মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় ব্যবহারিক শিষ্টাচার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:৫৩, জুন ২১, ২০১৯
বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক মসজিদ ‘শেখ জায়েদ মসজিদ’। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক মসজিদ ‘শেখ জায়েদ মসজিদ’। ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ মুসলমানদের ইবদাতের জন্য নির্ধারিত। তবে এটি অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ের মতো নিছক কোনো উপাসনাগৃহ নয়। মসজিদের ব্যবহারিক ও ঐতিহাসিকভাবে নিজস্বতা, ভিন্নতা ও স্বকিয়তা রয়েছে।

► অজুসহ পাকপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নত। নাপাক অবস্থায় অথবা পেঁয়াজ-রসুনের মতো দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা উচিত নয়। বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, তামাক ও মাদকজাতদ্রব্য খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা মাকরুহ।

► মসজিদে ধীর-স্থিরতার সঙ্গে গমন করা উচিত। রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তাড়াহুড়া করে দৌড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সঙ্গে আসবে। যতটুকু পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৬০৯)

► মসজিদে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন অসহনীয় ও অমার্জনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে নামাজের সময় মোবাইলের রিংটোনের কারণে ইবাদতের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। অনেক সময় তা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই মসজিদে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন বন্ধ করা উচিত। ভুলবশত যদি মোবাইল খোলা থাকে আর নামাজরত অবস্থায় রিংটোন বেজে উঠে, তাহলে এক হাত ব্যবহার করে বা নিজ নামাজ ছেড়ে দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে।

বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক মসজিদ ‘শেখ জায়েদ মসজিদ’র একাংশের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

► মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া এবং মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া পড়া সুন্নত। মসজিদে প্রবেশর দোয়া হলো—‘বিসমিল্লা-হি ওসসালাতু ওসসালাম-মু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মাফ্তাহলি আবওয়া-বা রহমাতিক’। আর মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া হচ্ছে, ‘বিসমিল্লা-হি ওস্সালাতু ওয়াস সালাম-মু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদ্বলিক, আল্লা-হুম্মা আ’সিমনি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম।’

► মসজিদে সর্বদা ইতিকাফের নিয়তে প্রবেশ করে মসজিদের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা উচিত।

► মসজিদে অতিরিক্ত শব্দ করে কোনো কাজ করা ঠিক নয়। দরজা-জানালা ব্যবহারের সময়, হাঁটা-চলার সময় অতিরিক্ত শব্দ যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। হট্টগোল করা বা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা যাবে না। পাশের লোকের অসুবিধা হয় এমন উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করাও জায়েজ নেই। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা উচিত, সে কি বলছে। তোমরা কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের ওপর শব্দ করো না।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৪৪৮০) উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা কতটা অমার্জনীয় বলাই বাহুল্য।

► মসজিদে আগেভাগে গিয়ে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের মাঝে কী ফজিলত রয়েছে, আর লটারি ছাড়া সেটি পাওয়া সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মাঝে কী ফজিলত রয়েছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগে আসত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯০)

► ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছাড়া কারো জন্য জায়নামাজজাতীয় কিছু দিয়ে কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা সম্পূর্ণ অন্যায়। মসজিদের সীমানায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সবার উচিত নিজেদের আল্লাহর গোলাম হিসেবে সমর্পণে ব্রতী হওয়া এবং সব ভেদাভেদ, আমিত্ব ও অহমিকা ভুলে একই কাতারে দণ্ডায়মান হওয়া। আর ইমামের দুই দিক থেকে সমান্তরালে কাতার পূরণ করা।

ইরানের নাসের আল-মালিক মসজিদের ভেতরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

► মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ছাড়া বসবে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামাজ আদায় না করে বসবে না।’ (বুখারি, হাদিস নং: ১১১০)

► জামাতে নামাজ আদায়ের সময় কাতার সোজা করে দাঁড়ানো ওয়াজিব। কাতারে জায়গা ফাঁকা রাখা হলে সেখানে শয়তান এসে অবস্থান নেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধের সঙ্গে কাঁধ মেলাও, ফাঁক বন্ধ করো, শয়তানের জন্য জায়গা ফাঁকা রেখো না। আর যে ব্যক্তি কাতার মেলায়, আল্লাহ তাকে নিজের রহমতের সঙ্গে মেলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে দূরত্ব বজায় রাখে, আল্লাহ তাকে নিজের রহমত থেকেও দূরে রাখবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৬৬৬)

► মুক্তাদির উচিত সর্বদা ইমামের অনুসরণ করা, ইমামের আগে কোনো আমল করা তার জন্য বৈধ নয়। আবার ইমাম থেকে অনেক দেরিতেও করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে ইমামের আগে মাথা ওঠায় তার কী ভয় হয় না যে আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৯৬১)

► মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজা বা ঘোষণা দেওয়া নিষিদ্ধ। তেমনি মসজিদের মাইকে কারো মৃত্যু সংবাদ প্রচার করাও শরিয়ত সম্মত নয়।

► মসজিদের জিনিসপত্র নিজস্ব কাজে বা মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।

► মসজিদ সর্বদা ধুয়ে-মুছে পূতপবিত্র রাখা উচিত।

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

ইসলাম ও জীবনঘনিষ্ঠ যেকোনো বিষয়ে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৯
এমএমইউ


সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান