ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

অ্যাটর্নি জেনারেল: এক যোগ ছয়!

জেসমিন পাঁপড়ি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৩
অ্যাটর্নি জেনারেল: এক যোগ ছয়!

ঢাকা: সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে দেশের সকল আদালতে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে সাংবিধানিক এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।



তবে বর্তমানে সেই পদমর্যাদা ভোগ করছেন আরো ছয়জন আইনজীবী বলে নিশ্চিত করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। বাংলাদেশে এর আগে কখনো এতোজন ব্যক্তি এই পদে নিয়োগ পাননি।

যদিও তাদের মধ্যে অন্য ৬ জনই বিশেষ বিশেষ মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। তবু এটাকে নিয়ম বহির্ভূত, অনাকাঙ্খিত এবং সামন্ততন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলছেন দেশের আইনজ্ঞরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে এক্ষেত্রে কোনভাবেই সংবিধান লঙ্ঘণ হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশেষ মামলায় পদমর্যাদাপ্রাপ্ত একজন অ্যাটর্নি জেনারেল।

সংবিধান অনুযায়ী একজন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের কথা থাকলেও একই পদমর্যাদায় অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। এ সুযোগকেই সরকার কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ আইনজ্ঞদের।

একাধিক অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদা রাষ্ট্রের আইন বিভাগে সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে রাষ্ট্র বিভিন্ন মামলা পরিচালনায় বিশেষ আইনজীবী নিয়োগের বিধান আছে বলে জানান তারা।

আইনজ্ঞদের দাবি, নিয়মের তোয়াক্কা ও যোগ্যতা বিচার না করেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক চিন্তা থেকেই একাধিক  অ্যার্টনি জেনারেল নিয়োগ করছে সরকার।

বর্তমানে অ্যার্টনি জেনারেল পদমর্যাদায় থাকা ব্যক্তিদের পাঁচজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত। তারা হলেন সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক এম কে রহমান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও সৈয়দ হায়দার আলী।

এছাড়া জাতীয় চার নেতা হত্যা (জেল হত্যা) মামলা পরিচালনায় অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদায় নিয়োগ পেয়েছেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে লড়তে একই পদমর্যাদায় বেতন-ভাতা ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।

অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৪(৩) ধারায় বলা হয়েছে,  অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের সকল আদালতে তার বক্তব্য পেশ করিবার অধিকার থাকবে।

তবে প্রবীণ আইনজ্ঞ ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক উল হকের দাবি, সংবিধানের এ শর্ত মেনে অন্য ৬ জনকে অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অনেকেরই এখনো আপিল বিভাগে প্রবেশাধিকার নেই।

এ বিষয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যাদের প্রবেশাধিকার নেই তারা অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদা পেয়েছেন, এটা আমি ভাবতেই পারি না। কিভাবে সম্ভব হয়েছে তা আমি জানি না। তবে এটা অচিন্তনীয়। ”

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “একাধিক অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার আইনজীবী নিয়োগ সংবিধান বহির্ভূত। বর্তমান সরকার আইন মানে না, সংবিধান মানে না। ইচ্ছানুযায়ী নিয়োগ দেওয়াই এখন নিয়ম হয়েছে। এ সরকার বিচার বিভাগকে পদদলিত করে দলীয় বিচার বিভাগে পরিণত করেছে।   এটা বিচার বিভাগের জন্য পরিহাস। সরকারের এসব খামখেয়ালিপনার জন্যই বিচার ব্যবস্থার প্রতি এখন জনগণের আস্থা নেই। ”

তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী দেশে একজন প্রধান আইন কর্মকর্তা থাকবেন। এভাবে পদে পদে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে।

‘অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদা’ বলে আইনে কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে কখনো এতোজন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ হয়নি। এমন নিয়োগ সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ”

“এ থেকে বোঝা যায়, বিচার বিভাগ সরকারের ইচ্ছা মাফিক চলছে”- উল্লেখ করেন তিনি।

প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ড. শাহদিন মালিক এ ঘটনা দুঃখজনক অভিহিত করে বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা ক্রমান্বয়ে গণতন্ত্রের বদলে সামন্ততন্ত্রে ফিরে যাচ্ছি, এটা তারই প্রকাশ। ”

তিনি বলেন, “একাধিক পদ দিতে গেলে নিয়ম-কানুন লঙ্ঘিত হবেই। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

তিনি এটাকে অগণতান্ত্রিকভাবে পদ বলেও আখ্যা দেন।

অ্যাটর্নি জেনালে পদমর্যাদা প্রাপ্ত অথচ আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না, তাদের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আইন অনুযায়ী তারা আপিল বিভাগে দাঁড়াতে পারেন না। তবে যেহেতু তারা বিশেষভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পেয়েছেন, সেক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায়  আদালতের কাছে অনুমতি চাইতে পারবেন তারা। ”

একই কথা বলেন সর্বশেষ অ্যাটর্নি জেনারেল পদ পাওয়া প্রসিকিউটর হায়দার আলী। তিনি বলেন, “যারা আপিল বিভাগে মামলা লড়তে পারেন না, তারা এ মর্যাদা পেলে আদালত বিবেচনা করবেন, তারা দাঁড়াতে পারবেন কিনা। ”

তিনি একাধিক অ্যাটর্নির সকল সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সম পদমর্যাদা এক নয়।   এখানে সংবিধানের কোথাও বলা নেই যে, অ্যাটর্নি জেনারেল পদ মর্যাদায় একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। ”

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘন্টা, মার্চ ২৪, ২০১৩
জেপি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।