করোনা রোগীর চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর অপ্রতুল, বাড়েনি আইসিইউ

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১১:০০, মে ১১, ২০২০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: করোনা ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করার পর রোগী ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না। এসময় দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গও অচল হয়ে যেতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভেন্টিলেটর।

চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা অপ্রতুল। পাশাপাশি বাড়েনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা সংখ্যা। 

গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির এক নির্দেশনায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা থাকা ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল বাছাই করে দেন। তবে বিভিন্ন অজুহাতে অধিকাংশ হাসপাতালের মালিক সেই নির্দেশনা মানতে গড়িমসি করছেন। ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভেন্টিলেশন সুবিধাসহ ২০টি আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করার কাজ চলছে।

ইতোমধ্যে করোনা রোগী শনাক্তের পর সংক্রমণের শংকায় তালিকায় তৃতীয় ধাপে থাকা মেহেদিবাগের ন্যাশনাল হাসপাতাল ও চতুর্থ ধাপে থাকা ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে এই দুই হাসপাতালের আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর করোনা রোগীদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এদিকে তালিকায় প্রথম ধাপে থাকা জিইসি মোড়ের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও খুলশীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে এখনও করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা না হলেও পাঁচলাইশের পার্ক ভিউ হাসপাতালে সম্প্রতি রোগী সনাক্তের পর তাদেরকে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। যদিও এই হাসপাতালটিতে ৫টি ভেন্টিলেটরসহ ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে বলে জানা গেছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৫৮টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড ও ৮ শয্যার পেডিয়াট্রিক (শিশু) আইসিইউ থাকলেও এখনও সেখানে করোনার রোগী ভর্তি করা হয়নি।

আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন সুবিধা সম্বলিত দ্বিতীয় ধাপে থাকা কাতালগঞ্জের সার্জিস্কোপ হাসপাতাল ইউনিট-২, পাঁচলাইশের ডেল্টা হাসপাতাল ও সিএসটিসি হাসপাতাল, তৃতীয় ধাপে থাকা ওআর নিজাম রোডের সিএসসিআর হাসপাতাল ও এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতাল, চতুর্থ ধাপে থাকা ওআর নিজাম রোডের রয়েল হাসপাতাল ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালও এখনও ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি।

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ফৌজদারহাটে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে আছে ৫টি ভেন্টিলেটর ও ১০ শয্যার আইসিইউ। যদি রোগী বাড়ে তাহলে সেখানে আরও ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক আইসিইউ সুবিধা রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১২টি আইসিইউ শয্যা ও ভেন্টিলেশন সুবিধা চালু রয়েছে। তবে সেখানে এখনও করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা না হলেও ১০টি আইসিইউ শয্যা ও ভেন্টিলেশন সুবিধা সম্বলিত আলাদা ব্লক প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সরকারি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সম্প্রতি ১০টি ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ সেবা চালু হয়েছে। হাসপাতালটি এখন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। অপরদিকে এই হাসপাতালে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ কোটি টাকায় কেনা ভেন্টিলেটর, মনিটরসহ ৮টি আইসিইউ শয্যা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্থাপন করা যায়নি। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য সচিবের কাছে চিঠি লিখে এসব বেড স্থাপনের অনুমতি চেয়ে অবশেষে তা মিলেছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া ১০টি ভেন্টিলেটর, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি মনিটরসহ অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভেন্টিলেটর, মনিটরসহ আরও ৮টি আইসিইউ শয্যা চালুর কাজ প্রক্রিয়াধীন। এক্ষেত্রে জনবলের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে, করোনা আক্রান্ত মোট রোগীর ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ সাধারণ চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে ওঠে। বাকি ১৮ থেকে ২০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা নিতে হয় হাসপাতালে। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রোগীর জন্য প্রয়োজন হতে পারে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস সুবিধা বা ভেন্টিলেটর। আর জটিল ৫ শতাংশের জন্য লাগতে পারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ।

শ্বাসনালীতে নল না ঢুকিয়েই অক্সিজেন সরবরাহের এ ভেন্টিলেটরের একেকটির দাম আড়াই থেকে ৫ লাখ টাকা। হাসপাতালগুলোতে অপ্রতুল ভেন্টিলেটরের বিকল্প হিসেবে এক্ষেত্রে র‌্যাবের বিশুদ্ধ অক্সিজেন তৈরির ‘কনসেনট্রেটর’ আলোচনায় এসেছে। যন্ত্রটির মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় ঘরে থেকেও এটির সাহায্যে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, র‌্যাবের কাছে থাকা ৫০টি ‘কনসেনট্রেটর’ সারাদেশের ব্যাটালিয়নগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। এই যন্ত্রে উৎপাদিত অক্সিজেনের ৯৫ শতাংশই বিশুদ্ধ। মিনিটে ৫ লিটার অক্সিজেন প্রস্তুত করা যায় একটি যন্ত্র দিয়ে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের গঠিত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫০-৬০টির মতো আইসিইউ শয্যা আছে। এসব হাসপাতালে ভেন্টিলেটর আছে ৩০-৩৫টি। আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা থাকা ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের কোনটিই এখন করোনা আক্রান্তদের কাজে আসছে না।

তিনি বলেন, এসব বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি রাখতে চূড়ান্ত অনীহা ও অস্বীকৃতি প্রকাশ করে। যার ফলে আইসিইউ সেবা না পেয়ে ৩ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা মিলে ৪ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষ সংস্কার ও চুনকাম করিয়ে একটি কক্ষে কয়েকটি ক্লিনিকের ধার করা দীর্ঘদিন ব্যবহৃত পুরনো ৮টি ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ শয্যা, ২৫টি পুরনো সাধারণ শয্যা বসিয়ে তা পরিচালনার জন্য তদবির করেছে এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি পরিচালনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অধিকাংশ রোগীকে ভেন্টিলেশনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পর চমেক হাসপাতালের একটি ব্লক এবং পাশাপাশি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে রোগীদের আইসিইউতে ভেন্টিলেশন সুবিধা দেওয়া যাবে। যদি রোগী আরও বাড়ে, তাহলে তালিকায় থাকা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কথা ভাবা যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র‌্যাবের ব্যবহৃত ‘কনসেনট্রেটর’ এখনও এখানকার হাসপাতালগুলোতে ব্যবহারের সরকারি নির্দেশনা আসেনি। তবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন উৎপাদনের এই যন্ত্র ব্যবহার করে রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২০
এসি/টিসি


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান