বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দফায় দফায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ও বিগত সরকারকে। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই অগ্রসর হচ্ছে সরকার ও দলের নীতি নির্ধারকরা।
বাংলানিউজকে তারা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট নানামুখি অপতৎপরতা চালাতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি তুলেছে। এই দাবি নিয়ে আন্দোলনের নামে বিএনপি অতীতের মতো দেশকে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে পারে। আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বিএনপি জোটের শরিক জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার তৎপরতা চালাতে শুরু করেছে।
বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে ওই নির্বাচন ঠেকাতে লাগাতার হরতাল অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত। ওই সময় ব্যাপক সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেড় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনাসহ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর পর নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা ৯৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ও পেট্রোল বোমায় দেশে মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় ও আরো দেড় শতাধিক প্রাণহানি ঘটে। এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়, জ্বালাও-পোড়াওসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। জামায়াতের ওই কর্মসূচিতে বিএনপি সমর্থন দেয়। এসব পরিস্থিতিতে বার বার সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয় এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। আর এ কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে সরকার ও দলের ওই নীতি নির্ধারকরা জানান।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা ও সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, পূর্বের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না সরকার। সরকারের হাতে সব ধরনের অস্ত্র রয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে সরকার কাউকে ছাড়বে না।
এদিকে আগের ওই সব অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতসহ জোটের শীর্ষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে। আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকানোর জন্য এই মামলাগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি ট্রাস্টের দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় বিচার চলছে। এই বিচারের রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে। ২০১৫ সালে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো বিষয়কে ইস্যু করে বিএনপি যাতে কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে না পারে সে বিষয়েও সরকার সতর্ক রয়েছে।
গত সোমবার জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের ৯ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। এ ব্যাপারে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জামায়াত নেতারা গোপন বৈঠক করছিলেন। এ খবর পেয়েই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
এসকে/জেডএম