ঢাকা: ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দুই ধরণের সুপারিশ দিয়ে আগামী সপ্তাহে ওই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কমিশনের প্রধান মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রতিবেদনের সম্পর্কে জানতে চাইলে মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিবেদনে দু’ধরনের সুপারিশ করেছি। একটি হলো রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতারোধে করণীয় সম্পর্কে রাজনৈতিক সুপারিশ। আর অপরটি হলো সহিসংতা সম্পৃক্ত মামলায় করণীয় সম্পর্কে আইনগত সুপারিশ।
তবে সুপারিশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চাননি তিনি।
সাহাবুদ্দিন জানান, সারাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে এবং কমিশনে যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেছে সেখানে মাঠ পর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
এদিকে কমিশন সূত্রে জানাগেছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
আদালতের রায়ের আলোকে ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। সাবেক জেলা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আকন্দ ও পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপরাধ তদন্ত শাখা) মীর সহিদুল ইসলাম ।
কমিশন গঠনের ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য কমিশকে নির্দেশ দেয় আদালত। তবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে কমিশন। এরপর ২০১০ সালের জুন মাসে কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবদেন জমা দেওয়ার সময়সীমা ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ায় আদালত। এরপর কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আরও একদফা সময় বড়িয়ে নেয়।
গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে শুরু করে কমিশন। জেলাগুলো হলো: বরিশাল, পটুয়াখালি, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ।
এর আগে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সাত আইনজীবীর জনস্বার্থে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ৬ মে দুই মাসের মধ্যে কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন। কমিশন গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
রিটে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হত্যা, নির্যাতন, লুটপাটসহ ব্যাপক আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।
উল্লেখ্য ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল সংখ্যক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের উপর ক্ষমতাসীন বিএনপি-জাময়াতের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নির্যাতনের খবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিতও হয়।
এছাড়া ২০০৩ সালের জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের প্রতিবেদন জানায়-২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিসংতায় অজানা সংখ্যক হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু পরিবার হয় দেশের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে অথবা পার্শ্ববতী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১