নিজেদের বর্ণাঢ্য রাজনীতির সূচনা লগ্নে এক অগ্নিযুগেরও সংগ্রামী এই দুই নেতা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সবচেয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তে পঁচাত্তর পরবর্তীতে মাসের পর মাস কারাভোগ করেছেন।
কারাগারের বন্দিশালায় ভাগাভাগি করেছেন দুঃখ-সুখ।
শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে মিনিস্টার হাইটেক পার্ক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের নতুন কারখানার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি ও সভাপতির বক্তব্যে কারা জীবনের অসহনীয় নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তারা।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগকে। ছেলেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছেড়েছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভাপতির নির্দেশে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে আসনটি ছেড়ে দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামের নিরন্তর পথচলা প্রসঙ্গে ধর্মমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এবং তোফায়েল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই সঙ্গে এমএসসি পাস করেছি। এক সঙ্গে আন্দোলন করেছি। ময়মনসিংহ জেলে আমরা এক সময় অনেকদিন ছিলাম। আমরা সুদিন-দুর্দিনের সাথী। কিন্তু বিরোধী সরকারের কাছে কোনোদিন মাথা নত করি নাই। ’
নিজের বক্তৃতার শুরুতেই মতিউর রহমানের উল্লেখ করা কারাভোগের দুঃসহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদও। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৬ সেপ্টেম্বর আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর অনেক নির্যাতন করে এবং ফাঁসির আসামির মতো কনডেম সেলে রাখে। তারপর ময়মনসিংহ কারাগারে মতিউর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়। ’
তিনি বলেন, ২০ মাস তার (মতিউর রহমান) সঙ্গে ময়মনসিংহ কারগারে বন্দি ছিলাম আমি। সেখান থেকে কুষ্টিয়া কারাগারে ১৩ মাস থাকার পর মোট ৩৩ মাস পর মুক্তি পেয়েছিলাম। যার সঙ্গে কারাগারে দিন কাটিয়েছি তিনি আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি।
‘আমার স্ত্রী, আমার মা ও আমার ছোট্ট মা-সহ যখন দেখা করতে আসতো, শ্রদ্ধেয় মতি ভাই তার বাসায় আমার পরিবার থাকতো। আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। ’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়েও কারা নির্যাতনের বর্ণনা দেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ২০০১ সালের দিকে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। মতিউর রহমানকেও গ্রেফতার করে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।
‘আমাকে গ্রেফতার করে ফাঁসির আসামির মতো যেখানে এরশাদ শিকদারের মতো কুখ্যাত আসামি থাকতো সেই রুমে রাখা হয়। প্রায় ১২ দিন পর হাতকড়া পরিয়ে পরে আমাকে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠিয়েছিলো। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের উদাহরণ দিতে গিয়ে নিজের জন্মভিটা ভোলায় ফিরে যান তোফায়েল।
বলেন, ‘ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সেদিন আমার জন্মস্থান ভোলায় গিয়েছিলেন। সেটা এখন গ্রাম না! ছোট্ট বেলা আমরা খালি পায়ে স্কুলে যেতাম। বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে খাল পার হতাম। ’
‘রাস্তাঘাট স্কুল-কালভার্ট কিছুই ছিলো না। আমরা কুপি ও হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তাম। সেই গ্রামে এখন বিদ্যুৎ আছে। মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। কারো হাতে চায়ের কাপ আছে। মানুষজন টেলিভিশন সামনে রেখে চা খায়, মোবাইলে টেলিফোন করে। ছোট বেলা ১০০ ঘরের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০টি কাঁচাঘর ছিলো। ’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ১০০টি ঘর, পাকা ও টিনের ঘর-এই হলো আজ বাংলাদেশ। প্রত্যেকের পায়ে জুতা, সুন্দর শার্ট। স্বাস্থ্য ভালো। দরিদ্র্যতা কমে গেছে। আমরা যখন বিদেশে যাই- বলি, আওয়ার কান্ট্রিজ ইজ ভেরি বিউটিফুল। ‘আমাদের দেশ রূপসী বাংলাদেশ। এই রূপসী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব,’ যোগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
এমএএএম/এমএ