ঢাকা: শিক্ষানীতির ব্যাপারে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সঙ্গে সরকারের কোন সমঝোতা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ।
তিনি বলেছেন, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, জাতীয় স্বার্থে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সাভারে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিপিএটিসিতে গিয়ে রোববার সন্ধ্যায় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত স্বাক্ষাতকারে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, দলীয় ও সংকীর্ণ দৃষ্টিতে গত ২৬ ডিসেম্বর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছিলে। তাদের হরতাল বাতিলের সঙ্গে শিক্ষানীতি নিয়ে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই বা ছিলো না।
শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে প্রথমে মন্ত্রিসভায় পরে বিস্তারিত আলোচনার পর পাশ করা হয়েছে সংসদে। এখন কার্যকরের প্রক্রিয়ায় আছে। হঠাৎ করেই এ হরতাল কেন? এতদিন তারা কোথায় ছিলেন? উল্টো প্রশ্ন রাখেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বই ও লেখাপড়ার অতিরিক্ত বোঝা তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে-প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সমর্থন করে তিনি বলেন, আমরা সিলেবাসকে যুগোপযোগী করার কাজ শুরু করেছি। তবে রাতারাতি তা পরিবর্তন সম্ভব নয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি ধারাবাহিকতা চলছে, এর ওপর কখনো হাত দেওয়া হয়নি, ১৯৯৫ সালে সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিলো। আমরা চাই নতুন সিলেবাস। শিক্ষা মানেই হচ্ছে জ্ঞান ও দতা অর্জন। যা জীবনের কাজে লাগবে, আমরা অপ্রয়োজনীয় অংশ ফেলে দিয়ে, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন সিলেবাস তৈরির প্রক্রিয়া এরইমধ্যে শুরু করেছি।
মন্ত্রী বলেন, আগে ৪০ ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হলেও অন্যরা পুরনো বই নিয়ে স্কুলে যেতো। তাদের অনেকেই মন খারাপ করে স্কুলে যেতো না। তবে এ বছরে নতুন পাঠ্যপুস্তক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
কোথাও কোথাও বই পৌঁছেনি, এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছে যাবার বিষয়টি আমি নিজে মনিটরিং করেছি।
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য, সবক্ষেত্রে শিক্ষার মান বাড়িয়ে সমতা আনা। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও ঝড়ে পড়া ঠেকাতে সকল শিক্ষার্থীর হাতে এ বছর নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এ প্রচেষ্টা সফল হয়েছে দাবী করে তিনি বলেন, গতবার বই দেয়া হয়েছিলো ১৯ কোটি এবার দেয়া হলো ২৩ কোটি ২২ লাখ। এতেই বোঝা যায় ড্রপ আউট কমেছে।
প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষার যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন প্রায় ৪৮ ভাগ শিক্ষার্থী এ পর্যায়ে ঝড়ে পড়ে। এতে করে পরিক্ষার্থীদের সামনে একটি লক্ষ্য স্থির করা সম্ভব হয়েছে, এখন তারা মনে করছে, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত টিকে থাকতে পারলে একটা সনদ পাবো। অনেকের এখান থেকেই দূর হচ্ছে পরিক্ষাভীতি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অনগ্রসর গোষ্ঠিকে একটি মানে পৌছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এতে করে শিক্ষার্থীদের পরিক্ষার সংখ্যা বেড়ে গেছে কি’না-প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমন অনেকেই ভাবেন আসলে তা নয়, বাড়েনি বরং পরিক্ষা কমেছে। আগে বার্ষিক পরিক্ষার বাইরে মেধাবীদের বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হতো এবার কিন্ত তা নেই।
তবে এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরিক্ষায় পাশের হারে সরকার সন্তুষ্ট নয় জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই ফলাফল প্রমান করে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান ভালো না। আমরা এটা নিয়েই কাজ করছি, তিনি বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেই এখানে এসেছি, সেখানে কেন এতবেশী ড্রপ আউট ও ফেল করলো তার কারণ জানতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হয়নি না পাকিস্তানে না বাংলাদেশে। ’
তিনি বলেন, আমাদের নেওয়া শিক্ষানীতিই বাস্তবায়নের পথে। আমরা একবছর ধরে জনমত নিয়ে এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। আমার লক্ষ্যই ছিলো কোন দলীয় নয়, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন। যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তা না হলে কখনোই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হবে না । বিতর্কই বাড়বে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেই ১৯৬২ সাল থেকে শিক্ষানীতির জন্যে আন্দোলন করছি। এর আগের সকল শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে মানি না মানবো না শ্লোগান নিয়ে জনতা রাস্তায় নেমেছে। ’
সরকারের নতুন শিক্ষানীতিকে বিরোধীদলের পক্ষ থেকেও সমর্থন জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক প্রকাশ্যেই এই নীতি সমর্থন করেছেন। ’
বাংলাদেশ সময় ২০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১১