প্রধান শিক্ষককে পেটালেন স্কুলের নৈশপ্রহরী!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৯:০২, জুন ১, ২০২২

নরসিংদী: নরসিংদীতে স্কুলে না আসার কারণ জানতে চাওয়ায় প্রধান শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর নামে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। 

খবর পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্কুল পরিদর্শন করেন। বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দপ্তরির নামে মাধবদী থানায় মামলা দায়ের করেছেন আলগী মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। 

এদিকে, শিক্ষককে পেটানোর কথা স্বীকার করেছেন দপ্তরি। তবে এখনও তার নামে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর সদর উপজেলার ৮৬ নম্বর আলগী মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন কামরুন নাহার মাহামুদা। একই স্কুলে আউটসোর্সিং দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োজিত আছেন মো. শরিফ মিয়া। স্কুল এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে দপ্তরি শরীফ মিয়া নিজের ইচ্ছে মতো স্কুলের ডিউটি করেন। এতে স্কুল পরিচালনায় ব্যাহত হচ্ছিল। একাধিকবার মৌখিকভাবে নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষিকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শোকজ করা হয়।

এতে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী শরীফ মিয়া প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে স্কুলে প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজসহ অশালীন মন্তব্য করেন। এরই মধ্যে গত ১৮ মে মো. শরীফ মিয়া সকাল ৯টার দিকে স্কুলে আসার স্থলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলে আসেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক তার কাছে দেরিতে স্কুলে আসার কারণ জানতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় দপ্তরি। ওই সময় দপ্তরি শরীফ মিয়া প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পর দপ্তরি তার স্ত্রী ও শাশুড়িকে স্কুলে নিয়ে আসে। ওই সময় দপ্তরির স্ত্রী ও শাশুড়ি প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহারকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে তার রুম থেকে বের করে স্কুলের আঙিনায় নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে তাকে আঘাত করেন।

প্রধান শিক্ষিকার ডাক চিৎকারে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যান। খবর পেয়ে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার একদিন পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে দপ্তরি, তার স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে মাধবদী থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়জিদ খান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর নামে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার মাহামুদা বলেন, দপ্তরি যদি প্রধান শিক্ষকের কথা অমান্য করে, তাহলে স্কুল পরিচালনায় ব্যাহত হয়। সে তার ইচ্ছে মতো স্কুলে আসা যাওয়া করেন। তাই তাকে একাধিকবার শোকজ করা হয়। গত ১৮ মে স্কুলে দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে, তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়েছেন। তাছাড়া স্কুলের পাশে দপ্তরির বাড়ি। তাই সব সময় তিনি এলাকায় দাপট দেখান।

সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে যাই। এবং তার সত্যতা পাই। প্রধান শিক্ষক যদি অপরাধও করেন, তাহলে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী স্কুলের কমিটি, উপজেলা শিক্ষা অফিস বা জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু কোনো ক্রমেই প্রধান শিক্ষকের ওপর হাত তুলতে পারেন না। তাছাড়া এই দপ্তরিকে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা পরিবারেরও কেউ না। এটার বিচার হবে।

প্রধান শিক্ষককে মারধরের কথা স্বীকার করে স্কুলের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী শরীফ মিয়া বলেন, গত ১৭ মে প্রধান শিক্ষক একটি মিটিংয়ে চলে যান। পরদিন ১৮ মে আমি স্কুল খুলে বাড়িতে যাই। ম্যাডাম এসে আমাকে ডেকে আনেন। তখন তিনি বলছেন- আমি ১৭ মে স্কুলে আসিনি। সে সময় বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাকে স্কুলের ছাত্রদের কাছে জানতে বলি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার শরীরের ওপর স্ট্যাপলার ছুড়ে মারেন। এই খবর আমার পরিবার শুনে ছুটে আসেন। তখন আমার পরিবারের সঙ্গে ম্যাডামের কথা-কাটাকাটি হয় এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। 

দপ্তরি আরও বলেন, ম্যাডাম স্কুলের বই বিক্রি করে দেন। আমি যেন এসব না বলি, সে কারণে তিনি আমাকে চাপেও রাখতেন।

এসব ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুক মিয়া বলেন, শিক্ষা অফিসের চিঠি পাওয়ার পর মিটিং কল করা হয়েছিল। ম্যানেজিং কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে দু’জন উপস্থিত হয়েছিলেন, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২২
এসআরএস


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান