ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার অধিকার কেন জরুরি

আহমেদ স্বপন মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ২০:০৭, অক্টোবর ২, ২০১১

সাম্প্রতিক সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে অনলাইন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক ইত্যাদি নতুন ধরনের মিডিয়ার আবির্ভাবের ফলে একদিকে যেমন যোগাযোগের পথ প্রসারিত হয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন ও নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যক্তির গোপনীয়তার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো আইন নেই। বর্তমানে যেসব আইন রয়েছে এর মধ্যেই গোপনীয়তা সম্পর্কিত বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে বাংলাদেশে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অ্যাক্ট’ ২০০৬-এর অধীনে যে সাইবার আইন রয়েছে সেখানে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া ইলেকট্রনিক রেকর্ড, যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া তথ্য অধিকার আইনে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বিষয়ে কয়েকটি অনুচ্ছেদ রয়েছে।

ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা-অধিকারের মধ্যে রয়েছে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য, অসুস্থতাজনিত তথ্য, যোগাযোগ তথ্য (যেমন-- ফোন, মোবাইল নম্বর, পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র) ইত্যাদি। স্বাস্থ্যসম্পর্কিত তথ্য যেমন-- জিনগত পরীক্ষা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্যও গোপনীয়তা অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। যোগাযোগের গোপনীয়তার মধ্যে রয়েছে চিঠি, টেলিফোন, ই-মেইলসহ যোগাযোগের সব ধরনের মাধ্যমের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষা। ব্যক্তির গোপনীয়তার ক্ষেত্রে বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র বা জনসমাগম স্থান প্রভৃতি জায়গায় অন্যের অবৈধ অনুপ্রবেশকে সীমাবদ্ধ করাও ব্যক্তির গোপনীয়তার অন্তর্ভুক্ত। যেমন তল্লাশি, ভিডিও নজরদারি,পরিচয়পত্র যাচাই ইত্যাদি।
 
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন। সচেতন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনলাইনে সংবেদনশীল কোনো মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণের সময় নিজেদের পরিচয় আড়াল করে রাখেন ও নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চ্যাটরুমে অন্য নাম ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে এবং  নেটওয়ার্ক আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন, বিনোদন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনকে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান সময়ের আধুনিক মানুষ পুরোমাত্রায় এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।

মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ সাইট যেমন ফেসবুক ও টুইটার সংযুক্ত হওয়ার ফলে ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে  ব্যবহারকারীরা  কোথায় আছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য দিয়ে থাকেন। এর ফলে কর্পোরেশনগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের তথ্য সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছে। মোবাইল ফোন কোম্পানির যেসব সফটওয়্যার মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য হুমকি, সেসব প্রোগ্রামের ব্যাপারে সম্প্রতি ব্যবহারকারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বেশ উদ্বিগ্ন।

তবে গোপনীয়তার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে ক্ষুন্ন করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা তথ্য অধিকারের সাথে প্রাইভেসির কোনো বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন না। কারণ, প্রাইভেসি অধিকারের বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ের তথ্যসংক্রান্ত, যা রাষ্ট্র বা কোম্পানি দ্বারা নজরদারির আওতায় আনলে ব্যাক্তির স্বাধীনতা খর্ব হয়। অন্যদিকে তথ্য অধিকারের বিষয়টি মূলত রাষ্ট্রের ও কর্পোরেশনের বিভিন্ন গোপনীয় তথ্যকে জনগণের সামনে নিয়ে আসা, যাতে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামোর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায় এবং জনসাধারণের অধিকার রক্ষিত হয়। উল্লেখ্য,  আমাদের তথ্য অধিকার আইনেও সব তথ্য দেওয়ার বিধান নেই। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আইনেই সীমারেখা টেনে দেওয়া হয়েছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে তথ্য-অধিকার ও প্রাইভেসির মাঝে যে বিরোধ লক্ষ্য করা যায় তা নেহায়েত এক ধরনের ভুল ধারণা।

সাইবার জগতে ব্যক্তির তথ্য-গোপনীয়তা আইনি ভিত্তি পাওয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। সাইবার আইনে সুস্পষ্ট ধারা ব্যক্তির গোপনীয়তা অধিকার রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এর ফলে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লংঘনের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়ে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আজ হুমকির সম্মুখীন। এর মাধ্যমে নারীদের উত্তক্ত্য করা ও তাদের অগোচরে প্রতারণার সুযোগে অশ্লীল ছবি ও ভিডিওচিত্র ইন্টারনেট ও  মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম উদ্ধৃত করা হলো : ‘বিয়ের প্রলোভন দিয়েই স্কুলছাত্রীর ভিডিও করা হয় নগ্ন দৃশ্য’, ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুলছাত্রীর নগ্ন ভিডিও...’, ‘ধর্ষণের দৃশ্য মুঠোফোনে, বিয়ে ভাঙল মেয়েটির’ ইত্যাদি।

দুর্ভাগ্যজনক যে, সম্প্রতি বাংলাদেশে গোপনীয়তার অধিকার লংঘনকারী নানা ধরনের ঘটনা ঘটলেও, এখন পর্যন্ত ব্যক্তির তথ্য-গোপনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা অনেকটা সীমিত পর্যায়েই রয়ে গেছে এবং এটি শুধু সাইবার জগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত ব্যক্তির তথ্যগত গোপনীয়তা বিষয়ে আইনি কাঠামো প্রবর্তন করা।
 
ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ইস্যুতে যেসব ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেগুলো হলো, অপ্রত্যাশিত ই- মেইল, প্রবঞ্চনা, অনুসন্ধান ও দখল, ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ডাটাবেজ তৈরি, অযাচিত ফোন, মোবাইল মেসেজ ইত্যাদি। গোপনীয়তার সাথে সংশ্লিষ্টতা অনুযায়ী কারো বাসায় কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ, অনুসন্ধান সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সংবিধানের ধারা ৪৩ (ক) অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া, দেশের নিরাপত্তা, জনআদেশ, জননীতি ও জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে গোপনীয়তার অধিকার বাতিল হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি কখনোই অন্য এক ব্যক্তির গোপনীয়তা, পারিবারিক বিষয়, বাসস্থান বা যোগাযোগে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি আত্মসম্মান নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপও নিতে পারবে না। এরকম হস্তক্ষেপ বা আক্রমণের বিরুদ্ধে আইন সুরক্ষিত করতে প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে।

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদের (International Covenant on Civil and Political Rights) ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদ, জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার’সের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘের শিশু সুরক্ষা সনদের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

সাইবার সংস্কৃতির যুগে আমাদের থাকা চাই তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সংশ্লিষ্ট আইনগত অধিকার। ব্যক্তি কোন পর্যায়ে গিয়ে, কোথায়, কতটা তথ্য প্রদান করবেন সেক্ষেত্রে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের প্রাধান্য এবং অধিকার থাকা উচিত। ব্যক্তিগত তথ্য কখন, কোথায়, কেন, কীভাবে এবং কী পরিমাণে ব্যবহার করা বা প্রয়োগ করা হচ্ছে বা হয়েছে তা দেখার, জানার এবং জিজ্ঞাসা করার আইনি অধিকার ব্যক্তির থাকা উচিত।

তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে ব্যবসা ও মুনাফাবৃদ্ধির স্বার্থে সরকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে নজরদারি ও তথ্যের অপব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যক্তির মানবাধিকার লংঘন। তথ্য বিশেষজ্ঞরা যোগাযোগ নজরদারির সুবিধা ও অসুবিধা বিশ্লেষণ করে মানবাধিকারের জন্য নজরদারিকে মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন। কারণ নজরদারি বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করে। সমাজবিজ্ঞানীরা নজরদারিকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সরকার নতুন প্রযুক্তিকে যেমন স্বাগত জানাচ্ছে, অন্যদিকে যোগাযোগ প্রতিহত করার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করছে, যা যোগাযোগ নজরদারিকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর চাপে সরকারগুলো যোগাযোগ নজরদারির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও বৃদ্ধি করেছে। তবে এটা ব্যবহার করার আগে তা তথ্যের সংবেদনশীলতা ও প্রকৃতির ওপির কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিশ্লেষণ করা হয় না।

অনেক গণতান্ত্রিক দেশই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করছেন। নতুন যে আইনই প্রবর্তন করা হোক না কেন, সেখানে নাগরিক অধিকার ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তবে বর্তমানে ভোক্তা ও নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য আগের থেকেও বেশি কোম্পানিদের নিকট সহজলভ্য হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, অপরিচিত কোম্পানি, ব্যাংক থেকে ফোন ও মেসেজ পাওয়ার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পরিসংখ্যান আইন প্রণীত হতে যাচ্ছে। এ আইন কার্যকর হলে কারো ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না বলে জানা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, আদমশুমারির সময় কোনো ব্যক্তির সম্পদ, খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা শুমারি শেষে সংরক্ষিত থাকে। উল্লেখ্য যে, তথ্য সংগ্রহের সময় বায়োমেট্রিক তথ্যের পাশাপাশি নাগরিকদের মা-বাবা-ভাই-বোন অর্থাৎ নিকটাত্মীয় সম্পর্কেও তথ্য সন্নিবেশ করা হবে। কিন্তু এসব ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। আইনের খসড়ার ৯(৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর শাস্তির বিধান রয়েছে। ফলে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তার নামে নজরদারির কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। সম্প্রতি প্রথম আলোয় (১১ সেপ্টেম্বর ২০১১) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে ভোটার তালিকা হলনাগাদের পরীক্ষামূলক কাজ ১২ জুলাই থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নওগাঁ ও কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকায় শুরু হয়েছে। এতে ভোটারদের নতুন ফরমে চারটি ব্যক্তিগত তথ্যসহ মোট ৩১টি তথ্য দিতে হয়। ঢাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট ৩৩ হাজার ৬০০ পুরোনো ভোটারের মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন মাত্র ৯ হাজার ৮৩৯ জন জন। এর মধ্যে পিতার নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করেছেন ১ হাজার ৩৭৮ জন, মায়ের নম্বর ৬৩৮ জন এবং স্বামী-স্ত্রীর নম্বর উল্লেখ করেছেন ৫ হাজার ৩৬৬ জন। ব্যক্তিগত জন্ম-নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করেছেন ১ হাজার ৯৮২ জন। মোট ভোটারের মধ্যে সব ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করেছেন মাত্র ৯৪ জন। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোটাররা ব্যক্তিগত তথ্য দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তা রক্ষায় আমরা কতগুলো সুস্পষ্ট দাবি জানাতে চাই :

১.    সরকারি-বেসরকারি সংগঠন দ্বারা ব্যক্তিসম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রচার ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কীভাবে বজায় থাকবে তা নিশ্চিত করার ডাটা সংরক্ষণ নীতিমালা থাকতে হবে। এবং এজন্য স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রাইভেসি কমিশন গঠন করতে হবে।  
২.    সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভা-ারে মজুদ থাকা সব ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেসি পলিসিতে উল্লেখ থাকতে হবে যে, তারা ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার কোনো তথ্য প্রকাশ করবেন না। সেক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আইন থাকতে হবে।
৩.    তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার আগে কোন তথ্যটি কেন, কী উদ্দ্যেশে সংগ্রহ করা হচ্ছে তা শনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এবং স্বাভাবিক সময়ে বা বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া, ব্যক্তিগত তথ্য অবশ্যই ব্যক্তির সম্মতিতে সংগ্রহ করতে হবে।
৪.    সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে যতটুকু প্রয়োজন বলে বিবেচিত হবে, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের সীমা ঠিক ততটুকুই হতে হবে। ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্যগুলোর বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও প্রয়োগ করা যাবে না।
৫.    সংগৃহীত তথ্যগুলো যত দীর্ঘকাল ধরে সম্ভব অপ্রকাশিত রাখা ও যথাযথ নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় সংরক্ষণ করা উচিত। আর এটাও নিশ্চিত করা উচিত যে, সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্যগুলো সঠিক, সম্পূর্ণ এবং সাম্প্রতিক। যদি তথ্য সঠিক না হয় সেক্ষেত্রে সেসব তথ্য সংশোধনের ক্ষমতা ও অধিকার ব্যক্তির থাকতে হবে।
৬.    তথ্য ব্যবস্থাপনায় কোনো গোপন প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থা রাখা যাবে না বা থাকতে পারবে না। পুরো প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য উন্মুক্ত হতে হবে।
৭.    সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নজরদারি বন্ধ করাসহ ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় সার্বিকভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ভয়েস

বাংলাদেশ সময় ১৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১১


সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান