ঢাকা: রাজধানীর খিলবাড়িটেক এলাকায় ওয়াসার পানি ব্যবহার করে মাছ চাষ করছেন তিন প্রভাবশালী। শত শত লোককে পানির কষ্ট দিয়ে পুকুর কেটে তাতে ওয়াসার পানি দিয়ে মাছ ছেড়েছেন তারা।
এই তিন প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াসার একজন কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা এই অবৈধ কাজ করে চলেছেন।
তবে এলাকাবাসীর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ওই প্রভাবশালীরা। তাদের দাবি তারা অন্য জায়গা থেকে পানি এনে মাছ চাষাবাদ করছেন তারা।
মেইনটেনেন্স অপারেশন ডিস্ট্রিবিউশন (মডস) জোন-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার ক্ষীতিশ চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, তার কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। তবে তিনি দ্রুত বিষয়টি অনুসন্ধান করবেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বাঁশতলা মোড়ের সামনে বাটার গলি। এই গলি দিয়ে হাতের ডানে গলির রাস্তা। আর এই গলির রাস্তা দিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার গেলেই খিলবাড়িটেক পূর্ব পাড়া। পাড়াটির শেষ প্রান্তের হাতের ডানে দেখা যাবে একটি পুকুর। আর এই সেই পুকুর যেখানে স্থানীয় রেজাউল, মানিক এবং ভাটারা ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) দেলোয়ার হোসেন মিলে ওয়াসার পানি ব্যবহার করে মাছের চাষ করছেন।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে পুকুরটি মূলত দেলোয়ার মেম্বারের দখল করা। দেলোয়ার মেম্বার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি ভাটারা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে হাত করে তিনি জায়গাটি দখল করে খুঁড়ে পুকুর বানিয়েছেন। আর পুকুরে মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করছেন ওয়াসার পানি।
বুধবার দুপুরের দিকে সরেজমিন ওই এলাকায় যাওয়া হয়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুকুর সম্পর্কে কথা বলতে গেলেই তারা ভয়ে মুখ খোলেন না। এক পর্যায়ে সাংবাদিক আসার সংবাদ চলে যায় রেজাউল ও মানিকের কানে। তারাও আসেন পুকুরের কাছে।
ওয়াসার পানি ব্যবহার করে কিনা এমন প্রশ্নে লোকজন কথা বলতে চান না। পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানালেন, এখানে ওয়াসার পানি ব্যবহার করা হয়। আর সেই পানির লাইনটি রয়েছে পুকুরের পূর্ব পাশে মোস্তফার হোটেলের নিচ দিক দিয়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এই জায়গাটি আগে পতিত জমি ছিল। সেই জায়গায় ছেলেরা ফুটবল ক্রিকেট খেলতো। হঠাৎ গত ৫/৬ মাস আগে দেলোয়ার মেম্বার জায়গাটি খুঁড়ে সেখানে পুকুর বানিয়ে তাতে ওয়াসার পানি ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করেন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পুকুরে ওয়াসার পানি ব্যবহারের ফলে এলাকার শত শত মানুষ পানি পাচ্ছেনা। যার কারণে তারা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দু’একবার এ বিষয়ে বলার পর ওই তিন প্রভাবশালীর লোকজনের হুমকির ভযে পরে আর এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি তারা।
অভিযুক্ত করা রেজাউল ও মানিক বাংলানিউজকে জানান, তারা এই পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য ওয়াসার পানি ব্যবহার করছেন না। এলাকার কতিপয় ব্যক্তি সন্দেহবশত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে।
দেলোয়ার হোসেন দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় নি।
মডস -৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার ক্ষীতিশ চন্দ্র ওই এলাকাতে এ ধরনের কোন অভিযোগ পাননি উল্লেখ করে বাংলানিউজকে জানান, যদি এ রকম কোন ঘটনা থাকে তবে দ্রুত অ্যাকশনে যাওয়া হবে। এছাড়াও এ কাজে যদি ওয়াসার কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৩
আইএ/ সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর