নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:৪৫, মে ১৭, ২০১৯
নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি। ছবি: ডি এইচ বাদল

নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: প্রিয় ফুল বলে গায়েহলুদে কৃষ্ণচূড়ার গয়না পরার শখ তার। তাইতো ফুলটি নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ্জোহরার। তবে শুধু সে নয়, রাজপথের দু’ধারে রক্তিম উদ্ভাসের এই ফুল নিয়ে নগরীর সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক-আহ্লাদটাও এখন বেশি। ধূসর নগরের ভাঁজে ভাঁজে এখন ডানা মেলেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া।

নগরীর রাজপথের দু'পাশে জারুল, সোনালু, কণকচূড়া, রাঁধাচূড়া ফুলের দেখা মেলে গ্রীষ্ম এলেই। তবে কংক্রিটের ছাই রঙের ঢাকাকে রূপসী করে তুলতে কৃষ্ণচূড়ার অবদানই সবচেয়ে দৃশ্যমান বলে মনে করেন অনেকে। এই ফুল নিয়ে তাই নাগরিক-আহ্লাদটাও বেশি। আর দিন পনেরো ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পাতা খুললেও চোখে পড়ছে এই আগুনরঙা ছবি।নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি। ছবি: ডি এইচ বাদলনিজের প্রিয় ফুল নিয়ে বলতে গিয়ে ফাতেমাতুজ্জোহরা বলেন, কৃষ্ণচূড়া শুধু ডালেই নয়, কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রং শোভা পায় গাছের নিচেও। ঝরা ফুলের সে সৌন্দর্য দেখার আসল সময় ভোরবেলা। তবে সারাটা দিনও এই ফুল তার রক্তিম ভালোবাসায় রাঙিয়ে রাখে পুরো শহরকে। তাইতো সেদিকে তাকালেই মন ভরে ওঠে।এই আবেগ-ভালোবাসার কৃষ্ণচূড়া কিন্তু বাংলা মুলুকে এসেছে মাত্র ৩শ বছর আগে। আর কৃষ্ণচূড়ার ‘কৃষ্ণচূড়া’ হয়ে ওঠার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নিসর্গ লেখক আমিরুল আলম খানের 'পারুলের সন্ধানে' বইটিতে। তার মতে, '১৭ শতকের এক রাজকবি দেবতা কৃষ্ণের মাথার চূড়ার বর্ণনা রক্তবর্ণ এই ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কোনো কাব্যরসিক হয়তো সেই বর্ণনা থেকেই এই ফুলের নাম রেখেছেন কৃষ্ণচূড়া।'নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি। ছবি: ডি এইচ বাদলএখন ঢাকার যেকোনো এলাকায় গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে-বাঁয়ে তাকালে কৃষ্ণচূড়া নজরে পড়বেই। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে রীতিমতো আয়োজন করেও কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করেন অনেকে। তাইতো ছুটির দিন কিংবা একটু অবসরে অনেকে ছুটে যান কৃষ্ণচূড়ার তলে, গাছতলা ছেয়ে থাকা ঝরা ফুল আর কচি সবুজ পাতার ঐশ্বর্যে।নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি। ছবি: ডি এইচ বাদল
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরে ঘুরে কৃষ্ণচূড়া দেখছিলেন সাদাত হোসেন। কথা হলে সঙ্গে থাকা তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বাংলানিউজকে বলেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল! নামটা মনে হলেই হৃদয়ের এক কোণ থেকে যেন গেয়ে ওঠে কবি কাজী নজরুল ইসলামের মনোমুগ্ধকর গান ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে, কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন জানান দেয় তার সৌন্দর্যের বার্তা। সে বার্তায় আবেগ থাকে, ভালোবাসা থাকে, আর থাকে প্রেম। তাইতো প্রখর রৌদ্রেও নীল আকাশের ক্যানভাসে গাঢ় লাল রং জ্বলতে থাকে।রূপ-রং ও গন্ধের যূথবদ্ধতায় গ্রীষ্ম নিসর্গের ফুলেল এ আয়োজন নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য ভালোবাসার এক অপার প্রাপ্তি। প্রকৃতির রুক্ষতা ও জীবনের যান্ত্রিকতা ভুলিয়ে তা আমাদের এনে দেয় অপরিমেয় স্বস্তি, অনাবিল প্রশান্তি। দীর্ঘ, প্রসারিত গাছে ফুলের প্রাচুর্যে লাল হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস।নগরীজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভার মাতামাতি। ছবি: ডি এইচ বাদলনিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার মতে, ‘বসন্তে কৃষ্ণচূড়া ফোটে না। আর ফুলের বাজারে কিন্তু কৃষ্ণচূড়া বিকোয় না।’ তবে এই ফুল বাজারে না বিকোলেও বাঙালির হৃদয় আর মননে যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
এইচএমএস/এএ


সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান