মহেশখালী (কক্সবাজার): খইল্লা, টুইট্যা, নেইজ্যা, বইদ্যা, খুইল্লা, কালা জাহাঙ্গীর, কালা বদা, নাজু, সিরু, জোনাব আলী, জালাল আর সিরাজউদদৌলার রয়েছে দস্যূবাহিনী। সন্ত্রাসের জনপদ কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় এরা সন্ত্রাসী, ডাকাতি আর সাগরে দস্যুতা করে।
স্থানীয়রা জানালেন, দুই সন্ত্রাসী সৈয়দ নুর ও জিয়া উদ্দিনের বাহিনীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলে আসছিলো বহু বছর ধরে। কিন্তু ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর নূর বাহিনীর প্রধান সৈয়দ নুর র্যাবের সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হন। এরপর মহাজোট সরকারের প্রথম দিকে র্যাবের হাতে আটক হন অপর বাহিনী প্রধান জিয়া উদ্দিন।
কিন্ত সন্ত্রাসই যাদের একমাত্র শিক্ষা তা কোথায় যাবে। ফলে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে এই দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর ছেলে-ছোকরারা। যারা এখন এক একটি মূর্তিমান ত্রাস। এছাড়া কয়েকটি নতুন গ্রুপেরও জন্ম নেয়। এসব গ্রুপের অনেকেই আবার বাবা ডাকাত ছিলেন বলে ছেলেও ডাকাত। আবার ছেলেদের ছেলেরাও ডাকাত হয়ে উঠছে।
মহেশখালী উপজেলায় ১ টি পৌরসভা এবং ৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে কালারমারছড়া, হোয়ানক ও শাপলাপুর এলাকায় এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের অবস্থান বেশি। এসব একালার গহীন পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা নিজেদের অস্ত্র কারখানায় অস্ত্রও তৈরি করছে।
এলাকাবাসী জানায় অর্ধশতাধিক বাহিনীর লোক সংগ্রহিত হয় প্রাগৈতিহাসিক পদ্ধতিতে। বাহিনী প্রধানরা আসেন বাড়ি-বাড়ি। বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “চার ছেলের দুটোকে আমার বাহিনীতে দিতে হবে। ” আবার যার দুটি ছেলে আছে তার একটাকে জোর করে নেওয়া হয় ডাকাতিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী বাংলানিউজকে বলেন, “কেউ তার সন্তান ডাকাত সর্দারদের কাছে পাঠাতে না চাইলে, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। অথবা রাতের আধাঁরে আগুন দেওয়া হয় বাড়িগুলোতে। ”
অর্থের জন্যই কেবল ডাকাতি করেন না মহেশখালীর ডাকাত বাহিনী। তারা দস্যুবৃত্তি করে মূলত: এলাকার আধিপত্যের জন্য। আর এই আধিপত্য কায়েমের পরই শতশত কোটি টাকার অস্ত্র, মাদক, মানব পাচার, বনচুরি, চুরি, ডাকাতি, চিংড়ি ঘের, লবন ক্ষেতের চাঁদা, নৌ-ডাকাতিসহ নানা আয় এসে জমা হয় বাহিনী প্রধানের হাতে।
ডাকাতরা উপজেলার গোরকঘাটা কুতুবজোম ও ঘটিভাংগা সড়ক, শাপলাপুর বালুর ডেইল সড়ক, উত্তর নলবিলা, মাতারবাড়ি সড়কের চিতাখোলা সংলগ্ন এলাকা এবং শাপলাপুর ষাটমারা সড়ক এলাকা, কালারমারছড় জনতাবাজার সড়ক ও চাইল্লাতলী মাতারবাড়ী সড়কে ডাকাতি করে।
মহেশখালীর চিংড়ি, পান ও লবনচাষীরা এইসব ডাকাতদের ভয়ে সারাক্ষণ সন্ত্রস্ত থাকে।
![rover rover](../../../images/PhotoGallery/2012December/rover-0320130102213828.jpg)
গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখলেও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী নিয়ে এদের খুব একটা ভয় নেই। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনির সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ায় ডাকাতরা।
ডাকাত বাহিনীর খতিয়ান
কালারমারছড়ার ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহঘোনা এলাকার উকিল আহম্মদের ছেলে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান কালা জাহাঙ্গীর। লবণ চাষীদের থেকে চিংড়িঘের থেকে চাঁদা তোলাই তার বাহিনীর কাজ। ট্রিপল মার্ডারসহ তার বিরুদ্ধে ১৮ টি মামলা রয়েছে।
একই এলাকার আবুল হাছিমের ছেলে নুরুল আলম প্রকাশ কালাবদাও ডাকাত সর্দ্দার। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ও পুলিশের ওপর হামলাসহ ১৮ টি মামলা রয়েছে।
শাহঘোনা এলাকার ইসলাম মাতবরের ছেলে নুরুল আমিন লেদু। চার ছেলেকে নিয়ে ছিলো তার ডাকাত দল। তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যাসহ ৬টি মামলা রয়েছে। তবে লেদুর ছেলে জিয়াউর রহমান সম্প্রতি এলাকায় নতুন বাহিনী গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। তার ভাই মিজানুর রহমানও রয়েছেন এই দলে। মিজানের বিরুদ্ধেও ৩টি হত্যা মামলাসহ ৭টি মামলা রয়েছে। পুলিশের অভিযানে আটকের পর এই দুই ভাই-ই এখন কারাগারে।
নুরুল আমিন লেদুর অপর দুই ছেলে আতিকুর রহমান ৬টি হত্যাসহ ৯টি মামলা ও আনিসুর রহমান তিনটি হত্যাসহ চারটি মামলায় হুলিয়া নিয়ে ডাকাতি করে চলেছেন।
একই এলাকার জালাল আহমদের ছেলে হাসান নুরীও এখন পূর্ণ বয়স্ক ডাকাত। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা সহ ৮টি মামলা রয়েছে। তাকেও আটক করে কারাগারে পুরেছে পুলিশ।
মোহাম্মদ শাহঘোণার আব্দুল আলীর ছেলে আইয়ুব আলী ৬টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা মাথায় এবং আবু তাহের প্রকাশ লালুর ছেলে কামাল ৫টি হত্যাসহ ৭টি মামলা মাথায় নিয়ে ডাকাতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোস্তাক আহমেদের ছেলে মিজানের বিরুদ্ধে ৫টি হত্যাসহ ৮টি মামলা রয়েছে। মসলম বাহাদুরের ছেলে জাফরের বিরুদ্ধে ৫টি হত্যাসহ ৮টি মামলা।
সিদ্দিক মাতবরের ছেলে নাজেম উদ্দিন প্রকাশ নাজু ডাকাত। ৫টি হত্যাসহ ৬টি মামলা। সিদ্দিক মাতব্বরে পাঁচ ছেলে। একজন সরওয়ার। তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যাসহ ৬টি মামলা। অপর তিনজন যথাক্রমে সাদ্দামের বিরুদ্ধে ২টি হত্যাসহ ৪টি মামলা। নাজমুলের বিরুদ্ধে ২টি, তোফায়েলের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
রজি উল্লাহর ছেলে নুরুল ইসলাম প্রকাশ দাইরগ্যা। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা সহ ৫টি মামলা।
ফজল হকের ছেলে মইনুল হোসেন প্রকাশ সোহেইল্ল্যা। তার বিরুদ্ধের ৪টি হত্যাসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। তার ভাই লোকমানের বিরুদ্ধেও ৪টি হত্যাসহ ৫টি মামলা ও অপর ভাই দোয়েল্ল্যার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
আধারঘোণার নেজামুল হকের ছেলে রুহুল কাদের বাবুলের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যাসহ ৬টি মামলা।
![rover rover](../../../images/PhotoGallery/2012December/rover-0220130102213821.jpg)
মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে বাদলের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যাসহ ৬টি মামলা। তার ভাই মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ ৪টি মামলা। কালা মিয়ার ছেলে মকছুদ আলমের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলা সহ আটটি মামলা রয়েছে। তার ভাই আবু তাহেরের বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা মামলাসহ আটটি মামলা ও আবু ছালেকের বিরুদ্ধে ২টিসহ চারটি মামলা আছে।
মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে আব্দুল করিম প্রকাশ বদাইয়ার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। তার ভাই সাইফুলের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যাসহ ৯টি, আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে ৩টিসহ আটটি, মনু মাঝির বিরুদ্ধে ৫টি ও মাহামুদুল করিমের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে।
ভেটকা মিয়ার ছেলে নুরুল হকের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ ৯টি মামলা।
ফকিরজুম পাড়ার মনিরুজ্জামানের ছেলে মো.ইলিয়াছের বিরুদ্ধে গলাচিপা থানার অস্ত্রলুট মামলা সহ ৯টি মামলা রয়েছে। তার ছেলে আলী আকবরের বিরুদ্ধেও রয়েছে ৫টি মামলা।
দক্ষিণ ঝাপুয়া এলাকার জালাল আহমদের চার ছেলে ডাকাত। এক ছেলে মীর কাশেম (বর্তমান চেয়ারম্যান) গলাচিপা থানায় অস্ত্র লুটের মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ১৬টি মামলা। দ্বিতীয় ছেলে বাবরের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৭টি মামলা। অপর দুই ছেলে সিরাজউদ্দৌলা ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রয়েছে যথাক্রমে ১৯ ও ১৬টি মামলা।
একই এলাকার আবু ছৈয়দের ছেলে নাজেম উদ্দিন প্রকাশ নাজু ডাকাত। ৬টি হত্যাসহ ২০টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মো.হোছেনের ছেলে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ৫টি হত্যাসহ ১১টি মামলা। মুরাদের ছেলে খোরশেদের বিরুদ্ধে রয়েছে চার হত্যা মামলাসহ ১৭টি মামলা। ইসমাইলের ছেলে জাফরের বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি হত্যাম মামলাসহ আটটি মামলা। পুচুইন্যার ( হোসেন) ছেলে সিরু ডাকাতের বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি হত্যা মামলাসহ রয়েছে ১০টি মামলা । বাবরের ছেলে পারুলের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ ১৪টি মামলা ও শওকতের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ ৪টি মামলা রয়েছে। মুরাদের ছেলে ইয়াছিনের বিরুদ্ধে রয়েছে তিনটি হত্যা মামলাসহ ১১টি মামলা। সাবিবরের ছেলে শুক্কুরের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। রহমত উল্লআর ছেলে পুতিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। মোহাম্মদ শরীফের ছেলে বাদশার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ ৭টি মামলা রয়েছে। উলা মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ ৫টি ও বশির আহমদের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। আলী আহমদের ছেলে বাদশার বিরুদ্ধে হত্যাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। মোহাম্মদ সুরতের ছেলে আবছারের বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। চিকনি পাড়ার ছামাদের ছেলে মনির আলম মইন্যার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ ৬টি মামলা রয়েছে।
হোয়ানক ইউনিয়নের কাঠালতলী পাড়ার ছিদ্দিক আহমদের ছেলে ডাকাত জালালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ২২ মামলা ও ডাকাত ইসমাইলের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৩ টি মামলা রয়েছে। জালাল উদ্দিনের ছেলে ডাকাত ওসমানের বিরুদ্ধে ও হত্যাসহ ১৩টি মামলা আছে। কালাগাজীর পাড়ার আবুল কালামের ছেলে ডাকাত পারভেজের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৩টি মামলা ও আহমদ জামালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৩টি মামলা আছে।
![rover rover](../../../images/PhotoGallery/2012December/rover-0120130102213812.jpg)
কালাবদার বাহিনী: সুমন প্রকাশ ডাকাত সুনাইয়া, সানাউল্লা, রবি আলম, মোহাম্মদ আলী ডাকাত, রসুইল্লা, আব্বাস, রশীদ ডাকাত, আবু জাফর আবু জাহেল ও নাজু প্রমূখ।
কালা জাহাঙ্গীর বাহিনী: বাদশা, কায়সার, জয়নাল, বাচ্চু, ফরিদ, রমজান আলি, লোকমান, খোকন, এবাইদ্যা, মঞ্জুর, রাসেল, জসিম প্রমূখ।
কাশেম বাহিনী: সারোয়ার, মান্নান, লোকমান, বাক্কুর, টুকু, শুক্কুর, বইস্যা, রশীদ, শাহজাহান।
খলিল বাহিনী: মাহামুদ্দুল্লাহ, শাহজাহান, মজিদ, হেলাল প্রমূখ।
বদাইয়ার বাহিনী: বাদল, মকসুদ, আহমদু, মাহাবুব, সালাউদ্দিন, খোরশেদ প্রমূখ।
জালাল বাহিনী: জসীম, হেলাল, ইসমাইল, ওসমান, পারভেজ, আহমদ জামাল, আফসার, নুরুল আমিন, মৌলভী জালাল, আমির হোসেন, আক্তার, আবু তাহের, রমিজ প্রমূখ।
জোনাব আলী বাহিনী: জোনাব আলী মেম্বার, আবু শামা, আবুল কাশেম, আবুল ফজল, আবু তাহের, আইয়ুব আলী, রফিক, নেছার, সোহেল, কালাইয়া, ইউনুস,আনোয়ার, দেলোয়ার, কামাল, নাসির ও এনাম প্রমূখ।
এনাম বাহিনী: এনামুল হক চৌধুরী (হোয়ানক ইউপি চেয়ারম্যান), গোরা বাশি, আহসান উল্লাহ, জসিম-১, জসিম-২, স্বপন, ধলাইয়া, সেলিম, শাহজাহান, ঝন্টু, রামদে, আব্দুস সাত্তার, ননাইয়া, মিন্টু, নুরুল হুদা, আলমগীর প্রমূখ।
খুইল্লা বাহিনী: অস্ত্র কারিগর ফরিদসহ ৪/৫ জন।
বাংলাদেশ সময় ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১২
এমএমকে