ঢাকা: কবি কাজী রোজী বলেছেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি না হয়ে যে রায় হয়েছে, সেই রায়ে আশাহত। কষ্ট পেয়েছি, আঘাত পেয়েছি।
এই রায়ে জনগণকে চপেটাঘাত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করে তা পুনর্বিবেচনারও আহ্বান জানিয়েছেন। প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবী রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল করা উচিৎ বলেও মনে করেন।
বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় তার ধানমণ্ডির বাসভবনে কবি কাজী রোজীর এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি তৈরি হয়ে আছেন শাহবাগের সমাবেশে আসার জন্য, যেখানে কাদের মোল্লার রায় বাতিল করে তাকে ফাঁসির রায় দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে টানা আন্দোলনে করছেন সর্বস্তরের মানুষ। বাংলানিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি চলে যান সেখানে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চিহ্নিত খুনি-ধর্ষক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। কাজী রোজী এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ৪র্থ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। তিনি তার সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শহীদ বুদ্ধিজীবী কবি মেহেরুন নেসাকে সপরিবারে হত্যার বর্ণনা দেন।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা দ্বিতীয় অভিযোগেও ছিল, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুন নেসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন। এ অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
একান্ত আলাপচারিতায় কবি কাজী রোজী আরও বলেন, “কবিতার মাধ্যমেই কবি মেহেরুন নেসার সঙ্গে আমার পরিচয়। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের আমি থাকতাম সি ব্লকে আর সে (মেহেরুন নেসা) থাকতো ডি ব্লকে। মিরপুরে অবাঙালিদের অপতৎপরতার হাত থেকে রক্ষার জন্য, তাদের নিপীড়ন ও নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা ’৬৭ সালে একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করি। ”
কাজী রোজী বলেন, “তখন মিরপুর ছিলো বিহারিপট্টি বা অবাঙালিদের এলাকা। আমি ছিলাম সেই কমিটির সভাপতি আর মেহেরুননেসা ছিল সদস্য। আমরা বাঙালিরা যেন সুষ্ঠুভাবে জীবন চালাতে পারি, সেজন্যই এ অ্যাকশন কমিটি ছিল। ”
‘‘কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আমি ট্রাইব্যুনালে বলেছি, আমি কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হওয়ায় মনে আশা বেঁধেছিলাম, কাদের মোল্লারও সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে পাবো। কিন্তু কেন পাইনি জানি না। তার ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। ”
তিনি বলেন, “এ বিচার প্রহসন কি না জানি না। শুধু জানি, এ রায়ে জনতাকে চপেটাঘাত করা হয়েছে। বাংলার মানুষ এ রায় চায়নি। তারই প্রতিফলন শাহবাগে এই গণআন্দোলন অধ্যায়ের সূচনা। ”
তিনি বলেন, “২৫ মার্চ আমি মেহেরকে বলেছিলাম, বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। মেহের বলেছিল, দুই ভাই এবং মা নিয়ে আমি কোথায় যাবো। ২৭ মার্চ ওর বাড়িতে ঢুকে সবাইকে কাদের মোল্লাসহ বিহারি আর পাকিস্তানিরা হত্যা করে। ”
কবি রোজী বলেন, “ওরা যখন মেহেরদের বাড়িতে ঢোকে, তখন মেহেরের মা কোরআন বুকে চেপে বলেছিলেন, আমরা তো মুসলমান। আমাদের কেন মারবেন? তখন তারা বলেছিল, আমরা যা করতে এসেছি তা করবোই। সেই কাদের মোল্লার ফাঁসি না হয়ে যে রায় হয়েছে, সেই রায়ে আশাহত। কষ্ট পেয়েছি, আঘাত পেয়েছি। এ রায় মানতে পারি না। ’’
এদিকে মঙ্গলবার চিহ্নিত ও প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেওয়ার পর রায়ের বিরুদ্ধে বিকেল থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে তারুণ্যের প্রতিবাদ চলে রাতভর। দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকেই চলছে এ আন্দোলন।
আন্দোলনে আসা সর্বস্তরের মানুষ ও সংগঠকরা বলছেন, রায় বাতিল করে কাদেরের ফাঁসির রায় না দেওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৩
এআর/জেএ/ সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]