ফেসবুকের পোস্টদাতাও এখন বই লেখক!

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:২৫, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বই ছাপানো এখন বেশ সহজ। ১০-১২ হাজার টাকা হলেই বই ছাপানো যাচ্ছে। বই ছাপানোর পর শুরু হয় আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ধরে তা গছানোর ধান্দা। এটা একজন লেখকের জন্য সম্মানজনক কিছু নয়। কিন্তু তারা এটা বোঝেন না।  ফুসলিয়ে-ফাসলিয়ে বইমেলার স্টলের কাছে নিয়ে এসে বলেন, ‘একটা বই নেন’। সাহিত্য ফকির বলা যায়। 

বইমেলা এলে বই বেরোবে, স্বাভাবিক। কিন্তু ফেসবুক আসার পর বই বের করার যুদ্ধ শুরু হয়েছে যেন। দু’একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে নিজেকে লেখক দাবি করেও আর মন ভরে না। ফেসবুকের দেয়ালের পোস্টগুলো একটু টেনে লম্বা করে অথবা জোড়া দিলে বই হয়ে যাচ্ছে। 

এখন সবার একটা ফেসবুক আইডি এবং সবার একটা বই আছে। দু’একজন হাতে গোনা বাদ পড়েছেন। যেমন, আমি তাদের একজন। আমার একটা বাক্য লিখতে ১০-১২টা ভুল হয়। আমি কী লিখবো? আমার বই লোকে পড়বে কেন? ট্যানট্যানানি প্রেমের গল্প দিয়ে উপন্যাস, ঘাস লতা পাতা নিয়ে পদ্য লিখে কবিতার বই, এগুলোই তো লিখবো? এগুলো সবাই লেখে। আমার বই আলাদা কী? কেন মানুষ আমার বই-ই কিনবে? কেন এটা আলাদা ভাববে? এটার উত্তর পাইনি বলে আমি লিখতে পারি না।

আর একটা উত্তর আমি খুঁজি। সেটা হচ্ছে আমার বই কিনবে কে? বিপণনে এই প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সাহিত্যেও। লক্ষ্য পাঠক কে? আমি হলফ করে বলতে পারি, এবার বা এখন যারা বই লিখেন, তাদের একজনও জানেন না, তাদের বইয়ের পাঠক কে? কাদের লক্ষ্য করে বই লিখেছেন। এটার উত্তর তারা জানেন না। কিন্তু আমরা জানি, ফেসবুক বন্ধুরা তাদের পাঠক। তাদের জন্য বই লিখছেন কবি। তারাই লেখকের ‘বন্দুকের টার্গেট’।

ফেসবুকে ভরসা করে যারা সাহিত্য প্রসব করছেন, তারা বোধ হয় ভুল করেন। ফেসবুক কখনো লক্ষ্য বাজার হতে পারে না। অন্তত সাহিত্যে। এমনকি রাজনীতিতেও না। একজন তরুণ নেতা ঢাকার একটি সিটি করপোরেশনের বিগত নির্বাচনে তার ফেসবুক ফ্যান-ফলোয়ারকে ভোটার ভেবে জামানত খুইয়েছেন। এখন তিনি রাজনীতি ছেড়ে সাহিত্য সাধনা করছেন।

একজন অনুমানে বললো, এবারের বইমেলায় নারী লেখক বেশি। দেখা যায়, তারাও আগে থেকে ফেসবুকে পরিচিত। তাদের ফ্যান-ফলোয়ার বেশি। বন্ধু বেশি। তারা ভেবেছেন, সবাই তার প্রতিভার অনুরক্ত।  

তবে ফেসবুকে আঁতলামো বেশি করছেন পুরুষ লেখক। এটাকে কোনো অবস্থায়ই প্রচার, বিপণন, বিজ্ঞাপন বলা যাবে না। এটা একটা অরুচিকর পর্যায়ে নেমে এসেছে। কেউ কেউ নামিয়ে এনেছেন।

অমুক আমার বই ‘কাসেম মালার প্রেম’ পড়ে পোস্ট দিয়েছে। তা দেখে চোখে জল আটকাতে পারিনি। আমি আধঘণ্টা কেঁদেছি। ছোট্টজীবনে এতো ভালবাসা রাখি কোথায়? এমন লেখা অন্তত তিন জনের পোস্টে দেখেছি। আত্মপ্রচারের সুলভ কৌশল। এটা হাস্যকর পর্যায়ে চলে এসেছে। আমি মনে করি, তাদের চোখের জল আটকানো দরকার।  না হয়, চোখের পাতা আঠা লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া দরকার। তাতে যদি চক্ষুলজ্জা হয়। 

লেখক ভিক্ষাবৃত্তি করবে কেন? কেন তিনি বই ফেরি করবেন? কারণ মানহীন লেখা এবং দ্রুত মুনাফার প্রচেষ্টা।

আমি জানি আমার ফেসবুক তালিকায় সহস্র বন্ধু আছেন, যারা বই বের করেছেন। বই প্রকাশের প্রতিযোগিতা নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কেউ আমাকে মনে মনে গালিও দিতে পারেন, ‘তুই কোন হরিদাস পাল?’

আমি কেউই না। আমি একজন পাঠক। আমার লেখকরা খুবই সম্মানিত। তাদের স্থান অনেক উঁচুতে। আমার ব্যক্তিগত বন্ধু হলেও তাদের আমি নিজের চেয়ে অনেক উঁচু পর্যায়ের জ্ঞান করি। কেউ যখন তার ওজন হারায়, সে আর লেখক থাকে না। বেলুনে পরিণত হয়। লেখালেখি ঘিরে কারও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি হাসি-তামশার পর্যায়ে নেমে এলে তার লেখায় আমরা প্রভাবিত হই না, তার লেখা পড়ার যোগ্য মনে করি না। আমরা সব পাঠকই এমন। খেয়াল করে দেখবেন, আমরা টাকা দিয়ে তার বই-ই কিনি, যাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। যিনি আমাদের কাছে আঁতেল বা হালকা নন। 

ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
এইচএ/


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান