় এ্যালবাম বেরোবার পর ১৯৯৫ সালে যখন ব্যান্ড ভেঙে যায়, জুনায়েদ জামশেদ তখন একক ক্যারিয়ার গড়তে আরম্ভ করেন। এতেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন৷ পাকিস্তানের প্রথম পপস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে।
জুনায়েদ জামশেদ তাবলিগের বয়ান করছেন
পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সঙ্গীত ‘কসম উস ওয়াক্ত কি’, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সঙ্গীত ‘পালাটনা ঝাপাটনা’তে শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত করে তাকেই। জনপ্রিয়তায় যখন তুঙ্গে এবং একের পর এক হিট এ্যালবাম বেরোচ্ছে, তখনই হঠাৎ সঙ্গীত ছেড়ে দেবার ঘোষণা দেন তিনি। ২০০২ সালে সংবাদ সম্মেলন করে জানান এই খবর৷ তখন সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে আসে শিল্পীবিয়োগে তুমুল ঝড়৷ অসংখ্য ভক্ত তাদের প্রিয়শিল্পীকে হারানোর খবরে হয়ে পড়ে বেদনাহত। শেষমেষ ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সঙ্গীতজগতকে বিদায় জানান তিনি৷ আসলে বিদায় জানানো বলা ঠিক হবে না, মেধাবী এই শিল্পী তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে খ্যাতি ও ভবিষ্যতের বদলে ইমানকে বেছে নেন।

এই নাটকীয় পরিবর্তনের পর এই বদলের সিদ্ধান্তগ্রহণে তার কোনো আফসোস হয়নি৷ তিনি বলতেন, ‘আমার আগের জীবনযাপনের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি এখন আর অবশিষ্ট নেই। আমার নতুন জীবন খুব সরল, পবিত্র এবং সুন্দর। আমি অনুভব করি, আপনি আপনার জীবনে আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের তরিকার ওপর আমল করেন৷ তাহলে দুনিয়াতেই আপনার জীবন জান্নাতে পরিণত হবে।’

নিজের পরিবর্তন সম্পর্কে জুনায়েদ বলেন, ‘১৯৯৭ সালের অক্টোবরে আমার এক বন্ধুর সাথে তাবলিগ জামাতে তিন দিন অতিবাহিত করি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। এরপর উপলব্ধি করি, সারাজীবন আমি একটা বিরাট ভুলের মধ্যে কাটাচ্ছি এবং আমাকে অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। নাচ-গান ছাড়াও জীবনের বড় কোন উদ্দেশ্য আছে।’

দাতব্য সংস্থার দূত হিসেবে জুনায়েদ জামশেদ
কিন্তু সঙ্গীত যার পেশা, সঙ্গীত যার নেশা, রক্তের কণায় কণায় যার সঙ্গীত তার জন্য সঙ্গীত ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। তিনি সেই দিনকে স্মরণ করে বলেন, ‘আমি খুব বিষন্ন ছিলাম কারণ সঙ্গীত ছিল আমার রক্তকনিকায়, আমার চামড়ার নিচে, যাতে আমি ছিলাম অভ্যস্থ। কিন্তু আমি শুধু আল্লাহকে খুশি করতে চেয়েছি। আমি সেই ব্যক্তি হতে চাইনি যাকে আল্লাহর কিতাবে খারাপ বলা হয়েছে।’

যে ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ‘এইতেবার’, ‘উস রাহ পার’, ‘দিল কি বাত’-এর মতো হিট এ্যালবামের শিল্পী তিনিই পরে গেয়েছেন- ‘বদরুদ্দোজা শামসুদ্দোহা’, ‘মেহবুবে ইয়াজদান’, ‘জালওয়ায়ে জানান’-এর মতো উচ্চাঙ্গের নাশিদ ইসলামি সঙ্গীত। তার মধুর কন্ঠে গাওয়া ‘এ্যায় আল্লাহ তুহি আতা তো যুদো সাখা’ সত্যিই চমৎকার। 

মুফতি তাকি উসমানির লেখা ‘এলাহি তেরি চৌকাঠ পার ভিখারি বানকে আয়াহু’ এবং ‘মুঝে যিন্দেগি মে ইয়া রব সারে বন্দেগি আতা কর’ জুনায়েদের কণ্ঠে শুনলে হৃদয়ের গভীর থেকেই এ দোয়া আসে মহান আল্লাহ যেন তার মতো আমাদেরও তার দুয়ারের ভিখারী হিসেবে কবুল করেন। 

মৃত্যু অবধি জুনায়েদ উর্দু গজল, হামদ-নাতের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের মনের স্থান লাভ করে আছেন৷ তিনি সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি নিয়মিত তাবলিগের কাজ করতেন। সঙ্গীত পরিবেশন ও বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য তিনি অনেকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। সমাজসেবার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সঙ্গে।

আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

দেখুন জুনায়েদ জামশেদের কন্ঠে ‘এলাহি তেরি চৌকাঠ পার ভিখারি বানকে আয়াহু’ গানের ভিডিও

‘ম্যারা দিল বদল দে’ গানের ভিডিও 

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএইউ/


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান