বৃদ্ধের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, ভূমি অফিসের দুই কর্মকর্তাকে বদলি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১২:০৫, অক্টোবর ৩, ২০২২

চট্টগ্রাম: হাটহাজারী উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি বাতিল করতে আসা এক বৃদ্ধের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করার অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এরমধ্যে বিজয় নন্দ বড়ুয়াকে ফটিকছড়ি ও নিউটন বড়ুয়াকে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে বদলি করা হয়। 

ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিতৃসূত্রে পাওয়া জমি মসজিদের জন্য দান করেছিলেন নুর বেগম। এরপর সেটি অধিগ্রহণ করে ফায়ার সার্ভিস। অধিগ্রহণের পর মসজিদ কমিটিকে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নিও দিয়েছিলেন দাতার স্বামী আবদুল মোনাফ। কিন্তু হঠাৎই উভয় নামজারি বাতিলের আবেদন করেন তিনি।

কাজ না হওয়ায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারি বিজয় নন্দ বড়ুয়ার সঙ্গে গালিগালাজ ও বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। অভিযোগ করেন, টাকা না দেওয়ায় তার কাজ হয়নি। এর প্রায় এক মাস ২০ দিন পর মারা গেলেও এখন মেয়েদের অভিযোগ, নন্দ বড়ুয়ার অসদাচরণের জেরে মারা গেছেন তিনি। 

জানা যায়, গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আবদুল মোনাফ হাটহাজারী ভূমি অফিসের অফিস সহকারী বিজয় নন্দ বড়ুয়ার কাছে আসেন। তিনি ২০১৯ সালে রুজুকৃত নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলার (১৫৭/২০১৯) আদেশ সম্পর্কে জানতে চান। যা ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর জারি করা হয়।

এসময় বিজয় নন্দ বড়ুয়া জানান, আপনার জমি যেহেতু অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেহেতু আপনার জমি নিয়ে নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলাটি নথিজাত করা হয়। আপনি যদি আপিল করতে চান তাহলে আদেশের সার্টিফাইড কপি নিয়ে রাজস্ব আদালতে আপিল করতে পারেন। 

এ কথা বিস্তারিত বলার পর আবদুল মোনাফ অফিস সহকারি বিজয় নন্দ বড়ুয়ার প্রতি রাগান্বিত হয়। তিনি টাকা দেননি বলে তার কাজ হয়নি বলেও দাবি করেন মোনাফ। এক পর্যায়ে পরিবার নিয়ে কথা বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে আবদুল মোনাফকে বেয়াদব বলে গালিগালাজ করেন বিজয় নন্দ বড়ুয়া। এসময় আরেক অফিস সহকারি নিউটন বড়ুয়া আবদুল মোনাফকে শাসিয়ে নিবৃত করার চেষ্টা করেন।

এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আবদুল মোনাফ। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আবদুল মোনাফের মেয়ে মিনু আক্তার। তার অভিযোগ,  ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বিজয় নন্দ বড়ুয়া ও নিউটন বড়ুয়ার দুর্ব্যবহারের ধকল সইতে না পেরে আমার বাবা মারা যান। এ ঘটনার তদন্ত করে বিজয় নন্দ বড়ুয়া ও নিউটন বড়ুয়ার শাস্তি দাবিও করেন তিনি।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের আগে হাটহাজারীর মীরেরহাট মধ্য পাহাড়তলী মৌজায় আমার মা নুর বেগমের (বাবার সূত্রে পাওয়া) জমি আনোয়ারা বেগম নামে এক নারীর কাছে নিজের অংশসহ বিক্রি করেন মামা রফিক মিয়া। পরে সেই জমি জসিম উদ্দিন নামে আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন আনোয়ারা। জসিম উদ্দিন আমার মা নূর বেগমের প্রাপ্ত অংশসহ নামজারি খতিয়ান সৃজন করেন। ২০১৭ সালে ওই জমি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার (এল এ কেইস নং ২৯ / ২০১৭-২০১৮)। আমার মায়ের প্রাপ্ত অংশের ক্ষতিপূরণ পেতে তৎপরতা শুরু করে জসিম উদ্দিন। আমরা জানতে পেরে খতিয়ান দুটি বাতিলের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হাটহাজারীর তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করি (নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলা নং-১৫৭/২০১১)। 

তিনি বলেন, কিন্তু তিন বছরের বেশি ধরে আমরা ভূমি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। ফাইলটি দেখাশোনা করছিলেন বিজয় নন্দ বড়ুয়া। তিনি নানা অজুহাতে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা না করে ফাইলটি আটকে রাখেন। বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পরের দিনই এসিল্যান্ড স্যারকে ভুলভাল বুঝিয়ে খতিয়ান বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে আমার বাবা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের জন্য ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার (এডিসি) কাছেও আবেদন করি।

তবে হাটহাজারী উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মধ্য পাহাড়তলী মৌজার ওই জমির (বি.এস. ১০৫১ নং খতিয়ানের বি.এস. ১২৫৪ দাগে ০.৪৮০০ একর) মালিক নুর বেগম ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর তিতাগাজী জামে মসজিদের পক্ষে মোতাওয়াল্লি আব্দুল লতিফের নিকট দান করেন। যা পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অনুকূলে অধিগ্রহণ করা হয় (এল.এ. মামলা নং ২৯/১৭-১৮)। 

অধিগ্রহণের টাকা মসজিদ কমিটির নামে নামজারি না থাকায় ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর আবদুল মোনাফ ও তার মেয়ে মিনু আক্তার মসজিদ কমিটিকে (৩৪০০ নং) অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রি করে দেন। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল দেওয়ার সময় আবদুল মোনাফ মসজিদ কমিটি থেকে তিন লাখ টাকা গ্রহণও করেন।

হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আবু রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, বৃদ্ধের সঙ্গে যে আচার-আচরণ করা হয়েছে সেটি খুবই দুঃখজনক। এ অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২ 
বিই/টিসি
 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান