
‘সুস্থ সঙ্গীতের বিকাশ’ এই একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০০৪ সালে শুরু হয়েছিল ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’। গত ৬ বছরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই অ্যাওয়ার্ডের ৬টি আয়োজন। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আয়োজনের সপ্তম অনুষ্ঠান। আগামী ২৫ নভেম্বর যমুনার পাড়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘৭ম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’।
বাংলাদেশের গানের জগতের এক ক্রান্তিকালে দেশের সুস্থ ধারার সঙ্গীতকে য় এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে সিটিসেল এবং চ্যানেল আই-এর যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্’। সঙ্গীত ভুবনের এই উদ্যোগ সাফল্যের ৬টি বছর পার করে এগিয়ে যাচ্ছে ৭ম বারের আয়োজনের দিকে। আয়োজনের দিক দিয়ে ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্’-এ, প্রতিবারই থাকে কিছু না কিছু চমক। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। ৭ম বারের এই আয়োজন এবারে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখছে।
স্বাধীনতার ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এবারের আয়োজনে থাকবে কিছু বিশেষ অন্তর্ভূক্তি। এবারের সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্-এর মূল থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি। গভীর শ্রদ্ধাভরে এবারের মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস নিবেদিত হবে মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক সঙ্গীত তারকাদের অবদানকে ঘিরে।
‘৭ম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’ সামনে রেখে ২৩ নভেম্বর চ্যানেল আই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন। সিটিসেল-এর পক্ষে এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহ্বুব চৌধুরী, হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস ও পাবলিক রিলেশন্স তাসলিম আহমেদ, চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
এই উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, এবার আরো অনেক বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই এ্যাওয়ার্ড। হতে পারে এটি এশিয়া মহাদেশের একমাত্র বড় সঙ্গীত বিষয়ক আয়োজন।
মেহ্বুব চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, এই অ্যাওয়ার্ড বর্তমানে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে উৎসবে পরিণত হয়েছে। অ্যাওয়ার্ডটি এবার যমুনার তীরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণ, এই নদী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রেখেছে। অথচ এই নদী মাতৃর্ক বাংলাদেশের নদীগুলো আজ হারাতে বসেছে তার অস্তিত্ব। আমরা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘নদী বাঁচাও’ আন্দোলনকে আরো উৎসাহিত করাতে চাই।
শাইখ সিরাজ বলেন ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’ সবার কাছে একটি সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত নাম। স্বাধীনতার ৪০ বছরে সঙ্গীতকে নিয়ে আমরা অনেক গবেষণা করে এবারের সঙ্গীত মনোনীতদের নির্বাচিত করা হয়েছে। শুধু যমুনাতেই নয়, অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হবে যমানুর তীরের আশপাশের নানা জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এসব করা হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে নদীতে বা নদীর তীরে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে ঠিক সেই রকম দৃশ্য দেখবেন যমুনাবাসি এবং আগত দর্শকবৃন্দ।
অ্যাওয়ার্ডের সার্বিকদিক ব্যাখ্যা করেন তসলিম আহমেদ। ৭ম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্-এ, প্রথম অন্তভূক্ত হতে যাচ্ছে বিদেশী শিল্পীরা। এশিয়া দেশ ভারত, ভূটান, নেপাল ও শ্রীলংকার সঙ্গীতশিল্পীরা আসবেন এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে। আগামীতে এ এ্যাওয়ার্ডটি এশিয়ার কোনো দেশেও অনুষ্ঠিত হতে পারে আমরা আশা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দেশের সঙ্গীত জগতের খ্যাতনামা শিল্পী সুধীন দাস, মোঃ খুরশীদ আলম, শাম্মী আখতার, আকরামুল হক, রিজিয়া পারভীন, কিরণ চন্দ্র রায়, অনিল কুমার সাহা, গীতিকার কবির বকুল প্রমুখ।
এই অ্যাওয়ার্ডটিকে ঘিরে তীরে একটি মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে অংশ নেবেন দেশের কৃষ্টিকালচার, ফুটে উঠবে গ্রামের মানুষের সহজসরল জীবনচিত্র। মেলায় থাকবে সাপের খেলা, লাঠিখেলা, বিভিন্ন দেশীয় জিনিসপত্রের স্টল ইত্যাদি। মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। ২৫ নভেম্বর, বিকাল ৪টায় শুরু হবে ‘৭ম সিটিসেল- চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্-এর মূল অনুষ্ঠান। পুরস্কার প্রদানের মধ্যে থাকবে গানের পরিবেশনা। এর মধ্যে থাকবে দেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, চর্যাপদের গান, লোক সঙ্গীত, পপ গান, চলচিত্রের গান, ব্যান্ডের গান এবং আরও অনেক বিশেষ পরিবেশনা।
সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়াডের্র ক্যাটাগরিগুলো হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, লোকগীতি, আধুনিক গান, উচ্চাঙ্গসঙ্গীত, ছায়াছবির গান, ব্যান্ডসঙ্গীত, আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড, গীতিকার, নবাগত গায়ক/ গায়িকা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কাভার ডিজাইন, মিউজিক ডিরেক্টর, মিউজিক ভিডিও ও আজীবন সম্মাননাসহ মোট ১৬টি ক্যাটাগরি। এছাড়াও ১৫টি ক্যাটাগরিতে এসএমএস ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচিতকে প্রদান করা হবে পপুলার অ্যাওয়ার্ডস্।
অন্যবারের মতো এবারও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্ মোট তিনটি ধাপে বিভক্ত ছিল: প্রাথমিক পর্বের বাছাই, দ্বিতীয় পর্বের বাছাই এবং চূড়ান্ত বাছাই। প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য শিল্পীদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং অডিও ক্যাসেট, অডিও সিডি ও ভিসিডি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ২০১০ সালে রিলিজ করা গ্রহণযোগ্য অ্যালবাম চেয়ে চিঠি পাঠানোর মধ্য দিয়ে অ্যাওয়ার্ডস্ এর মূল কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তেজগাঁও-এ অবস্থিত চ্যানেল আই-এর কার্যালয়ে ৭ম সিটিসেল- চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস্-এর অ্যালবাম জমা নেয়া হয়েছে ১২ জুলাই, ২০১১ থেকে ১২ আগস্ট, ০১১ পর্যন্ত। এছাড়াও, এবারে দেশের ৬টি বিভাগে সিটিসেল-এর প্রধান কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোতে নির্ধারিত ড্রপ বক্সে অ্যালবাম জমা দেয়া হয়েছে। এবছরের প্রতিযোগিতায় প্রায় ২০,০০০ গান গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পীদের কাছ থেকে। বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে এবারের বিচারকদের মধ্যে ছিলেন বশির আহমেদ, আব্দুল জব্বার, ইমন সাহা, সুবীর নন্দী, সুধীন দাস, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, ফাহমিদা খাতুন সহ আরও অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ।
বাংলাদেশ সময় ১৭১০, নভেম্বর ২০১১