ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

কেন এমন হল?

পৌর নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলে আ’লীগ সমর্থিতদের ব্যর্থতা

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১
পৌর নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলে আ’লীগ সমর্থিতদের ব্যর্থতা

ঢাকা: বুধবার দেশের উত্তরাঞ্চলের দুটি বিভাগের ৭২টি পৌরসভার নির্বাচনে মাত্র ২২টিতে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন মহাজোটের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীরা। আর বিগত জাতীয় নির্বাচনে চরম ভরাডুবির শিকার বিএনপি’র সমর্থন পাওয়া মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৩২টি পৌরসভায়।

এছাড়া জামায়াত সমর্থিতরা ৫টি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত ১জন প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা জিতেছেন ১২টি পৌরসভায়।

দু’বছর আগে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীদের উত্তরের দুই বিভাগের পৌর নির্বাচনে এই ভরাডুবিকে অনেকেই প্রকারান্তরে মহাজোট সরকারের প্রতি ভোটারদের সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছেন! এরই মধ্যে মহাজোট সমর্থিত উত্তরের ৭২ পৌরসভার মধ্যে ৫০টিতে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান চলছে খোদ মতাসীন মহাজোটসহ সর্বত্র। আওয়ামী লীগ জিতেছে মাত্র ২২টি পৌরসভায়। কেন এমন হল?

উত্তরবঙ্গের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই ‘কেন’র উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বাংলানিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি শরীফ সুমন, রংপুরের সাজ্জাদ বাপ্পী, দিনাজপুরের সানি সরকার, বগুড়ার টিএম মামুন ও নাটোরের আল মামুন।

রংপুর

সরকারি-বেসরকারি অফিসে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অযাচিত হস্তপেক্ষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হুমকি-ধামকি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, তৃণমুল নেতাদের অবমূল্যায়ন ও দলে পরীতি রাজনৈতিক নেতাদের কোনঠাসা করা ও নিজেদেরকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ভাবার কারণে রংপুর বিভাগে পৌর মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সুবিধা করতে পারেনি বলে মনে করছেন রংপুরবাসী।

এসব কারণেই পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর সদরে তাদের আসন হাতছাড়া হয়ে গেছে তারা মন্তব্য করেছেন।

অনেকের অভিযোগ, গত ২ বছরে আওয়ামী লীগ মতায় এসে যে প্রতিশ্র“তিগুলো জনগণকে দিয়েছিল তার বেশিরভাগই রা করতে পারেনি।

হারাগাছ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এরশাদুল হকের পরাজয়ের কারণ হিসেবে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীদের দায়ী করেন সেখানকার মানুষ। এছাড়া এরশাদুল হককেও অসৎ, দুর্নীতিপরায়ন, গরীবের অর্থ আত্মসাতকারী উল্লেখ করে তারা বলেন, এখানকার ভোটাররা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

বদরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয়ী হয়েছেন উত্তম কুমার সাহা। তিনি তার এলাকায় সৎ হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া এলাকায় তার এলাকার জনগণের কাছে একজন নিষ্ঠাবান সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিতি আছে।

রংপুর বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর জয়লাভ সর্ম্পকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন বলেন, আওয়ামীলীগের ২ বছরের শাসনে আশাহত হয়ে মানুষ দলমত নির্বিশেষে মেয়র পদে বিএনপি নেতাদের নির্বাচিত করেছেন। ভোটের সময় আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল সেগুলো সঠিকভাবে পালন করছে না। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিম্ম আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে আজ সব কিছু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, জনগণ ২ বছরের শাসন বিচার করে ভোটের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এখনও সময় আছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শোধরানোর। তা না হলে তাদের অবস্থা বিএনপির মতই হবে।

রংপুর এলজিইডি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, অফিস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা পর্যায়ের চিহ্নিত কয়েকজন নেতা তাদের তদবির নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে হাজির হন। তাদের কারণে সরকারি কাজ-কর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। এলজিডির একজন কর্মকর্তা জানান, টেন্ডার হলেও কাকে কাজ দিতে হবে না হবে তার লিস্ট তারা দিয়ে যান। তাদের কথা মত কথা কাজ না করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালাগাল-হুমকি-ধামকি দেন। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের বিরুদ্ধেপ্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কাজ হয়নি। উল্টো তারা মিলে মিশে কাজ করার নির্দেশ দেন।

পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করলেই তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক বলে পরিচয় দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এছাড়াও মামলার চার্জশিট, কাকে কখন গ্রেপ্তার করা হবে, সে নির্দেশনাও তারা দিয়ে থাকেন বলে জানান।  

তবে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনসুর আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগ রংপুরকে বিভাগ করেছে। সিটি কর্পোরেশনসহ এখানকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন।

রংপুর বিভাগের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মেয়র নির্বাচনে কোনও ধরনের  হস্তপে করেনি। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যাকে মেয়র নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ তা মেনে নিয়েছে এবং উন্নয়নের জন্য তাদেরকেও আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট দিলশাদ ইসলাম মুকুল, শফিয়ার রহমান, তুষার কান্তি মণ্ডল,শফিউল আলম টুটুলের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা, সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল মনসুর আহমেদ কিছুটা নিশ্চুপ থেকে বলেন, ‘আমার জানা মতে তারা কোনও ধরনের অপকর্মের সঙ্গে  জড়িত নন। দলের সুবিধা বঞ্চিতরা তাদের সর্ম্পকে আজেবাজে তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার একটা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ’
 
নাটোর

এই জেলায় দুই বছর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের ৪ প্রার্থী বিপুল ভোটে চারদলীয় জোটের প্রার্থীদের পরাজিত করলেও ১২ জানুয়ারির নির্বাচনে নাটোরের ৬ পৌরসভার মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের ভরাডুবি হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথাসাহিত্যিক ডা. জাকির তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নাটোর শহরে ছিনতাই বেড়েছে। ৮ অক্টোবর বনপাড়া বাজারে উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে রাজপথে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার পর জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর মাঝে অসন্তুষ্টি রয়েছে। তারা নির্বাচনে কাজ করেনি। এসব কারণেই প্রত্যাশিত ফল আসেনি আওয়ামী লীগের প। ে

টিআইবির নাটোর জেলা শাখার আহবায়ক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। কোন্দল না থামাতে পারায় অধিকাংশ পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা হতাশার সুরে বললেন, ‘প্রায় ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হয়ে নাটোর পৌরসভায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। ’

এদিকে নাটোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে জেলা যুবলীগের সভাপতি জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের কারণেই তাদের পরাজয় হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, সিংড়া পৌরসভার বস্তির ভোটও কিনেছেন বিজয়ী মেয়র শামীম আল রাজি এবং নলডাঙ্গায় বাংলাভাইয়ের ক্যাডারদের কারণে তাদের পরাজয় হয়েছে। গোপালপুর ও বড়াইগ্রামে তাদের নির্দিষ্ট প্রার্থী ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের দুঃশাসনের জবাব দিয়েছেন ভোটাররা। ’

বগুড়া

‘চালের দামডা কম থাকলে ইংকা হলোনাহিনী, আওয়ামী লীগ কি ভুলডাই যে করলো, বুঝবি আরো বুঝবি, গরীবের দিকে না তালে ইংক্যাইতো হবি। ’

পৌরসভা নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন জানালেন বগুড়া শহরের ভ্যান চালক আমজাদ হোসেন।  

শিবগঞ্জ উপজেলার পান ব্যবসায়ী রবি মিয়া বললেন, ‘বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শুধু চালের দামই বাড়েনি, বেড়েছে সব জিনিসের দাম। দু’বছর আগে প্রতি খিলি পান বিক্রি হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ পয়সায়। এখন সেই পান বিক্রি করছি দুই থেকে তিন টাকায়। ’    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, মহাজোট সরকারের কাছে দেশ অনেক ভাল কিছু প্রত্যাশা করেছেল। কিন্তু বিগত দুই বছরে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের নানরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেশের মানুষের সেই প্রত্যাশা ব্যর্থ করে দিয়েছে।

বগুড়া জজকোর্টের আইনজীবী তবিবর রহমান তবি বলেন, ‘শুধু দ্রব্যমূল্যটা নিয়ন্ত্রণে থাকলে পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের এরকম পরাজয় হতোনা। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি হাসপাতালে চাকুরীরত একজন চিকিৎসক জানান, সরকারের ওপরের সারির কতিপয় নেতার লাগামহীন বক্তব্যের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। তার মতে, সরকারের উচিত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সবসময় নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে রাখা, যা করতে বর্তমান মহাজোট সরকার বেশ খানিকটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আর এ কারণেই মানুষ পৌর নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দিয়েছে।

বগুড়া শহরের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বাদশা জানান, আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে জনসাধারণের কাছে আস্থা হারিয়েছে।

দিনাজপুর

দিনাজপুরে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির কারণ হিসেবে দলীয় কোন্দলকেই দায়ী করছে বিভিন্ন মহল।

বিরামপুর পৌরসভায় বিএনপি’র প্রার্থী আজাদুল ইসলাম আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে রয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় মতবিরোধ।

হাকিমপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যাওয়ার পেছনেও দলীয়  কোন্দলই কাজ করেছে বলে জানা গেছে।

বীরগঞ্জ পৌরসভায় দলীয় কোন্দল না থাকলেও জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এর কারণ, পৌরপ্রশাসক থাকাকালে এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন বলে জানা গেছে।

ফুলবাড়ী পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিক সরকার নির্বাচিত হওয়ার কারণ, তিনি খনিবিরোধী নেতা। তাই এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে এখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত। এখানেও আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল রয়েছে বলে জানান স্থানীয় মন্টু দাস।

অপরদিকে সেতাবগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাত্র কয়েক ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক বাংলানিউজকে জানান, দিনাজপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর হেরে যাওয়ার কারণ, স্থানীয় এমপি ইকবালুর রহিম প্রার্থীর বিপে অবস্থা নিয়েছিলেন।

এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনের বিজয় আমাদের রাজনৈতিক বিজয়। এখানে সরকারের প্রতি জনগণের অসমর্থনই প্রমাণ হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনই প্রমাণ করে সরকারের প্রতি জনগণের কোন সমর্থন নেই। ’

তবে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক জামাল উদ্দীন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, দলীয় দিক বিবেচনা করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। কারণ এটি স্থানীয় নির্বাচন। নিজ যোগ্যতা অনুসারেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজশাহী
 
রাজশাহীর রাজনৈতিক মহল ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষের মতে, অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমন্বয়হীনতায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। তবে রাজশাহী জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির চেয়ে দ্বিগুন।

জেলার মোট ১১টি পৌরসভার মধ্যে ৬টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা, ৩টিতে বিএনপি ও বাকি ২টিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা।    
 
তবে জেলাতে আওয়ামী লীগের এই সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে সমগ্র উত্তরাঞ্চল তথা রাজশাহী-রংপুর দুই বিভাগওয়ারি ব্যর্থতায়।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনির মনে করেন, সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে স্থানীয় জনগণ এর প্রমাণ দিয়েছে। চলতি বছর শুরু হওয়া পৌর নির্বাচনেও রাজশাহীর মানুষ এর জবাব দিয়েছে। সরকার বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে শিা প্রতিষ্ঠানসহ সবেেত্র দলীয়করণ করে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।

তবে এমন কথা মানতে নারাজ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতা ছিল। ’

তবে তিনি মনে করেন, এরপরও রাজশাহীর ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের যেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সবাই যোগ্যতার বলে এবং জনগণের ভালোবাসাতেই নির্বাচিত হয়েছেন।  
                   
এদিকে রাজশাহীর সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোর সাধারণ ভোটারদের মতে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরও বেশি মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমন্বয়হীনতায় রাজশাহীতে এবার আশানুরূপ সফলতা পায়নি আওয়ামী লীগ।

দেখা গেছে, জেলার ১১ পৌরসভার মধ্যে যে সব পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা জয়ী হয়নি, সেসব পৌর সভায় দলের বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।

জেলার আওয়ামী লীগ সমর্থক ভোটাররা মনে করেন, পৌর নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের মূল কারণ- প্রার্থী নির্বাচন সঠিক না হওয়া ও বিদ্রোহীদের দমাতে ব্যর্থতা। এমনটি ঘটেছে ভবানীগঞ্জ পৌরসভাতে। এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিজয়ী হতে পারেননি গোলাম মোস্তফা।

বাংলাদেশ সময় ২১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।