ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সাক্ষাৎকারে মুহম্মদ জাফর ইকবাল

শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতারা একদিন আন্তর্জাতিক পুরস্কার নিয়ে আসবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১১
শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতারা একদিন আন্তর্জাতিক পুরস্কার নিয়ে আসবে

শুরু হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব ‘আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব-২০১১’। চতুর্থ বারের মত এই উৎসব আয়োজন করছে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ।

২২ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এই উৎসবে ৪০টি দেশের ২৩৩টি ছবি প্রদর্শন করা হবে। প্রদর্শিত ছবি দেখার পর শিশুদের কাছ থেকে নেওয়া হবে তাদের প্রতিক্রিয়া। যার মধ্য দিয়ে শিশুরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পাবে।

বাংলা ভাষায় শিশুতোষ চলচ্চিত্রের সংকট থাকলেও ভিনদেশের চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে শিশুদের জন্য এমন আয়োজনের নানা দিক নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি ও কল্পকাহিনী লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরিফুল ইসলাম

এই ধরণের উৎসব থেকে শিশুরা কী শিখতে পারবে?

এটি একটি উৎসব। কিন্তু উৎসবটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়। এলাম, দেখলাম, বাড়ি চলে গেলাম, এরকম নয়। বিনোদনের জন্য ঘরে বসে টিভিতেই ছবি দেখা যায়। এই ধরণের উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশুদের মানসিকতার উন্নয়ন। পৃথিবীর সেরা ছবিগুলো থেকে শিশুদের জন্য কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শিশুরা সাধারণত মজার এবং প্রথম কোনো বিষয় সম্পর্কে জানলে তা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীলতা বিকশিত হয়। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সে কাজটিই করতে চাই। উৎসবের প্রতিটি ছবি দেখার পর শিশুদের মতামত নেওয়া হবে। উৎসব শেষে তাদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মাশালার আয়োজন করা হবে।

উৎসবে বাংলাদেশের শিশুরা নিজেদের তৈরি বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য জমা দিয়েছে। সেই চলচ্চিত্রগুলোর মান কেমন?

যে কাজটি তারা করছে, তার জন্য বয়স হিসেবে তারা মোটেই উপযোগী নয়। উৎসবে এসে যে কেউ লক্ষ্য করলেই দেখবে, তাদের কাজগুলো অনেক সৃজনশীল। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের এই ধরণের কাজে কিছুটা অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য। যেন ভবিষ্যতে ওরা আরও ভালো ভালো কাজ করতে পারে।

চতুর্থ বারের মত এই উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথমবারের তুলনায় এখন শিশুদের তৈরি চলচ্চিত্রগুলো কতটুকু মানসম্মত মনে হয়?

উৎসবে শিশুদের ৪৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। এগুলো দেখলেই বোঝা যাবে তারা কতটা সৃজনশীল। তাদের হয়তো কারিগরি জ্ঞান নেই। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা, পাণ্ডুলিপি লেখাসহ সবধরণের যোগ্যতা আছে। আজ থেকে ১০ বছর পর এরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পুরস্কার অর্জন করে নিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

এ ধরণের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সবসময়ই থাকে। আপনারা এক্ষেত্রে কি তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন?

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বাংলাদেশের শিশুদের জন্য ভালো মানের খুব বেশি বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। এ ধরণের যে সব উৎসব হচ্ছে, সেগুলোর জন্য স্পন্সর (পৃষ্ঠপোষক) খুঁজেই পাওয়া যায় না। অথচ ভারতীয় তারকাদের এদেশের আনার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। তার জন্য অনেক স্পন্সরও পাওয়া যায়। দেশের আগামী প্রজন্মের সঠিক বিকাশের জন্য আমি আশা করব কর্পোরেট হাউসগুলো এ ধরণের আয়োজনে এগিয়ে আসবে।

বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ভীড়ে শিশুতোষ চলচ্চিত্রের অবস্থা এখন কেমন? অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারি উদ্যোগ কতটুকু?

শিশুতোষ চলচ্চিত্র সবসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের অবহেলিত একটি সেক্টর। কখনই এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গত বছরের শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে এসে প্রতিবছর দুটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র সরকারি অনুদানে নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। তবে অনুদানের টাকার অংক খুব বেশি নয়। টাকার পরিমাণ বাড়ানো হলে আরও ভালো ছবি তৈরি করা সম্ভব হবে।

শিশুতোষ চলচ্চিত্রের প্রচারণা খুব কম হয়। এক্ষেত্রে কী ধরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন?

বর্তমানে যেসব শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরি করা হচ্ছে, তার খুব বেশি প্রচার নেই। প্রচার করলেই শিশুরা চলচ্চিত্র দেখতে উৎসাহিত হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুদের জন্য এ ধরণের কাজগুলো প্রচারের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নির্মাতারা যেমন কাজে উৎসাহ পাবে তেমনি অভিভাবকরাও এই ধরণের কাজে নিজের সন্তানকে কাজ করতে উৎসাহিত করবেন।

শিশুদের বিকাশে সরকারের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?

শিশুরা সবার। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত তাদের ওপর নির্ভর করে। গতবছর প্রধানমন্ত্রী উৎসবে এসেছিলেন। শিশুরা তা দেখে অনেক উৎসাহিত হয়েছিল। এবার তিনি আসতে পারছেন না। তিনি এলে শিশুরা আরও বেশি উৎসাহিত হতো। এ ধরণের কাজে সরকারসহ সবাইকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যারা বয়স্ক, আগামী প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে তাদের আরও বেশি ভূমিকা নেওয়া প্র্রয়োজন।

শিশুদের উদ্যোশ্যে কিছু বলুন...
তোমরা উৎসবে যোগ দাও, ছবি দেখো, উপভোগ করো। এতে নিজেদের মানসিক বিকাশ ঘটবে। নিজেদের চারপাশ আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।