ঢাকা: মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, গণজমায়েত, হরতাল হলেই ককটেল বিস্ফোরণ এখন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দেশ ও মানুষের জন্য এটি ভালো কোনো দিক নয়! এগুলো ঘটাচ্ছে মূলত জামায়াত-শিবির এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত-শিবিরের।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার নামে জামায়াত-শিবির বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি তারা পুলিশকে লক্ষ করেও ককটেল নিক্ষেপ করছে।
সম্প্রতি, রাজধানীর গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন, সচিবালয়, হোটেল রূপসী বাংলা ও হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে, এমনকি গণজাগরণ চত্বরের সমাবেশেও ঘটেছে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। আর হরতাল, মিছিল, সমাবেশ হলে নিয়মিতভাবে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটছেই।
সম্প্রতি, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি হোটেল সোনারগাঁওয়ে অবস্থানকালে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পাশাপাশি গণজাগরণ চত্বর, সচিবালয়ের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ হয়েছে।
এছাড়া বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং হরতাল হলে ব্যাপকভাবে ককটেল বিস্ফোরণ হয়ে থাকে। হঠাৎ করেই ককটেলের ব্যবহারে মানুষের মধ্যে বেড়েছে আতঙ্কও।
এবিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী টিমের প্রধান অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “বিস্ফোরক সাধারণত তিন ধরনের।
এর মধ্যে ককটেল হলো- মাঝারি। আর এর ক্ষতি নির্ভর করে তৈরির ওপর ও কতটা কাছ বা কতটা জনাকীর্ণ স্থানে এর বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে তার ওপর।
বর্তমান সময়ের যে ককটেলগুলোর বিস্ফোরণ বা উদ্ধার হচ্ছে সেগুলোর ভেতরে কেমিক্যাল হিসেবে বারুদের ব্যবহার রয়েছে।
বাকিগুলোতে কেমিক্যাল নেই। তাতে করে এই ককটেলগুলো মানবদেহের জন্য ততটা ক্ষতিকর নয়। তবে খুব কাছাকাছি এবং জনাকীর্ণ স্থানে এর বিস্ফোরণ ঘটানো হলে ক্ষতি হতে পারে। ”
তিনি আরও বলেন, “বিস্ফোরণে তিন ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এগুলো হচ্ছে- ফার্মাল ইফেক্ট অর্থাৎ তাপপ্রবাহের সৃষ্টি করা, যাতে মানব দেহ পুড়ে যেতে পারে।
এছাড়া উচ্চ শব্দ তৈরি হয়ে শক ওয়েভে মানুষের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ব্লাস্টিং ওভার প্রেসার অর্থাৎ শব্দের কারণে কান ফেটে যেতে পারে। ”
এডিসি সানোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা এখন যে ককটেলগুলো দেখতে পাচ্ছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এগুলো এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। ”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজধানীতে বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানি ও যারা এর অবৈধ ব্যবসার করে সন্ত্রাসীদের হাতে বিস্ফোরক দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন তাদের একটি তালিকা গোয়েন্দা পুলিশ প্রস্তুত করেছে। ”
খুব শিগগিরই বড় একটি অভিযানও পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।
ৠাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্ণেল জিয়াউল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, “বর্তমান সময়ে যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটছে তাতে হতাহত না হলেও কারা এগুলো ব্যবহার করছে, কাদের কাছ থেকে বারুদ সংগ্রহ করা হচ্ছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ”
তিনি আর জানান, ছোট অপরাধ থেকেই বড় অপরাধের সৃষ্টি হয়। সুতরাং এটি রোধ বা বন্ধ করতে তারা কাজ করছেন।
সিআইডির পরিদর্শক গোলাম দস্তগীর বাংলানিউজকে বলেন, “বর্তমান সময়ে যে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটছে তা ততটা কার্যকর নয়। জর্দার কৌটার মধ্যে বারুদ ভরে তার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। ”
তিনি বলেন, “ওই কৌটার ভেতরে স্প্রিন্টার হিসেবে কাচের গুঁড়া, পাথরের টুকরা, ইটের টুকরা দিলে তা বিস্ফোরণের সময় শরীর ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে তা বারুদ দিয়ে তৈরি। এটি শব্দ হবে, তবে খুব কাছাকাছি থেকে বিস্ফোরণ হলেও এটি শরীরের জন্য ততটা ক্ষতিকর হবে না। তবে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এটি যথেষ্ট কার্যকর। ”
তিনি আরও বলেন, “উচ্চস্বরে শব্দ হলে মানুষ এমনতেই ভয় পায়। আর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ মানুষকে আতঙ্কিত করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৩
আইএ/সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর