পার্বতীপুর: ২০০৭ সালের ২৫ মে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছরে দিনাজপুর মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি লোকসান দিয়েছে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা। এ লোকসানের অন্যতম কারণ হলো, অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষ।
বুধবার দুপুর ২টায় দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত মধ্যপাড়া খনি ভবনের হল রুমে পার্বতীপুর ও ফুলবাড়ীর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ, জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন ও অর্থ) আবুল বাসার, উপ-মহাব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (স্টোর) রফিজুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সরোয়ার হামিদ প্রমুখ।
‘সব সময় শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করায় খনি থেকে কাক্সিত উৎপাদন হয়নি। ’ উল্লেখ করে জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাসার বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ না থাকলে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল কঠিন শিলা খনি মধ্যপাড়া থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাথর উৎপাদন করা যাবে এবং এটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। ’
কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিক অসন্তোষজনিত কারণে বারবার খনিতে উৎপাদন বদ্ধ থাকায় বছরের পর বছর ধরে লোকসানের পাল্লা ভারি হয়েছে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ জানান, খনিতে বর্তমানে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ২৮৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। এ সমস্ত শ্রমিকদের মধ্যে খনির উপরিভাগে কর্মরতদের মাসে ১০ হাজার এবং ভূ-গর্ভে কর্মরতদের ১৬ হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে দু’টি উৎসব ভাতা এবং ইন্সুরেন্স সুবিধা।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তারপরও বাইরের একটি পরে ইন্ধনে কয়েকজন শ্রমিক নেতার উস্কানিতে সব সময় শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই থাকে খনিতে। ’
তিনি বলেন, ‘উস্কানিদাতা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোমিনুল হক মমিন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক নেতা মেহেদী হাসান, সাদেকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামকে গত বছরের ২৫ নভেম্বর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে খনিতে স্বাভাবিক উৎপাদন ফিরে আসে। ’
জামিল আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বরখাস্ত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও দীর্ঘ ২ মাসেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ’
বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে আবারও খনিতে শ্রমিক অসন্তোষ ঘটাতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে খনি থেকে এক শিফটে কাজ করে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ টন পাথর উৎপাদন হচ্ছে। শীঘ্রই আরও শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে দ্বিতীয় শিফট চালু করে প্রতি শিফট ১ হাজার ৫০০ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে খনি কর্মকর্তাদের এসব বক্তব্যের বিষয়ে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। আমরা আমাদের নিয়োগকে স্থায়ী করণের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চাপ দিলেই তারা সরকারকে দোষারোপ করেন। তারা বলেন, সরকারের নীতির কারণেই তোমাদের নিযোগগুলো স্থায়ী করা যাচ্ছে না। ’
তিনি আরও জানান, নিযোগ স্থায়ী করার ব্যাপারে তারা উচ্চবাচ্য করলেই মামলা কর্তৃপক্ষ মামলা দিয়ে দেয় এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ছাটাই করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১১