মাদারের শতবর্ষে যত আয়োজন

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৭:৪৮, আগস্ট ২৯, ২০১০

মাদার তেরেসা। তিনি বেঁচে থাকলে এ বছর তার বয়স শত বছর পূর্ণ হতো। কিন্তু তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ২৬ আগস্ট ছিল তার জন্মশতবার্ষিকী। অন্যদিকে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু দিবস। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এবার গোটা পৃথিবী তাকে স্মরণ করছে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি কর্মসূচি আর আনুষ্ঠানিকতা মধ্য দিয়ে।

মাতৃভূমির আয়োজন

মাদার তেরেসার জন্মভূমি মেসিডোনিয়ায় ব্যাপকভাবে তার জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে। ২৬ আগস্ট তার শততম জন্মদিন সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। ওই দিন হাজার হাজার মাদারভক্ত বিভিন্ন ক্যাথেড্রালে জড়ো হয়ে প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। এছাড়া প্রতিটি ক্যাথিড্রালে কয়েক দিনব্যাপী প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। মাদারের জন্মস্থান স্কোপজির পার্লামেন্টে তাকে স্মরণ করা হয়। স্কোপজি পার্লামেন্ট থেকে তাকে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত কন্যা হিসেবে শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়া তার সম্মানে সেখানে বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে।  আলবেনিয়া কর্তৃপক্ষ মাদার-স্মরণে বিশেষ স্মারক স্বর্ণমুদ্রা প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

সবচে বেশি ভারতে

ভারত সরকার ২০১০-১১ সালজুড়ে মাদার তেরেসার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এ উপলক্ষে ভারতজুড়ে চলছে নানা আয়োজন।

বিশেষ ট্রেন

মাদার তেরেসার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতে চালু করা হয়েছে বিশেষ ট্রেন। বিখ্যাত নীল পেড়ে সাদা শাড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ট্রেনটি সাজানো হয়েছে নীল আর সাদা রঙে। ভেতরে বাইরে সাজানো হয়েছে মাদার তেরেসার ছবি আর বাণী দিয়ে। ট্রেনটি আগামী ছয় মাস পুরো ভারত ভ্রমণ করবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে উদ্বোধন করেন ভারতের রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মাদার তেরেসার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে মানুষকে জানাতেই এই রেল সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

আলোকচিত্র প্রদর্শনী

মাদার তেরেসার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দিল্লিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান বিশপস কাউন্সিল, ইউনেস্কা এবং মাদার তেরেসা মিশনারিজ অব চ্যারিটির আয়োজনে ওই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৪০টি সাদাকালো ছবি। ছবিগুলো ফুটিয়ে তুলেছে মাদারের কর্মমুখর জীবন। এছাড়া প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে ভারতের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাইয়ের তোলা মাদার তেরেসার ছবি। ২৩ আগস্ট ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শায়লা দিক্ষিত। দিল্লিতে এই প্রদর্শনী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর চলবে কলকাতায়, ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।

বিশেষ মুদ্রা

ভারতে দুটি বিশেষ মুদ্রা বাজারে ছাড়া হয়েছে মাদারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে। অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ১০০ ও ৫ রুপি মূল্যমানের ওই দুটি মুদ্রার উদ্বোধন করেন।

জীবনীগ্রন্থ

নতুন না হলেও মাদার তেরেসার একটি জীবনীগ্রন্থের নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। ২৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল ওই জীবনীগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। বিভিন্ন ভাষায় এটির অনুবাদ করা হয়েছে। লেখক নবীন চাওলা একজন আমলা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্তরের শিল্পী ও সাহিত্যিক। মিশনারিজ অব চ্যারিটির নানরা অনুষ্ঠানে প্রার্থনার আয়োজন করেন।     

কমিক বই

ছোটদের জন্য মাদার তেরেসার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে একটি কমিক বই। বইটির নাম ‘আমার চিত্রকথা’। বইটিতে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মাদারের জীবন ও কর্ম। এরই মধ্যে বইটির ২৫ হাজার কপি বাজারে ছাড়া হয়েছে। ৩২ পৃষ্ঠার এই বইয়ে ছবি আর কথার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মাদার তেরেসার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
সালমান খানের পোর্ট্রটে বলিউডের ‘ব্যাড বয়’ হলেও সালমানের একটি বিশেষ গুণ আছে। তিনি চিত্রশিল্পী। মাদার তেরেসার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এঁকেছেন মাদারের পোর্ট্রটে। মাদার তেরেসার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তিনি চিত্রকর্মটি এঁকেছেন।  সম্প্রতি তার টুইটারে এটি পোস্ট করেছন।

চলচ্চিত্র উৎসব

নোবেলজয়ী মাদার তেরেসার জন্মশতবর্ষ উপলে কলকাতায় শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র উৎসব। ২৬ আগস্ট থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে। ভারতসহ সাতটি দেশে মাদার তেরেসাকে নিয়ে তৈরি ১৪টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে উৎসবে। উৎসবের ছবিগুলো হলো: ‘দ্য মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ ও ‘রেভল্যুশন ইন কলকাতা’ (ফ্রান্স); যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাদার তেরেসা ইন দ্য নেম অব গড’স পুওর’, ‘মাদার তেরেসা’, ‘প্রেশাস লাভ’, ‘সিয়িং দ্য ফেস অব জেসাস’ এবং ‘দ্য লিগ্যাসি; ‘মাদ্রে তেরেসা’ (ইতালি), ‘মাদার তেরেসা অ্যান্ড হার ওয়ার্ল্ড’ (জাপান), ‘দ্য ফিফথ ওয়ার্ল্ড’ (স্পেন) এবং ‘দ্য মেকিং অব এ সেন্ট’ (কানাডা)। আর ভারতের ‘ফ্রম সেন্ট টু সেন্টহুড’, ‘মাদার তেরেসা: দ্য লিভিং লিজেন্ড ও মাই কর্মা’।

বিবিসির অনীহা

মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হচ্ছে না ১৯৬৯ সালে তাকে নিয়ে বিবিসির প্রথম প্রামাণ্যচিত্র। উৎসব কর্তৃপক্ষ বলেছেন, বিবিসি তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তিনবার লিখিত অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছেন উৎসবের পরিচালক সুনীল লুকাস।

ডিসকভারি চ্যানেলের তথ্যচিত্র

শততম জন্মবার্ষিকী উপলে মাদারের তেরেসার জীবনী নিয়ে নতুন একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে ডিসকভারি চ্যানেল। ‘মাদার তেরেসা-সেন্ট অব ডার্কনেস’ শিরোনামের এক ঘণ্টার এই তথ্যচিত্রে তার জীবনের নানা স্মরণীয় মুহূর্তের দুর্লভ ভিডিও ফুটেজ এবং তার বক্তৃতার মূল রেকর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। চ্যানেলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহুল জাহরি তথ্যচিত্রটি সম্পর্কে বলেন, মাদার তেরেসার জীবন আমাদের সবার জন্যই অনুসরণীয়। মানবহিতৈষী এই নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমাদের এই প্রয়াস।

নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ

নিউ ইয়র্ক শহরের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ এলাকা টাইম স্কয়ার। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য এই স্কয়ার বিখ্যাত। আর তাই মাদার তেরেসার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তার প্রতি সম্মান জানাতে টাইম স্কয়ার সেজেছিল সাদা আর নীল রঙে। স্কয়ারের সব বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনও ছিল নীল-সাদা রঙের। হাজার হাজার তেরেসাভক্ত টাইম স্কয়ারে ভিড় করেন।

অন্যদিকে তেরেসার সম্মানে নীল-সাদা আলোকসজ্জা না করার জন্য তেরেসাভক্তরা অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। বড়দিন, ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের দিন বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে আলোকসজ্জা করে থাকে। মাদার তেরেসার জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিল্ডিং কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা আলোকসজ্জা না করায় ভক্তরা ওই বিক্ষোভ করেন। অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ ওই রাতে বিল্ডিংয়ে লাল আলো জ্বালিয়ে রাখে। এটা ধর্মীয় কোনো বিষয় নয় বলেই আলোকসজ্জা করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তেরেসাভক্তদের দাবি মাদার তেরেসা ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নন। অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মালকিনের উদ্দেশে তাই তারা ‘আমাদের মাফ করো মাদার তেরেসা’; ‘মালকিন তুমি খুবই ছোট মনের মানুষ।’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এ সময় তারা চিৎকার করে বলেন, ‘মালকিন, আমরা তোমার ওই আলো ছাড়াই মাদার তেরেসাকে সম্মান জানাব। আমরা তোমার আলো চাই না। মাদার তেরেসাই আমাদের আলো।’ নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলর, স্টেট সিনেটরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মালকিনের এ কাজের নিন্দা জানিয়েছেন।  

এর বাইরেও পৃথিবীর নানা প্রান্তে বছরজুড়েই চলবে নানা আয়োজন। কারণ, এমন ত্যাগী ব্যক্তিত্ব শতবর্ষে খুব কমই জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯১৩, আগস্ট ২৯, ২০১০


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান