একা বাসা ভাড়া নেওয়া: বিড়ম্বনা ও সমাধান

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১২:৩২, জানুয়ারি ২১, ২০২২

হাবিবা গত ১ মাস ধরে বাসা ভাড়া খুঁজছেন। কিন্তু অধিকাংশ বাড়িওয়ালাই সিঙ্গেল মেয়ে বলে বাসা ভাড়া দিতে অনাগ্রহী। অনেকেই আবার শর্ত জুড়ে দেন, বাবা-মা বা অভিভাবক সশরীরে এসে কথা বললে তবেই তাকে বাসা ভাড়া দেবেন। অনেকে আবার বলেছেন, বাসা ভাড়া নিতে পারবে, তবে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতে হবে। 

কিন্তু, অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সির মতো একটি চ্যালেঞ্জিং জায়গায় কাজ করে, এই শর্তগুলো পূরণ করে কীভাবে তিনি বাসা ভাড়া নেবেন এই নিয়ে সন্দিহান হাবিবা। 

একই রকম সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তাকি। তাকি বলেন, ঢাকাতেই আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। কিন্তু যেহেতু আমি ফ্রিল্যান্সিং করি, নিরিবিলি পরিবেশে একটানা কাজ করার জন্য আমি ছোট একটি ভাড়া বাসা খুঁজছিলাম। অধিকাংশ বাড়িওয়ালাই ব্যাচেলর শুনে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে চাননি। একজন বাড়িওয়ালা ব্যাচেলর শুনে আমাকে বললেন, বিয়ে করে তারপর যেন বৌসহ বাসা ভাড়া নেই।   

হাবিবা এবং তাকি দু’টি উদাহরণ মাত্র। বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকার মতো জনবহুল শহরগুলোতে এরকম চিত্র আছে প্রতিদিনের দেখা। যে কারণে ব্যাচেলর ভাড়া বাসার চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু চাহিদার তুলনায় ভাড়া বাসার জোগানটা খুবই সীমিত। ফলে, বাসা ভাড়া না পেয়ে অসংখ্য সিঙ্গেল মানুষ মেসে বা হোস্টেলে থাকতে বাধ্য হন। হোস্টেল বা মেসের এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। যার প্রভাব পড়ে তাদের পড়াশোনা কিংবা চাকরি জীবনেও।   

কিন্তু কেন এই সমস্যা? কেন সিঙ্গেল ভাড়াটিয়াদের প্রতি বাড়িওয়ালাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি? সমস্যার সমাধান করতে হলে সেই কারণগুলোও খতিয়ে দেখা জরুরি।

অনেক বাড়িওয়ালা মনে করেন ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিলে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। অনেক বাড়িওয়ালার মাঝেই ভুল ধারণা রয়েছে যে, ব্যাচেলর মাত্রই নানারকম অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে, তাই তাদেরকে ভাড়া দিলে নানা রকম পুলিশি ঝামেলা হতে পারে। অনেকে আবার ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়ার একটি খারাপ অভিজ্ঞতাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরে নিয়ে সিঙ্গেলদের ভাড়া দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন কিংবা ভাড়া দিলেও নানারকম অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করেন।


তবে আশার কথা হচ্ছে কিছু বাড়িওয়ালা রয়েছেন, যারা গতানুগতিক এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সিঙ্গেলদের বাসা ভাড়া দিতে চান। এমন একজন হলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসাইন। তিনি বলেন, এক সময় আমিও তো সিঙ্গেল ছিলাম। আমি যখন প্রথম চাকরি করি তখন আমারো বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এটা হচ্ছে নিজস্ব বিবেকবোধ। সিঙ্গেলদের বাসা ভাড়া না দিলে তারা কোথায় থাকবে তাহলে? এজন্যই সিঙ্গেলদের বাসা ভাড়া দিতে আমি কখনো আপত্তি করিনি। যেহেতু তারা পরিবার থেকে দূরে থাকে, তাদের প্রতি আমাদের আরো সদয় হওয়া প্রয়োজন। তবে দেখতে হবে, যাকে ভাড়া দিচ্ছি, সে মানুষটা কেমন বা কোনো অবৈধ কাজে জড়িত কিনা।     

আসলে, পড়াশোনা, চাকরির প্রস্তুতিসহ নানা কারণে হাজারো নারী ও পুরুষের নিজের জন্য, নিজের মতো করে থাকার একটি জায়গা জরুরি হয়ে পড়ে। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাটিই হচ্ছে এই থাকার জায়গা বা বাসস্থান। আর এই মৌলিক চাহিদাটি নিশ্চিত করতেই বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াকে একটি সহাবস্থানে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।

রিয়েল অ্যাস্টেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিপ্রপার্টি থেকে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় সিঙ্গেল লিভিং এর জন্য ফ্ল্যাটের চাহিদা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে বিপ্রপার্টির কাছে সিঙ্গেল লিভিং এর জন্য ফ্ল্যাট ভাড়ার অনুসন্ধান বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এমন পরিস্থিতিতে বাসা ভাড়া পেতে এখনো বেগ পাওয়া একটি সামাজিক সমস্যাই বলা যায়।

তবে এ সমস্যা সমাধানের উপায়ও রয়েছে, আর তার জন্য প্রয়োজন বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া উভয়পক্ষের দায়িত্বশীল এবং শ্রদ্ধাশীল আচরণ। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতার মাধ্যমেই সম্ভব সিঙ্গেলদের বাসা ভাড়া দেওয়া ও নেওয়ার মাঝে  চমৎকার একটি ভারসাম্য তৈরি করা ও বজায় রাখা। 

বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২২ 
এসআইএস
 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান