ঢাকা: কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন বাংলাদেশি শহিদুল ইসলাম মিন্টু। তিনি দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির ফেডারেল ইলেক্টোরাল ডিস্ট্রিক্ট বিচেস-ইস্টইয়র্কের রাইডিং অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের ডিরেক্টর পদে পুননির্বাচিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টরন্টোয় বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নির্বাচিত ডিরেক্টরদের নাম ঘোষণা করেন অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডোনা ব্রানিফ। এ পদের পাশাপাশি মিন্টুকে পার্টির ন্যাশনাল কমিটির নীতি-নির্ধারণী ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে সরাসরি ভোট প্রদান এবং মতামত রাখার বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে ন্যাশনাল কাউন্সিল ডেলিগেট ঘোষণা করা হয়।
পার্টির লোকাল রাইডিং মেম্বারদের সরাসরি ভোটে সাধারণত পরিচালকরা নির্বাচিত হন। এর আগে, ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর মিন্টু সর্বপ্রথম পার্টির ডিরেক্টর নির্বাচিত হন।
মঙ্গলবার এজিএমে যখন পার্টির ডিরেক্টর পদে মিন্টুর নাম ঘোষণা হচ্ছে, তিনি তখন বাংলাদেশে। এই পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর কানাডায় তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা ফোন-ইমেইলে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন। ডিরেক্টর পদে মিন্টুর নাম ঘোষণার পর শুভেচ্ছা জানান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডোনা ব্রানিফও।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলানিউজ কার্যালয়ে আসেন কনজারভেটিভ পার্টির বিচেস-ইস্টইয়র্কের রাজনীতির অন্যতম এ নীতি-নির্ধারক। প্রাণবন্ত আলাপে তিনি তুলে ধরেন তার এ পদে দায়িত্ব পাওয়ার পরিশ্রমের গল্প এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা।
মিন্টু বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আর কানাডার রাজনীতি পুরোপুরি আলাদা। সেখানে সাফল্য পাওয়ার শর্ত নিবেদিতপ্রাণ ধারাবাহিকভাবে কাজ করা। কানাডার রাজনীতিতে নিবেদন ও আগ্রহ পর্যবেক্ষণ করেই কোনো পদে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কেবল নির্বাচনের আগে মুখ দেখালে হবে না। এখানে স্থান করতে হলে আগে থেকেই কাজ করতে হবে। আজকে ডিরেক্টর পদে যে অবস্থান, সেটা দীর্ঘ পথপরিক্রমার ফল বলা যেতে পারে।
কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা বলেন, তিনি কানাডায় বসবাসের শুরু থেকেই সবকিছু সময় বেঁধে পরিকল্পনা অনুযায়ী করছেন। যেমন প্রথমে দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম নামে একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠা করেন। এটা সফলভাবে চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে নেন বাংলামেইল নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের কাজ। এরপর যুক্ত হন রাজনীতিতে। রাজনীতিতে নিবেদিত হয়ে কাজ করার সুবাদে এখন বিচেস-ইস্টইয়র্কের পার্টির ডিরেক্টর।
মিন্টু আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি স্থানীয় আসন থেকে লড়াই করতে পারবেন। যদিও ২০১৫ সালের নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু জয় নিশ্চিত না হওয়ার আগে মাঠে নামাটা সমীচীন মনে করেননি বিধায় তিনি লড়েননি।
এ বাংলাদেশি কানাডিয়ান বলেন, নির্বাচনে দাঁড়ালে যেন জয় নিশ্চিত হয়, সেই অবস্থান তৈরি করতে হবে। দাঁড়িয়ে জিতে গেলে অন্য বাংলাদেশিরাও এতে অনুপ্রেরণা পাবে এবং কানাডার রাজনীতিতে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ হবে।
মিন্টুর বক্তব্য, যখন পার্টি বা সরকারে একটি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অবস্থান থাকবে, তখন নিজ কমিউনিটি বা নিজ অঞ্চলের পক্ষে যায়, এমন কিছু বিষয়ে কথা বলা যায়।
মিন্টু তাদের অনুপ্রেরণার জায়গাও স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশিদের রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক বড় অনুপ্রেরণার নাম। তিনি ব্রিটেনে যে অবস্থান তৈরি করেছেন, তাতে অন্য বাংলাদেশিরাও ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন, তারা কেন পারবেন না। টিউলিপ সিদ্দিকের যে যোগ্যতা আছে, তিনি ভবিষ্যতে লেবার পার্টির প্রধান নেতাও হতে পারেন। এক্সট্রাকোয়ালিফাইড এক রাজনীতিক টিউলিপ।
মিন্টু প্রত্যাশা করেন, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছেলে-মেয়েরা কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হোক। তাদের জন্য জায়গা করাটাও সহজ। যারা আগ্রহী তাদের উদ্দেশে কিছু পরামর্শও দেন বিচেস-ইস্টইয়র্কের এ ডিরেক্টর। তিনি বলেন, এখানে এলে বাংলাদেশের রাজনীতি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এখানকার রাজনীতির ভাবধারা বুঝতে হবে। কানাডায় রাজনীতি করার প্রধান শর্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির হতে হবে। কোনো দলই কারও করাপ্টেড ইমেজের দায় নেবে না। সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করতে হবে। এখানকার রাজনীতিতে যে যা ডিজার্ভ করে সেটা সে পায়, তার জন্য বাড়তি কিছু করতে হবে না। তবে দেখা হয় ডেডিকেশনটা, আর্থিক ও সময়ের ডেডিকেশন প্রধান বিবেচ্য।
রাজনীতিক ছাড়াও মিন্টু সাংবাদিক পরিচয়েও সমান পরিচিত। তিনি বেঙ্গলি টাইমস ডটকম ও সাপ্তাহিক বাংলামেইল ছাড়াও কাজ করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে সম্প্রচারমাধ্যম ‘এনআরবি টিভি’ নিয়ে। এই টিভিতে তিনি বিশেষত বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে চান। সে লক্ষ্যেই নানা অনুষ্ঠান প্রচার করছেন।
মিন্টু ঢাকার দৈনিক আজকের কাগজ, বাংলাবাজার পত্রিকাসহ প্রথমসারির বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার বিনোদন সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন ‘বিসিআর’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন একটানা চার বছর। বাংলাদেশের প্রথম বেটাফরম্যাটের ফিল্ম ‘দেবদাস’সহ অসংখ্য আলোচিত টিভি নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন তিনি। পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার, শেরে বাংলা স্বর্ণপদক, বিসিআরএ অ্যাওয়ার্ড, ট্রাব অ্যাওয়ার্ড, চলচ্চিত্র দর্শক ফোরাম অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার। লিখেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ। ‘একাত্তর’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ তার আলোচিত গ্রন্থ।
২০০৪ সালে সপরিবারে কানাডায় অভিবাসী হওয়ার পর মিন্টু টরন্টো ফিল্ম স্কুল থেকে ডিজিটাল ফিল্মমেকিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা করেন। ২০০৯ সালে টরন্টোর সেনেকা কলেজের প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং ইন জার্নালিজম কোর্স করেন। ২০০৮ সালের ১ জুলাই টরন্টো থেকে প্রকাশ করেন নতুন ধারার অনলাইন বাংলা সাপ্তাহিক ‘বেঙ্গলি টাইমস’, যা ‘দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পরপর তিনবার পেয়েছেন ন্যাশনাল এথনিক প্রেস ও মিডিয়া কাউন্সিল অব কানাডার পুরস্কার এবং হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ড। ২০১৪ সালে কানাডিয়ান বিজনেস কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে নেগোশিয়েশন কোর্স ও সিএসডাব্লিউ কমপ্লিট করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এইচএ/