ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘ক্লাসে হাতে ধরে ড্রইং শিখিয়েছেন রাজ্জাক স্যার’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৭
‘ক্লাসে হাতে ধরে ড্রইং শিখিয়েছেন রাজ্জাক স্যার’ আব্দুর রাজ্জাকের একটি চিত্রকর্ম/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘ড্রইংয়ে অসাধারণ দক্ষতা ছিল রাজ্জাক স্যারের, ক্লাসে তো দেখাতেন প্রায় হাতে ধরে ধরে। যাকে দেখাতেন, পুরোটাই শেষ করে দেখাতেন। রেখার তারতম্যে কি করে রস সৃষ্টি হয়, টোনের ব্যাপারগুলি যথাযথ হলে কেমন মজাদার হয়, সেসব খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে এঁকে এঁকে বুঝিয়ে দিতেন। পেন্সিল হোক অথবা চারকোল, কিংবা তুলি-কালি সব মাধ্যমকে নান্দনিক ও ছান্দিক করে তোলার নিয়মগুলি চমৎকার করে দেখিয়ে দিতেন তিনি।’

খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী আব্দুর রাজ্জাক ও তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে এমনটাই বলেছেন শিল্পী রফিকুন নবী। আব্দুর রাজ্জাকের বিভিন্ন অপ্রকাশিত ও গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর্ম নিয়ে তার পরিবার ও গ্যালারি চিত্রকের আয়োজনে শুরু হয়েছে একক প্রদর্শনী।

যা আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে (রোড-৬, বাসা-৪)।

চিত্রকলা, ছাপচিত্র ও ভাস্কর্য- এই তিনটি মাধ্যমেই শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক সাবলীল ছিলেন। তেলরং, জলরং ও অ্যাক্রিলিকে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন, যেগুলো মূলত নিসর্গচিত্র। তাকে প্রকৃতিপ্রেমিক বলা যায়। প্রকৃতির নৈকট্য তার সৃষ্টিশীলতার বড় এক অনুপ্রেরণা ছিল। তিনি প্রকৃতির মাধ্যমে প্রকৃতির খুব কাছে থাকার চেষ্টা করেছেন। জীবনকে পরিপূর্ণভাবে জানা ও রূপ দেওয়ায় আগ্রহী এ শিল্পী রং, রূপ, রেখা, গড়ন ও স্পেসকে কেন্দ্র করে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত মন্থর গতিতে।

আব্দুর রাজ্জাকের একটি চিত্রকর্ম/ছবি: বাংলানিউজসেভাবেই মূর্ত-বিমূর্ত ধারার পাশাপাশি এঁকেছেন গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন চিত্র। প্রদর্শনীতে দেখা মিলবে শহর ও গ্রাম থেকে শহর হওয়ার চিত্র। যেগুলোতে রয়েছে নাগরিক জীবনের সহজ-সরল দিকগুলো।

১৯৫১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তার আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১২০টি শিল্পকর্ম। এগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, নদ-নদী, বাংলার উৎসব, হালচাষ, ফুল, নৌকা, খেয়াঘাট, পাহাড়, ইটের ভাটা, সুন্দরবন, বাগান, শহুরে জীবনের পায়ে চলা পথ উল্লেখযোগ্য।

তবে বিশেষভাবে নজর কাড়ে ২০০৫ সালের ২৩ অক্টোবর আঁকা শিল্পীর কোদাল-টুকরি আর কবরের আকৃতির ড্রইংটি। ব্রাশ ও কালিতে এ ছবিটি আঁকার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। যেন তিনি আগে থেকেই জানতেন, তিনি চলে যাচ্ছেন!

প্রদর্শনী ঘুরে বাংলানিউজের কথা হয় দর্শনার্থী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। ১৯৫৫ সালের আঁকা একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এ ছবিটি আমার জন্মেরও অনেক আগে আঁকা। অথচ দেখে সেটা বোঝাই যায় না। মনে হচ্ছে মাত্রই যেন এ ছবিতে তুলির শেষ আঁচড়টুকু পড়েছে।

আব্দুর রাজ্জাকের সবশেষ চিত্রকর্ম/ছবি: বাংলানিউজপ্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পীর বিভিন্ন সময়ের ড্রইং, তেলরং, জলরং, ভাস্কর্য মিলিয়ে ১২০টি শিল্পকর্ম। সম্প্রতি এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শিল্পানুরাগীদের জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। খোলা থাবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বলে জানান চিত্রক গ্যালারির পরিচালক জহির উদ্দিন।

আব্দুর রাজ্জাক (১৯৩২-২০০৫) ছিলেন এ দেশের প্রথম সারির চিত্রশিল্পী। এদেশে ভাস্কর্যকলার পথিকৃৎ তিনি। চারুকলা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের এ ছাত্রের নেতৃত্বেই ১৯৬৩ সালে খোলা হয় ভাস্কর্য বিভাগ। এর আগে দীর্ঘ ১৭ বছর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এ অপূর্ণতা নিয়েই পথ চলছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।