পাঙ্গাস মাছের মচমচে আচার-পাউডার উদ্ভাবন

বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৯:২৬, এপ্রিল ৯, ২০১৯

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): গরীবের আমিষ নামে পরিচিত পাঙ্গাস মাছ। বাজারে অন্য যেকোনো মাছের তুলনায় পাঙ্গাসের দাম কম থাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো তাদের আমিষের চাহিদা এ মাছ দিয়ে পূরণ করে থাকে। কিন্তু মাছের খাদ্যসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাঙ্গাস চাষিরা লোকসান গুনছেন। অনেকে পাঙ্গাস মাছ চাষ ছেড়েই দিয়েছেন। 

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পাঙ্গাস মাছ থেকে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন করা প্রয়োজন। আর পাঙ্গাস থেকে নতুন পণ্য উৎপাদন নিয়ে দীর্ঘ দুই বছর গবেষণা করে পাঙ্গাসের দু’টি মজাদার খাবার পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম ও তার গবেষক দল।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় মিঠা পানির মাছের আহরণ ক্ষতি প্রশমন ও মূল্য সংযোজন প্রকল্পের আওতায় আমরা দুই বছর ধরে গবেষণা করছি। এ গবেষণার হাত ধরেই পাঙ্গাস মাছের সব পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে স্বল্প খরচে লোভনীয় স্বাদ ও গন্ধের মচমচে পাঙ্গেসের আচার ও পাউডার উদ্ভাবন করেছি।
পাঙ্গাস মাছের লোভনীয় আচার-পাউডার
পাঙ্গাসের আচার: সাধারণ রান্নার যন্ত্রপাতি ও তৈজসপত্র দিয়েই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রেখে এ মচমচে পাঙ্গাস আচার তৈরি করা যাবে। আচারটি শুকনো ও মচমচে হওয়ায় প্রায় এক বছরের অধিক সময় কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। আচারটিতে শতকরা ৩৭ শতাংশ আমিষ, ২৮ শতাংশ স্নেহ, ১৬ শতাংশ মিনারেল ও ১১ শতাংশ ফাইবার পাওয়া যাবে।

‘আচারে পাঙ্গাসের তেল অক্ষুণ্ণ থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে। এক কেজি পাঙ্গাস মাছ থেকে ৩৫০ গ্রাম আচার পাওয়া যাবে। যা উৎপাদন করতে সর্বমোট ১২০-১৫০ টাকা খরচ পড়বে। যা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রয় করা সম্ভব হবে।’ 
পাঙ্গাসের পাউডার: পাঙ্গাস একটি চর্বিযুক্ত মাছ। এর চর্বি ও আমিষকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ উপযোগী করে পাউডার তৈরি করা হয়েছে। পাঙ্গাসের পাউডারও প্রায় এক বছরের অধিক সময় ধরে কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। পাঙ্গাসের পাউডার দিয়ে আচার, ভর্তা, স্যুপ, নুডুলস, তরকারি খিচুরি ইত্যাদি বানানো যায়। এছাড়া পাউডার দুধ বা নবজাতকের খাবার, বেকারি পণ্য, বিস্কুট চিপস্ বা অন্যান্য যে কোন খাদ্য দ্রব্যে মিশিয়ে পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়। 

‘এক কেজি পাঙ্গাস থেকে ২০০-২৫০ গ্রাম পাউডার তৈরি করা সম্ভব। মাত্র একটা ৫০ পয়সা মূল্যের ৩ গ্রাম পাউডার দিয়ে এক জনের খাওয়ার উপযোগী ২৫০ মিলি স্যুপ বা ৮০ গ্রাম ওজনের এক বাটি নুডুলস তৈরি করা সম্ভব। পাঙ্গাসের পাউডারে ৪৫ শতাংশ আমিষ, ৩২ শতাংশ চর্বি, এক শতাংশ মিনারেল ও ৯ শতাংশ ফাইবার পাওয়া যাবে।’

গবেষক ড. নওশাদ আলম বলেন, দেশে নানা কারণে পাঙ্গাস চাষ পদ্ধতি উন্নত ও আধুনিক করা যাচ্ছে না। ফলে সাদা ফিলেট তেরি করে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে অন্যান্য মাছের উৎপাদন ও যোগান বেড়ে যাওয়ায় পাঙ্গাসের বাজার মূল্য পড়ে গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাঙ্গাসের উৎপাদন ছিল ৭ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে উৎপাদন কমে ৩ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। 

তিনি আরও বলেন, উদ্ভাবিত পণ্য দু’টি সম্পর্কে পাঙ্গাস চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে করে তারা আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হবেন, তেমনি আরও অনেকই পাঙ্গাস চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। 

উদ্ভাবিত পাঙ্গাস মাছের পণ্য দু’টি খুব শিগগিরই বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন ধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা,  এপ্রিল ০৯, ২০১৯
জিপি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান