ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টর্নেডোয় নিহতদের পরিবার পেলো বসুন্ধরার অনুদান

ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টর্নেডোয় নিহতদের পরিবার পেলো বসুন্ধরার অনুদান

বাসুদেপুর থেকে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী টর্নেডোতে নিহতদের পরিবারের সাহায্যার্থে আবারও এগিয়ে এলো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

টর্নেডোয় নিহতদের প্রত্যেকের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং পাঁচ বান্ডিল করে ঢেউ টিন তাদের পরিবারের কাছে বিতরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

এর আগে টর্নেডো আঘাত হানার পরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাথমিকভাবে ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছিলো দেশের যে কোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার জন্য খ্যাত এ শিল্প পরিবারটি।

শুক্রবার জেলার সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনয়ন পরিষদ কার্যালয়ের হলরুমে নিহত ৩৬ জনের পরিবারের হাতে অনুদানের নগদ টাকা ও টিন তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব মোর্শেদ হাসান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা  (ট্রেজারার) এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার অধীনে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সানের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক নুর মোহাম্মদ মজুমদার, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল হক ও খায়রুল আলম সুমন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাজ মো. ইয়াছিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রেজা ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন জামি, অ্যাডভোকেট মোফাক খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেছার উদ্দিন।

পরে বাসুদেব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসুন্ধরার অনুদানের টিন গ্রহণ করেন নিহতদের পরিবারের লোকজন।

উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ টর্নেডো। প্রলয়ঙ্করী ওই টর্নেডোতে প্রাণ হারান ৩৬ জন। আহত হন আরও অসংখ্য মানুষ। এছাড়া আক্রান্ত এলাকার ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদি পশুসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

Bbaria-BGজাতীয় বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নিজেদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে  ওই টর্নেডোর পরপরই  দুর্গতদের পাশে এসে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ।

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৩০ টন ত্রাণ ও নগদ টাকা বিতরণ করে বসুন্ধরা গ্রুপ।  

পাশাপাশি টর্নেডোর পরপরই বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের জন্য আরও ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা হাতে নেন।

এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা ও টিন বিতরণ করা হয়।

বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব মোর্শেদ হাসান বলেন, “ব্যবসায়িক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে আসছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ”

বসুন্ধরা গ্রপের চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়ির ব্রাহ্মণবাড়িয়া উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “নাড়ীর টানে তিনি (চেয়ারম্যান)  দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। ” এভাবে যেন ভবিষ্যতেও বসুন্ধরা গ্রুপ সমাজ ও দেশ গঠনে আরও বিস্তৃত ভূমিকা রাখতে পারে সে জন্য সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ খবরের কাগজে টর্নেডোর প্রলয়ঙ্করী ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের ‍চেয়ারম্যান।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এর আগে ৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫০ হাজার টাকা ও পাঁচ বান্ডিল টিন পেয়ে নিহতদের পরিবারগুলো নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে সমর্থ হবেন।

জেলা প্রশাসক নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “ব্যবসায়িক খাতে বসুন্ধরা গ্রুপ সুনাম ও খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে।   এছাড়া আর্ত মানবতার সেবায় সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজও করে যাচ্ছে তারা। ”

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের বিপদে-আপদে বসুন্ধরা গ্রুপ সবার আগে এগিয়ে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নগদ টাকা ও টিন পেয়ে নিহতদের পরিবার দুঃখের স্মৃতি ভুলে আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। ”

বসুন্ধরার ত্রাণ সহায়তাকে মহৎ উদ্যোগ উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, “আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাই। ”

সদর উপজেলার জারুলতলা গ্রামের রেজিয়া বেগম টর্নেডোতে হারিয়েছেন মা, ছোট মেয়ে ও বড় মেয়ের জামাতাকে।

পরিবারের তিন সদস্যকে হারানোর পর বসুন্ধরার সহায়তায় এখন  নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন রেজিয়া বেগম।   বাংলানিউজকে বললেন, “টিনগুলো দিয়ে বড় মেয়েটার জন্য ঘর তুলবেন। বাকি টাকা বড় মেয়ের চার মাসের মেয়ের জন্য জমা রেখে দেবেন। ”

এ সময় বসুন্ধরা এবং বসুন্ধরার সব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য দোয়া করেন টর্নেডোয় পরিবার পরিজন হারানো রেজিয়া বেগম।

সদর উপজেলার পাইকপাড়ার বাবরু মিয়া হারিয়েছেন উপার্জনক্ষম ছেলে মুফতি এমদাদ আলীকে (২৮)। স্থানীয় এক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন তিনি। মৃত ছেলের আয়েই পাঁচ সদস্যের সংসার চলতো উল্লেখ করে এই সাহায্য দিয়ে ঘরবাড়ি ঠিক করবেন বলে জানালেন তিনি।

সাহায্য পেয়ে ছেলে হারানো আরেক বাবা পাইকপাড়ার খসরু মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ছেলে হারানোর বেদনা হয়তো ভোলা যাবে না, তবে বসুন্ধরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য এ প্রতিষ্ঠানের জন্য দোয়া করবেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৩
এমআইএইচ/সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।