ঢাকা: যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবির রাজাকারের বিরুদ্ধে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ৪২তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে বাংলানিউজকে একথাই বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী অব্যাহত তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যে গোষ্ঠী সেসময় গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ করেছিলো, যারা স্বাধীনতা ও বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি তারা আজ জাতীয় পতাকা পোড়াচ্ছে, শহীদ মিনার ভাঙছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিক আমির হোসেন আমু বাংলানিউজকে বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতি যেভাবে ঐক্য গড়েছিলো আজ তাদের পরাজিত দোসরদের বিরুদ্ধেও একইভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিলো সমস্ত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক। তার ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা ছিলো। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এক দিকে বাঙালি অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলে আরেক দিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।
তিনি বলেন, তখনকার প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয় এ কথা ঠিক, তবে আজ যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে আজকের তরুণ প্রজন্ম তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ফুঁসে উঠেছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিক দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এক কঠিন সময় কঠিন লড়াইয়ে আছি। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। কোনো উপায় নেই। এ জন্য ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেভাবে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো সেই একইভাবে বর্তমান প্রেক্ষাপটেও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য্।
যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, সাম্প্রদায়িক, নাশকতামুলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। রাষ্ট্রকে আক্রমণ করছে, পুলিশ হত্যা করছে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতেই হবে। জনগণের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। আর সে ডাক আসতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেই, বলেন সুরঞ্জিত।
কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা প্রবীণ রাজনীতিক মনজুরুল আহসান খান বাংলানউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ তখনকার পেক্ষাপটে তো বটেই বর্তমান সময়েও এর তাৎপর্য অনেক। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের দখলে থাকা বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে এই ধরণের ভাষণ অনেকটা কৌশলী ও অনবদ্য।
মনজুরুল আহসান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ছিলো বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি। দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর মুখ দিয়ে তাদের কথা বলেছিলেন। আজ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে। মানুষ হত্যা করছে। পুলিশের উপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করছে, সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা, তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারিদের হত্যা, নেতাদের হুমকি দিচ্ছে। সংবিধানের মুল ভিত্তি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ধ্বংস করতে চাচ্ছে।
আজ শুধু শাহবাগে নয়, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিরোধ করতে হবে। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যেভাবে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে সেই সময় এসেছে।
বাংলাদেশ সময় ঘন্টা, মার্চ ৬, ২০১৩
এসকে/এমএমকে; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর