ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

না নৈহাটি না পুষ্পস্তবক | শাবিহ মাহমুদ

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
না নৈহাটি না পুষ্পস্তবক | শাবিহ মাহমুদ

১.
আজকের দিনটা কত জ্যান্ত বাস্তব, রোদ ঝলমল ‘দিবালোক’—নিজের চেয়েও তোকে সত্য মনে হয়। রাতালোকে বসে আছে মুমূর্ষু ঘোর-নির্লিপ্ততা-অসভ্য অভ্যাস জেগে থাকার, যার কোনও মানেই পাই না আজকাল!

পরের দিনের রুক্ষ টবে বাসি ফুল হয়ে পড়ে থাকে ব্যবহৃত ‘আজ’।

আগামী দিনের নাম—অস্পষ্ট সাহস, গতকাল বরাবরই আমার মৃত লাশ; আজ দেখতে না-দেখতেই ফুড়ুৎ! আমাকে আমি খুঁজে পাই না কোথাও, না ফুলের সৌরভে, জন কোলাহলে, কিংবা প্রিয় নর্দমায় গড়াগড়ি বাসনে-কোসনে। আমার কোনও নিজস্ব ‘আজ’ নেই ধাবমান চল্লিশে।

না নৈহাটি না পুষ্পস্তবক

২.
আমার দুধের বাচ্চা ওর মায়ের বুকে মুখ রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানি না। সহধর্মিণী কি এখন স্বপ্ন দেখছে, আর আমার নয় মাসের দুধের বাচ্চা? অথচ আমি একা একা রাতের চিত্র খুলে কী খুঁজছি? ধুম্ শব্দ করে এইমাত্র একটা বোমা ফুটলো ইরাকে,
আমার প্রাণের দিকেও কি তাকিয়ে আছে সেই সংরাগ?

আমার হৃদয় আজ শূন্য—ভেঙে যাওয়া দুধের গেলাস; এই মন এক রক্তরঙা নদী; আমার কণ্ঠে কোনও গান নেই; আমার গানে কোনও সুর নেই; আমার সুরে কোনও আবেগ নেই;
আমার আবেগের ভেতর কোনও অগ্ন্যুৎপাত নেই—আমার আছে কেবল ‘নেই’।

দুঃস্বপ্নে ঘুম হচ্ছে না, অথচ আমার স্ত্রী-কন্যা কী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! তারা কি স্বপ্ন দেখছে, নাকি আমারই মত—এক অশরীরী দুঃস্বপ্নের গুহার ভেতর, আটকে আছে বাংলাদেশের মত?

না নৈহাটি না পুষ্পস্তবক

৩.
বাতি নেভানোর পরই ঘটলো আসল ঘটনাটা, সুইচ অফের কারুকার্যে ফুটে উঠল কবন্ধ কবর। বিভ্রম কুহকে একটু আগে বিপুল বাল্বের নিচে, যে পড়েছিল রক্তমুখে—সে কি প্রকৃতই আমার লাশ? এই প্রেম নিয়ে নেই কোনও নৈতিক সিদ্ধান্ত ও বিশ্বাস। কী দরকার হে নকির ও মুনকার, আমার দু-কাঁধে কেরামান ও কাতেবিনের ছদ্মবেশে দুই নারী—সে পারদের ওঠা-নামার ভুল প্রশ্বাস, আমার আমলনামা। জানালার পরপাড়ে বৃষ্টির জলের নিরীহ টুপটাপ, লাল চোখ আততায়ীর পদশব্দ ছড়ায় কন্টিনিউয়াজ; বাহ্, এইতো বেঁচে আছি সলজ্জ ভিড়, ভয়, এবং একক অন্ধকারে!

দিবালোকে ফোটে যে রোদ, তার স্তনে একটানা ব্রেকিংনিউজ; ক্ষুধা ও লুণ্ঠন পাশাপাশি শুয়ে আছে অলীক সংসদে! তবু, রক্তিম বুকের বাঁ দিকে জেগে ওঠা সবুজ, বিপ্লব ও মুক্তির উল্লসিত সঙ্গিনের সমার্থক হয়। নাটকের আর-আর যে অঙ্ক বাকি, এবং নানা তুকতাক, গা-সওয়া এই আমি বোধের তলানীতে একা, মুখ্যত মৃত ও অনুভূতিহীন, লাশের জাদুঘরে।

৪.
কে আমি বসে আছি কার ছায়া নিয়ে? আকাশে দুর্দান্ত রোদ, সমান্তরাল সুতোয় বাতাসে বারুদ, কার প্রতিবিম্ব আমার দেয়ালে আছড়ে পড়ে পেট্রোলবোমার মত? ছিটকে পড়ছি আরশোলা—দিক ও বিদিক, ঘনিষ্ঠ দিবালোক হয় ভূতের অন্ধকার, আত্মায় প্রেতের হাসি, ভুল প্রচ্ছায়ায়।

তোমাদের যতসব অশোভন উল্লাস—অপদস্থ করে রোজ আমার হৃদয়, তোমার মন কি তা বোঝে, অহেতুক মিছিল? ‘জীবন’ আর্তস্বরে কাঁদে জন্ম মাটি; তার কান্নার জল ধুয়ে নেয় না ফোরাতের খুন, আমার স্বদেশে জ্বলে ঘৃণিত আগুন।

না নৈহাটি না পুষ্পস্তবক



বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।