যেভাবে একটি ছেলে হিজড়া হয়ে যায়

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১২:২১, নভেম্বর ৫, ২০২১

ঢাকা: প্রতিটা হিজড়ার জন্ম হয় একজন ছেলে সন্তান হিসেবে। কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে ধীরে ধীরে সেই ছেলের মধ্যে মেয়েলিভাব প্রকাশ পেতে থাকে। তার শরীর ছেলের হলেও মনমানসিকতা হয় মেয়েদের মতো। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার এই মনগজগতের পরিবর্তনের ফলে তার চালচলন কথাবার্তা এবং ব্যবহারে মেয়েলিপনা প্রকাশ ঘটতে থাকে। এভাবেই একজন ছেলে হয়ে জন্ম নেওয়ার পরেও ধীরে ধীরে হিজড়া, ট্রান্স জেন্ডার, বৃহন্নলা, উভয় লিঙ্গ বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে পরিণত হয়।

সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকার হিজড়া, হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের ব্যক্তি এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা যায়।

হিজড়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ হিজড়াই ছোটবেলা থেকেই তার পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সবখানেই বিরুপ আচরণ, নানা ধরনের বঞ্চনা এবং বৈষম্যের ফলে বাধ্য হয়েই পরিবার ও নিজস্ব সমাজ থেকে দূরে পালিয়ে যায়। এরপর হিজড়ারা তাদের মতো অন্যান্য হিজড়াদের সঙ্গে মিশে যায়। 

হিজড়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যাদেরকে আমরা হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার, উভয় লিঙ্গ বা তৃতীয় লিঙ্গ বলি, তারা সবাই ছেলেদের অর্গান নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তাদের সাইকোলজিক্যাল অরিয়েন্টেশন হয় মেয়েদের মতো। অর্থাৎ তাদের শরীরটা হয় পুরুষের আর মনটা হয় নারীর। ফলে তারা ছেলেদের শরীর নিয়ে, মেয়েদের জীবনযাপনে আগ্রহী থাকে। এই কারণে হিজড়ারা একজন পুরুষের শরীর নিয়ে নারীর মতো দ্বৈত জীবনযাপন করে।  

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে দীর্ঘদিন কাজ করছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বন্ধু)।

বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির হেলথ অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ফসিউল আহসান এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, একজন হিজড়া যে অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম, সেটা বোঝা যায় তার কৈশোরকালীন সময়ে। কৈশোর থেকেই তার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন মেয়েদের মতো হতে থাকে। এ সময় থেকেই সে লুকিয়ে লুকিয়ে তার মা কিংবা বোনের শাড়ি-চুড়ি, অন্যান্য কাপড় পরে, মেয়েদের মতো সাজগোজ করে থাকে। এমনটা করতে গিয়ে সে আবার বাবা, মা অথবা ভাইবোনের কাছ থেকে তাদের বকাও খেতে হয়। তার কথা বার্তায় যখন মেয়েলিপনা প্রকাশ পেতে থাকে, তখন বন্ধু-বান্ধব এবং সহপাঠীরা তাকে উপহাস করতে থাকে। শিক্ষকরাও অনেক সময় তাদের বকাঝকা করেন। এসব কারণে হিজড়াদের ভাইবোনরাও আবার তাদের ওপর চড়াও হয়, পরিবারের লোকেরাও তখন বলে, তোর জন্যে আমাদের মানুষের কাছে কথা শুনতে হয়, তুই নাকি হিজড়া! পরিবার, সমাজ এবং আশেপাশের প্রায় সবাই যখন হিজড়াদের নানা উপহাস ঠাট্টা এবং বঞ্চনা করতে থাকে, এক পর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে, সে যখন একটু বড় কিংবা ১৮ বছরের হয়ে যায়, তখন পরিবার থেকে পালিয়ে গিয়ে বাঁচতে চায়। তারপর তারা কোনো একজন হিজড়া গুরুমার অধীনে হিজড়াগিরি করতে থাকে। এ সময় থেকেই তারা সামাজিক নিরাপত্তা ও পারিবারিক সুরক্ষা বলয় থেকে বঞ্চিত হয়ে অভিশপ্ত এক জীবন শুরু করেন। এভাবেই একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে হিজড়াগিরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। 

হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন বৃহনল্লার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সমাজে হিজড়াদের অচ্ছুত মনে করা হয়। বাবা মাও তার হিজড়া সন্তানকে অভিশাপ মনে করে। একজন ছেলে যখন মেয়েদের কাপড় চোপড়, খেলনা এবং চুড়ির প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, সে যখন মেয়েদের মতো আচরণ করে তখন পরিবার এটাকে  স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে না। 

অল্পবয়সের একজন মানুষের পক্ষে এসব বিষয় সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তারা পরিবার থেকে পালিয়ে সমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়। অন্যভাবে বলতে গেলে সবাই তাকে দূরে ঠেলে দেয়। নাহয় হিজড়া কমিউনিটির অন্যরা যখন জানতে পারে, কোথাও তাদের মতো একজন হিজড়া রয়েছে, তারাও তাকে নানাভাবে উৎসাহিত করে তাদের সঙ্গে থাকতে। 

সেই ছেলেটা যখন দেখে এই পরিবার, সমাজের সবাই তার সঙ্গে বিরুপ আচরণ করে,  অন্যদিকে এই মানুষগুলো তার আপন, চালচলন এবং দেখতে শুনতেও তারই মতো, তখন সেও তাদের সঙ্গে মিশে যায় এবং ধীরে ধীরে নিজেকে হিজড়া কালচারের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে।

বঞ্চনা এবং অবহেলা না করে হিজড়াদের যদি পরিবার ও সমাজের মূলধারায় রাখা যায়, তাদেরকে যদি পরিবার থেকে বিছিন্ন হওয়া রোধ করা যায়, তাহলে তারাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে বলে মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। 

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫,২০২১ 
আরকেআর/এসআইএস


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান