ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

দিনাজপুরে স্থানীয় জাতের সুগন্ধি ধান চাষে উৎসাহ কমছে

হাসান আজাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১০
দিনাজপুরে স্থানীয় জাতের সুগন্ধি ধান চাষে উৎসাহ কমছে

দিনাজপুর থেকে: দিনাজপুরে স্থানীয় জাতের সুগন্ধি ধানের চাষ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। সুগন্ধি চালের স্থান দখল করে নিচ্ছে উচ্চ ফলনশীল জাত (উফশি) এর ধান ব্রি-৩৪।

ব্রি-৩৪ সুগন্ধি জাতের হলেও এটি ধান গবেষণা ইনষ্টিউট থেকে গবেষণা করে বের করা।  

গত বছরের তুলনায় এ বছর সুগন্ধি ধান ৫ হাজার ২শ’ ৩ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নজরুল ইসলাম মন্ডল।
 
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায় তারা স্থানীয় জাতের সুগন্ধী ধানের চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন।

দিনাজপুরের স্থানীয় জাতের সুগন্ধি ধানের মধ্যে কাটারিভোগ, জিয়া কাটারি, বাদশাবো, বেগুনচিনি, চিনি কাটারি, কালজিরা প্রজাতিগুলো উল্লেখ্যযোগ্য।

ফিলিপাইন থেকে আসা ‘ফিলিপাইন কাটারি’ ও পাকিস্তান থেকে আসা বাসমতিরও চাষ হয় এই এলাকায়।

নজরুল ইসলাম মন্ডল জানান, গত মওসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় সুগন্ধি বা অ্যারোমেটিক ধানের চাষ হয়েছে ২২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মওসুমে তা কমে ১৬ হাজার ৮৫৩ হেক্টরে এসে ঠেকেছে।

জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সুগন্ধি ধানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলাতে । এছাড়াও বিরল, বীরগঞ্জ, কাহারোল  ও খানসামাতেও সুগন্ধি ধানের চাষাবাদ করা হয় বলেও উপ-পরিচালক জানান।

দিনাজপুরের স্থানীয় জাতের সুগন্ধি ধানের স্থান দখল করে নিয়েছে ব্রি-৩৪। কারণ এর ফলন বেশি। কৃষকরাও তাই  এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ জমিতে ব্রি-৩৪ এর চাষ হচ্ছে।  

স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত বছর জেলায় ব্রি-৩৪ চাষ হয়েছে মোট হয়েছে ১২ হাজার ৭২৪ হেক্টর জমিতে। আর চলতি বছর চাষ হয়েছে ২২ হাজার ৮৩৯ হেক্টর জমিতে।

এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি ও দিনাজপুর চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোসাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় জাতের অ্যারোমেটিক ধান কম ফলনশীল; তাছাড়া  চাষাবাদের ঝামেলা অনেক বেশি। তাই এ ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। স্থানীয় জাতের অ্যারোমেটিক ধান  চাষাবাদ করতে হলে জৈব সার ব্যবহার করতে হয়। এতে খরচও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, উফশি জাতের ব্রি-৩৪ চাষা করে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। ফলন বেশি। দামও পাওয়া যায় বেশি ।  

দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতোয়ালির সুগন্ধি ধানের আবাদকারী কৃষক আজমান আলী সরকার বাংলানিউজকে জানান, গত বছর কাটারীভোগ ধানের চাষ করেছি। কিন্তু বিক্রি করে চাষাবাদের খরচটাও উঠে আসেনি। এ বছর চাষ করেছি ব্রি-৩৪। এতে খরচও কম, আয়ও বেশি।

একই কথা বললেন আরাফাত মিয়া, সুহায়াল, মতিউর রহমান, বিল্লাল হোসেনসহ আরও অনেকে।

এছাড়া বীরগঞ্জ, কাহারোল, খানসামা এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এই সকল অঞ্চলে ব্রি-৩৪ এর আবাদই বেশি।

তবে কেউ কেউ নিজেদের জন্য স্থানীয় জাতের সুগন্ধি ধান চাষাবাদ করছেন।

কাহারোলের আলী আজম অবস্থাপন্ন একজন কৃষক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে আমি ব্রি-৩৪ জাতের ধান করছি। তবে ২/৩ হেক্টর জমিতে নিজের জন্য স্থানীয় জাতের কাটারীভোগ বা জিরা কাটারী ধানের চাষ করি। ’

অবৈধ হলেও চাষ হচ্ছে স্বর্ণা

রাজধানীসহ সারাদেশের তৃণমূল মানুষ, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কাছে স্বর্ণা একটি পরিচিত চালের নাম। দেশের দিনাজপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, জযপুরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধায় এই ধানের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। অবশ্য সরকারিভাবে এ ধানের চাষ  অনুমোদিত নয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নজরুল ইসলাম মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলি, খানপুর, কমলপুর, আমতলি, আমবাড়ী দিয়ে বাংলাদেশের কৃষকরা ভারতে যাচ্ছে। ভারত থেকে ফেরার পথে তারা নিজেরা ভারতীয় স্বর্ণা ও নেপালি স্বর্ণা বীজ নিয়ে আসে। পরে এই বীজ দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করে। স্বর্ণা  নেপাল ও ভারতীয় উচ্চ ফলনশলি জাতের ধান। এর ফলন বেশি হচ্ছে। আবার সমস্যাও আছে। ’

কি সমস্যা আছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই ধানে ‘খোল পোড়া’ নামের একটি রোগ হয়। এই রোগটি কেবল স্বর্ণা ধানেই হয়। এই রোগ হলে পুরো জমির ধানই অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি এই রোগের কারণে রোগাক্রান্ত ধান গাছগুলো মরে গিয়েও মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।

অনুমোদিত না হলেও কীভাবে চাষাবাদ হচ্ছে- জানতে চাওয়া হলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছি। এখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ না আসার আগে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।