ঢাকা: রাজধানীর সিটি সার্ভিস বাসের টোল বাড়িয়েছে ডিসিসি। ডিসিসি বলছে যাত্রীসেবার মান বাড়াতেই তারা টোল বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ডিসিসির মহাব্যবস্থাপক (টার্মিনাল) আ.শ. ম. এমদাদুদ দস্তগীর বাংলানিউজকে বলেন, শুধু বাস টার্মিনালই নয়। নগরীর সব রাস্তাই ডিসিসির। তাই নগরীর রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে সব বাসকেই টোল দিতে হবে। তিনি বলেন, বাস টার্মিলের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা চেষ্টা করছি টার্মিনালের পরিবেশ আরো কিভাবে ভালো করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বাস টার্মিনাল গুলোর বর্তমানে খুবই বেহাল অবস্থা। যাত্রীসেবা বলতে সেখানে কিছুই নেই। নগরীর সবগুলো টার্মিনালই যেন এক ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরাও কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না ডিসিসির কাছ থেকে। ন্যূনতম সেবা না দিয়েই ডিসিসি বাস টার্মিনাল থেকে টোল আদায় করছে কোটি কোটি টাকা। উপরন্তু এবার নতুন করে টোল বাড়িয়েছে ডিসিসি। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি টার্মিনালে সবসময় উপেতি। পকেটমার, ছিনতাই, টানা পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য সেখানে মামুলি ঘটনা। সব জানার পরও টার্মিনালের পরিবেশ উন্নয়নে ডিসিসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
নগরীর বাস টার্মিনাল গুলো তৈরির পর থেকেই সেখানকার পরিবেশ ছিলো একেবারেই নাজুক। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতায় নগরীর টার্মিনাল গুলো আধুনিক করে গড়ে তুলতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় ডিসিসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর বাস টার্মিনালে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালকে দৃষ্টিন্দন করে সাজানো হয়। একই সঙ্গে টোলের হারও বাড়িয়ে দেয় ডিসিসি। বাস প্রতি টোল নির্ধারণ করা হয় ১৫ টাকা। গত কয়েক বছর টোল না বাড়ালেও এবার ডিসিসি টোলের হার বাড়িয়ে ২০ টাকা করেছে। ডিসিসি পরিবহণ মালিকদের কাছ থেকে টোল আদায় করলেও এই টোল নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকেই। কিন্তু যাত্রীরা কোনো সেবা পাচ্ছেন না।
এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেছেন, সিটি সার্ভিসের বাস টার্মিনাল ব্যবহার করে না। তাই আমরা কাউকে দোল দেবো না।
পরিবহণ মালিকরা বলছেন, টার্মিনাল উন্নয়নের পর বছর কয়েক পরিবেশ ভালো থাকলেও এখন সেখানকার অবস্থা খুব খারাপ। নিয়মিত টয়লেট পরিষ্কার করা হয় না। ঠিকমতো পানিও থাকে না টয়লেটে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে টয়লেটের ভেতরে ঢোকাই দায়। এতে মহিলারা বেশি বেকায়দায় পড়েন। দুরপাল্লার যাত্রীরা বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগে এলে টার্মিনালে বসে অপো করার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই। ভাংগাচোরা কয়েকটা করে চেয়ায়ের থাকলেও বেশির ভাগ যাত্রী দাঁড়িয়েই সময় পার করেন। কোনো টার্মিনালেই খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। খাবারের জন্য ভালো দোকান ও রেষ্টুরেন্টও নেই। এগুলো না থাকায় যাত্রীরা হকারদের কাছ থেকে পানি ও খাবার কিনে খান। ফলে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন অনেকে। বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু টার্মিনালে নিরাপত্তা না থাকায় সেখানে পকেটমার ও ছিনতাই অতি সাধারন ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই নৈশ কোচের যাত্রীরা ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। বাস মালিকরা টার্মিনালে পুলিশি টহল বাড়ানোর দাবি জানালেও ডিসিসি বরাবরই নীরব।
ডিসিসি জানায়, চলতি অর্থ বছর বাস ও ট্রাক টার্মিনাল থেকে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের বছর এই লমাত্রা ছিলো ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ডিসিসি বছর খানেক আগে নতুন করে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালের টোল আদায়ের ইজারা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নিয়ম মানেনি ডিসিসি। টেন্ডার ছাড়াই টার্মিানলগুলো ইজারা দিয়েছে।
২০০৩ সালে ডিসিসি নগরীর তিনটি বাস টার্মিনালের রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত রাজস্ব তুললেও ডিসিসির ফান্ডে টাকা জমা দেয়নি। উপরন্তু সাড়ে ৪ কোটি টাকা মেরে দিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকে পানামা ট্রেডিং কোম্পীকে ইজারা দেয়া হয় ১ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকায়। মহাখালী বাস টার্মিনাল ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৫ টাকায় ইজারা দেয়া হয় রোরা এন্টার প্রাইজকে। গাবতলী বাস টার্মিনাল দিবা এন্টার প্রাইজকে ইজারা দেয়া হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকায়। প্রথম দফায় বেসরকারি ওই কোম্পানী তিনটিকে ২ বছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের ইজারা দেয়া হয়ে ছিলো। পরে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয় আরো ১ বছর। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ডিসিসি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টার্মিনালগুলো থেকে বছর খানেক রাজস্ব আদায় করেছে। এতে বেসরকারি কোম্পানীগুলোর চেয়েও বেশি টোল আদায় হয়েছে। তার পরও অজ্ঞাত কারণে বেসরকারি কোম্পানীর কাছেই টোল আদায়ের ইজারা দিয়েছে ডিসিসি।
বাংলাদেশ সময় ১১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১০