দোকান হারিয়ে অসহায় ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:০৩, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
ছবি: ডি এইচ বাদল

ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: রাজধানী গুলিস্তানের ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেট-২ এর অবৈধ দোকান উচ্ছেদের ফলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। 

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) উচ্ছেদকৃত দোকানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ অসহায়ত্বের কথা জানা যায়।

ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশা বহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে গত ৮ ডিসেম্বর তা ভাঙতে অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

ব্যবসায়ীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসার সিজন মূলত, ঈদ-পূজা এবং শীতকালে। এবার ঈদের সময়ে করোনার জন্য একেবারেই ব্যবসা হয়নি। অপরদিকে মার্কেটের দোকান উচ্ছেদের ফলে শীতকালের ব্যবসাও নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকার কারণে বর্তমানে ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। 

উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিগত মেয়রের আমলে তারা দোকান মালিক সমিতির মাধ্যমে কয়েকদফায় দোকান প্রতি ১০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে আরোও অধিক টাকা প্রদান করেছেন। পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী যারা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতেন, তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি দোকান ভাড়া নেয়ার সময় অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।  

ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২ এর আরএস গ্যালারির মালিক গোলাম রাসেল। বর্তমানে মার্কেটের সামনে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘কষ্টের কথা আর কি বলব। শীতকালে ব্যবসার জন্য ১০ লাখ টাকার শীতের পোশাক কিনেছিলাম। বর্তমানে ফুটপাতে বেচাকেনা নেই। যে কাপড় মার্কেটে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম, ফুটপাতে বসার কারণে সেই একই জিনিসের দাম ২০০ টাকা বলে ক্রেতারা। আমাদের ব্যবসায় করোনা প্রথম ধাক্কা দিয়েছিল, আর এখন সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদে আমরা পথে বসে গিয়েছি। আমরা এখন কোথায় যাবো কি করবো?’ 

১১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন, একই মার্কেটের প্রিন্স পাঞ্জাবি দোকানের মালিক শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ফুটপাতে দোকান করছি। তবে ফুটপাতেও কয়দিন ব্যবসা করতে পারব সেটাও জানি না। আমি মার্কেটে ফতুয়া, পাঞ্জাবি, ট্রাউজার, শেরওয়ানি বিক্রি করতাম। বর্তমানে আমার প্রায় লাখ লক্ষ টাকার পণ্য স্টকে রয়েছে। শীতকালে পণ্যগুলো বিক্রি করতে না পারলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। অগ্রিম টাকাও ফেরত পাবো কি না জানি না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের জন্য যেন কোনো ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’ 

একই মার্কেটে ব্যবসা পরিচালনাকারী ইয়ামিন সু এবং নিউ বিপিএল সু, স্মার্ট সু এর দোকানের মালিক এবং বিক্রেতারা দোকান উচ্ছেদ হওয়ার ফলে বর্তমানে মার্কেটের সামনে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। তারা বলেন, মার্কেটে যেখানে দৈনিক এই শীতকালীন সময়ে এক লাখ টাকার উপরে বেচাকেনা হতো, সেখানে ফুটপাতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতেই কষ্ট হয়। ফুটপাতের বেচাকেনা মার্কেট এর চেয়ে অনেক কম।’

স্মার্ট সু এর মালিক আরিফ বলেন, ‘সকাল থেকে মাত্র দুই ডজন জুতা বিক্রি করছি। দুই ডজন জুতায় আর কয় টাকা লাভ হবে? আমার সংসার, বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি কিভাবে চলব? আমরা একেবারে পথে বসে পড়েছি। আমার মতো আরও অনেক দোকানদার রয়েছে যারা জায়গা-জমি বিক্রি করে দোকান ভাড়া নিয়েছে ব্যবসা করার জন্য। আমাদের দোষটা কোথায়? কিন্তু সকলের অবস্থাই একই রকম। আমরা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছি।’

উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, মার্কেটের তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায় তাদেরকে দোকান দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ দোকান বরাদ্দ পাবেন, সেই বিষয়ে ব্যাবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
আরকেআর/এমএইচএম


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান