ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বারডেমে লাশ গোসলের ব্যবসা

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১২
বারডেমে লাশ গোসলের ব্যবসা

ঢাকা: মৃত ব্যক্তি নিয়ে ব্যবসায়ের ফাঁদ পেতেছে বারডেম হাসপাতাল। মৃত ব্যক্তির গোসল এবং কাফন একটি স্বেচ্ছাসেবী কাজ হলেও বারডেম এটিকে নিয়েছে বাণিজ্য হিসেবে।

গোসল করিয়ে, চা-পাতা আর কর্পূর দিয়ে একটি লাশের কফিন তৈরি করতে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছে বারডেমের মরচুয়ারি শাখা।

সম্প্রতি দীর্ঘদিন বারডেমে চিকিৎসা নেয়ার পর মারা যান মালিবাগের আক্তার হোসাইন (৫৮)। আক্তার হোসাইনের ছেলে সোহরাব হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, হার্টে রিং পড়ানোর পর ডাক্তাররা বলেছিলেন, ঠিক হয়ে যাবে। এরপর হাসপাতালে কিছুদিন রাখার পর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তার বাবাকে।

সোহরাব বলেন, বাবাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার সময় ওষুধের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অন্য কোনো পরামর্শ দেয়া হয়নি। এক সপ্তাহ পর বাবা সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হলে আবার হার্ট ফেইল করে। পরে আবার বারডেমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আমাদের ধমক দেন, হাঁটতে মানা করা হলো না কেন?

সে রাতেই মৃত্যু হয় আক্তার হোসাইনের। সেই একদিনের জন্যেই হাসপাতালের বিল হয় ৪০ হাজার টাকা। লাশ নিয়ে বের হওয়ার সময় যে বিল দেখানো হয়, সেখানে লাশের গোসল এবং কাফন বাবদ খরচ দেখানো হয় ৫ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এমন একটি মুহূর্তে ‘নীরবে বিল দিয়ে আসা ছাড়া’ মৃতের স্বজনদের আর কিছু বলার থাকে না।

মঙ্গলবার সকালে বারডেমের মরচুয়ারি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির গোসলে খরচ দিতে হয় এক হাজার টাকা, প্রতি পাউন্ড চা পাতা ৪০ টাকা, ছোট কর্পূরের প্যাকেট ৫০ টাকা, কাফন দেড় হাজার টাকা, বক্স এক হাজার টাকা, পলিথিন ৫০ টাকা এবং বরফ ২০০ টাকার। সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও লাশ মর্গে রাখতে হলে প্রতি ২৪ ঘণ্টার জন্যে দিতে হয় ৯০০ টাকা করে।

মরচুয়ারি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি হোসেইন বাংলানিউজকে জানান, এখানে শুধু বারডেমের রোগী মারা গেলে এবং কর্মচারীদের লাশ গোসল ও কাফন পড়ানো হয়, বাইরের নয়। তবে এখানে মারা গেলেই যে এখানে গোসল এবং কাফন করাতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক নয় বলে জানান তিনি।

কিন্তু মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনতো চাইবে হাসপাতাল থেকেই লাশের গোসল ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সারিয়ে বের হতে। সে মুহূর্তে খরচের কথা মাথায় আসে না, সেসময় এ ধরনের খরচ কি বেশি নয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ``আমরাতো বাধ্য করিনি। আর এটা এখানকার নিয়ম। ``

কাঁটাবনের আখেরি বিদায় স্টোরের প্রোপ্রাইটার নূরে আলম বাংলানিউজকে বলেন, কাফনের কাপড়ের মূল্যতো এতো বেশি হবার নয়। কাফনের ভাল কাপড়ের মূল্যও হাজার টাকার বেশি নয়। আর চা পাতা, কর্পূর, পলিথিন সব মিলিয়ে খরচ দেড় হাজার টাকার বেশি উঠবে না। আর ধরেন কফিন এক হাজার টাকা।

মৃত ব্যক্তির গোসলের জন্যে এক হাজার টাকা নেয়াকে ইসলামি দৃষ্টিতে ও মানবিক দৃষ্টিতে ভালভাবে দেখছেন না ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াহ ও সংস্কৃতি শাখার (প্রধান কার্যালয়) মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান মোহাদ্দিসা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রক্রিয়া। মৃত ব্যক্তির গোসল পরিবারের লোকজনকেই করাতে হয়। তা না হলে প্রতিবেশী বা নিকটজন। এ ধরনের কেউ না থাকলে স্বেচ্ছায় কেউ মৃত ব্যক্তির জন্যে এটুকু করতে পারেন। তবে এ জন্যে ফিস ধার্য করা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, তবে কেউ যদি এটাকে পেশা হিসেবে নেয়, সেখানে অবশ্যই মানবিক দৃষ্টি রাখতে হবে। যেন কোনো ধরনের জুলুম না হয়। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনে যদি এতো টাকা খরচ হয়, তবে তো মৃত্যুও কঠিন হয়ে পড়বে।

বারডেম হাসপাতালের এ খরচ আরো সাশ্রয়ী হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। কারণ, মৃত্যুর পর স্বজনরা চায় দ্রুত লাশ বের করে নিতে। সেখানে যেন টাকা বানানোর নির্মম কোনো ফাঁদ না থাকে।

বাংলাদেশ সময়:  ০৯৪০ ঘণ্টা, ০৮ নবেম্বর, ২০১২
এমএন/একে; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।