ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পাসপোর্ট অফিসে পুলিশ-দালালের দৌরাত্ম্য

মফিজুল সাদিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১২
পাসপোর্ট অফিসে পুলিশ-দালালের দৌরাত্ম্য

ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁও, বাংলাদেশ সরকারের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন পুলিশ ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছে।

এর আগে কয়েকবার পাসপোর্ট অফিস থেকে দালালদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হলেও দালালরা বার বার ফিরে আসায় অসহায় হয়ে পড়েছেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারাও।



সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দালাল চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে।

দালাল চক্রের সঙ্গে কিছু অসৎ পুলিশ যুক্ত হয়ে দূর দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে পাসপোর্টপ্রতি ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন।

আর যারা টাকা দিতে পারছেন না, তারা শুধু সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসহায় হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

দালাল চক্র শুধু পাসপোর্ট অধিদফতরের মূল ফটক পার করে দিতেই এ টাকা আদায় করছেন। আবার অনেকে দালালের শক্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে পারছে দ্রুত সময়ে কোনো ঝুট ঝামেলা ছাড়াই।

এ বিষয়ে ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে আসা শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, এখন বাজে বেলা ৩টা কিন্তু পাসপোর্ট করা তো দ‍ূরের কথা ভেতরেই ঢুকতে পারছি না। ”

তিনি আরও বলেন, “যারা ১ হাজার করে টাকা দিচ্ছে, তারা ভিআইপি হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ছে কিন্তু আমরা পারছি না। ”

তিনি বলেন, “আমার ভিসা লেগেছে কিন্তু পাসপোর্টের কারণে সমস্যায় পড়েছি। বিদেশে যেতে পারছি না। ”

দালালদের চক্রের সঙ্গে কয়েক জন নারী জড়িত। এদের অন্যতম জোহরা খাতুন। তিনি যেন সবার আত্মীয় হওয়ার কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন। কি করেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “আমার আত্মীয় আছে। ”  

দালাল চক্রের সদস্য জোহরা খাতুন বলেন, “এখানে আমার আত্মীয় স্বজন আসে। ” এর পর সাংবাদিক বুঝতে পেরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন তিনি।

পাসপোর্ট করতে আসা জামিরুল ইসলাম বলেন, “এটা আমার কাছে পাসপোর্ট অফিস মনে হয় না। মনে হয় ঘুষের অফিস। ঘুষ দিলে ভেতরে প্রবেশ করা যায়, ঘুষ না দিলে সারদিন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ”

“আবার অনেক দালাল আছেন যারা সকাল থেকে এসে সামনের সারির জায়গা দখল করে পরে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে তার অবস্থান বিক্রি করেন। ”

অনেক পুলিশ সদস্য আবার পাসপোর্ট অফিস থেকে সহজ সরল মানুষের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাদের হয়রানি করছেন এবং বাসায় গিয়ে টাকা চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এমনই একজন ভুক্তভোগি মিরপুর থেকে পাসপোর্ট করতে আসা ইসমাতার বেগম জানান, পুলিশ কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম পাসপোর্টের নামে টাকা নেওয়ার জন্য বাড়ি পর্যন্ত যান। টাকা না দিলে পাসপোর্ট আটকে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

ইসমাতারা বলেন, “আমি জার্মান টেকনিক্যাল থেকে সরকারিভাবে গার্মেন্টস ভিসায় বিদেশে যাব, কিন্তু আমি তো পাসপোর্টই পাচ্ছি না ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশ শুধু টাকা চায়। ”

কিন্তু ইসমাতারা বেগমের অভিযোগ অস্বীকার করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমি টাকা খাই না। অনেকে টাকা দিতে চায়। হয়তো তাদের টাকা খাইনি বলেই আমার নামে দুর্নাম ছড়ানো হচ্ছে। ”
 
তিনি আরও বলেন, “পাসর্পোট করতে আসা ইসমাতারার ভাই আমাকে অনেক দিন টাকা দিতে এসেছে কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। ”

পাসপোর্ট করতে আসা অনেকেই সেলিম নামের পুলিশ সদস্যকে দেখিয়ে দিয়ে জানান, তিনি টাকার বিনিময়ে ভেতরে লোক প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “আমি কারো কাছ  থেকে টাকা নেয়নি। ” যারা এসব কথা বলছে, তাদের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার অনুরোধ করেন তিনি।

তবে দালাল ও পুলিশের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করেন ইমিগ্রেসন অ্যান্ড পাসপোর্টের পরিচালক মো: সিরাজ উদ্দীন বাংলানিউজে জানান, দালাল চক্রের ব্যাপারে র‌্যাব ও পুলিশকে বলেছি। দালালদেরও তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সুযোগ বুঝে আবার তারা ফিরে আসা।

তিনি বলেন, “কতিপয় পুলিশ এর সঙ্গে জড়িত। ”

তিনি পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে বলেন, “আমরা তার ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই রাজার বাগ পুলিশ ক্যাম্পে চলে গেছে। ”
    
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ সদস্যরা কিছুদিনের জন্য এখানে দায়িত্ব পালন করে। তাই আমরা অভিযোগ পেলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ তারা এখানে ১০ থেকে ১৫ দিন থাকে। এরই মধ্যে তাদের ডিউটি পরিবর্তন হয়। ”

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১২
এমএস/সম্পাদনা: নাজিম উদ দৌলা সাদি, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।