ঢাকা: দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সরকারকে বিব্রত করতে জোর তৎপরতায় মেতে উঠেছে জামায়াত-শিবির। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে প্রধান টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে সচিবালয়কে।
সচিবালয়কে ঘিরে নাশকতা চালাতে অনেকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিলেও সফল হয়নি তারা। তবে বর্তমানে যে কোনোভাবে বড় ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে চূড়ান্তভাবে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায় জামায়াত-শিবির। সম্প্রতি, সচিবালয়ে তারা লিফলেট বিতরণ করেছে বলে সুনিদির্ষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য জানায়।
তবে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর হয়েছে। ফাঁদ পেতে অপরাধীদের আটক করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও রয়েছে মাঠে। এছাড়া সচিবালয়ের ভেতরে জামায়াত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও রাখা হয়েছে বিশেষ নজরদারিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তারা সচিবালয় ঘিরে নাশকতা চালাতে চায়। সে কারণে সচিবালয় ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ের বাইরে সার্বক্ষণিক থাকছে ভ্রাম্যমাণ দল। বিশেষ নিরাপত্তা দিতে সাদা পোশাকেও টহল অব্যাহত রয়েছে। ”
বিশেষ কী ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নাশকতা ঠেকাতে এবং অপরাধীদের আটক করার স্বার্থে বিষয়টি গোপন রাখা হচ্ছে। ”
এদিকে, রোববার সচিবালয়ে জামায়াত-শিবিরপন্থি লোকজন ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর ব্যানারে লিফলেট বিতরণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। সচিবালয় মসজিদ ও বাথরুমে দু/একটি লিফলেট ফেলে রাখলেও বিতরণের সাহস করেনি তারা।
তবে এ ঘটনার পর থেকে ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা কতটুকু, তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ছাড়া সচিবালয়ের আশেপাশে বিরোধী দলগুলোর বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেই। এর পরেও অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমবার সচিবালয় এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা দেখা গেছে।
তবে এর আগে গত শুক্রবার পুলিশকে বোকা বানিয়েছে জামায়াত-শিবির। ওইদিন ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর কর্মসূচিতে জামায়াতের সম্পৃক্ততা নেই বলে পুলিশকে জানানো হলেও ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর ব্যানারে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালায়। পুলিশের বক্তব্য, ‘কথা রাখেনি হেফাজতে ইসলাম’।
ওই দিন ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর নির্ধারিত কর্মসূচির নামে জামায়াত-শিবির হামলা, বোমাবাজি, ভাঙচুর করেছে। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি সচিবালয়ের মূল গেটে হামলা চালিয়ে পুলিশকে পিটিয়েছে তারা।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোটের হরতালের দিন হরতাল সমর্থকদের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমানায় দুটি বোমা ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি বাইরে বিস্ফোরিত হলেও অপরটি সচিবালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে বিস্ফোরিত হয়।
এ ঘটনার পর এ ধরনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারকে জানিয়েছে, সরকারকে বিব্রত করতে এবং দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সচিবালয় ঘিরে বড় ধরনের নাশকতা করতে চায় জামায়াত-শিবির।
নিজেদের শক্তির জানান দিতে তারা বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এছাড়াও শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধিতায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা ছক করেছে তারা।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র মতে, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ব্যাংকে ভাঙচুরের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরাও পাল্টা হিসেবে সরকারি ব্যাংক-বীমাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশব্যাপী সহিংসতা ঘটিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর সেইদিকে রেখে সচিবালয় ঘিরে নাশকতা পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে অনলাইন তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে লিফলেট বিরতণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৩
এসএমএ/সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর