ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে ঝুঁকছে দক্ষিণ এশিয়া

বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১১
বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে

ঢাকা: খাদ্য সংকট ক্রমশ বাংলাদেশকে ভয়াবহ ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে এ সংকট  গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে।

এ কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখে পৌঁছায়। এখানেই থেমে নেই সংকটের চিত্র। এ কারণেই প্রতিনিয়ত এ অঞ্চলে বেড়ে চলছে অভুক্ত মানুষের সংখ্যাও। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ ভয়াবহতার চিত্র।

এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে এদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এ অঞ্চলে সবার পেছনে। একই অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা ও নেপাল। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রাজনৈতিক সংকটে দোদুল্যমান পাকিস্তান রয়েছে উন্নতির পথে। এছাড়া কৃষিবাণিজ্য সহজীকরণ করে খাদ্য আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় দণি এশিয়ার সব দেশের অর্থনীতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে ভারত রয়েছে এর প্রভাবমুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার মানব সম্পদ উন্নয়ন রিপোর্ট ২০০৯-এ এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।


সিপিডির এ গবেষণাপত্রটি ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস প্রকাশ করে। যার প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয় পাকিস্তানের মাহাবুবুল আলম মেমোরিয়াল সেন্টারে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা ভয়াবহ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৮৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভারতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৫ বার। উন্নত দেশগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণে কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।

তবে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দ্বিমত আছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড.মশিউর রহমান এ সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে এ গবেষণায় ব্যবহৃত ইউএনএফপির রিপোর্টে অসঙ্গতি রয়েছে। ’

উল্লেখ্য, ২০০০-২০০১ আদমশুমারি রিপোর্টের ভিত্তিতে ইউএনএফপি বলেছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি হবে শতকরা ১ দশমিক ৪০ ভাগ আর বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী তা হবে শতকরা ১ দশমিক ৩৬ ভাগ।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলো হয়, বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান দিন দিন বাড়ছে। আগে তাদের পরিচয় ছিল শুধু গৃহিণী এখন তারা কর্মজীবী নারী। এতে তাদের অবস্থানও ভাল হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির বিকাশের কারণে  দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে না পারলে ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।

এছাড়া প্রতিবেদনে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি আর মানব উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। তাহলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন ল্যমাত্রা (এমডিজি), দারিদ্র বিমোচন কৌশল (পিআরএস) ও মানব সম্পদ উন্নয়ন (এইচআর) এর ল্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এজন্য দক্ষিণ এশিয়ার  দেশগুলোর আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি দরকার। সাফটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এর সুফল ভোগ করতে পারেনি।

ওই প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে বলা হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যে তার উৎপাদন বাণিজ্যনীতি শিথিল করার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়, আগামী ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে চীন হবে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী  দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তাই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা দরকার। এছাড়া আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ার মানব উন্নয়ন রিপোর্টে আফগানিস্তানকে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।

আন্ত:বাণিজ্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্ত:বাণিজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। সেখানে ভারতের মতো বড় দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে নেপাল ও বাংলাদেশ।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের বাণিজ্য বৈষম্য রয়েছে। এ বৈষম্য কমাতে হলে সবার আগে ভারতের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে বলেও এ গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।  

সেবা খাতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারের উচিত এ খাতে জোর দেওয়া। এছাড়া দেশে পর্যাপ্ত কর্মখালি রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে। প্রশিক্ষিত জনশক্তি সৃষ্টির জন্য জাতীয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থাকলেও তা কার্যকর নয় বলেও সিপিডি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।