সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর গত ৫দিন ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যেই সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছে এবং এগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিচ্ছে।
সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে উস্কে দেওয়া হচ্ছে এবং আন্দোলনের মধ্যে বাইরে থেকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নেতারা আরও জানান, বিএনপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জামায়াত এই উস্কানির সঙ্গে জড়িত এবং তাদের লোকজনকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্যই বিএনপি-জামায়াত এটা করছে বলে তারা মনে করেন।
শুক্রবার (৩ আগস্ট) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনেও এ কথা বলেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ৯ বছরে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছিলো। এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর সওয়ার হয়েছে।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকার আর অগ্রসর হতে দিতে চায় না। এ কারণে দ্রুতই তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগও দ্রুত নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই আন্দোলনে উস্কানিদাতা এবং অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
তাদের মতে, এই আন্দোলনের পেছনে উস্কানি অনুপ্রবেশ না ঘটলে দাবি মানার পরই এটা শেষ হয়ে যেতো।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এ দাবিগুলো যৌক্তিক, সরকার সব দাবি মেনে নিয়েছে। এখন মানুষের কষ্ট দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন বাড়াবাড়ি না করলে আন্দোলনের ফলে যে জায়গা তৈরি হয়েছে আমরা সকলেই এর ফল পাবো। কিন্তু এটাকে নষ্ট করার জন্য অনেক লোক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নেমে পড়েছে। রাজনৈতিক দিকে নেওয়া চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এখন এটা নিয়ে চিন্তিত। তবে আমার মনে হয় পরিস্থিতি থেমে যাবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, সরকার দাবি মেনে নেওয়ার পর এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। এই কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখন যা হচ্ছে সেটা আমাদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করছে। এখন বিএনপি-জামায়াত এটাকে রাজনৈতিককরণ করার চেষ্টা করছে, পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করছে না, এটা করছে অনুপ্রবেশকারীরা। অবশ্যই এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে। আশা করি শনি-বরিবারের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। এর মধ্যে কিছু ইন্ধন আছে। তবে যারা ইন্ধন দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার দাবি মেনে নিয়েছে। আইন না মানার যে সংস্কৃতি তার ওপর একটা বিরাট ধাক্কা পড়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের সরে আসা উচিত। তারা সফল, তাদের এই সফলতা কেউ যাতে ছিনতাই করতে না পারে সেটাও তাদের দেখতে হবে। কারণ, এখান থেকে কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এখন যারা উস্কানি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। যারা উস্কানি দেবে তারা আইনের আওতায় আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ/