ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সাক্ষাৎকারে ইব্রাহীম খালেদ

আ’লীগ ও বিএনপি’র ১০/১৫ জন ব্যবসায়ী রাজনীতিক শেয়ার বাজারের ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১১
আ’লীগ ও বিএনপি’র ১০/১৫ জন ব্যবসায়ী রাজনীতিক শেয়ার বাজারের ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন

‘১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে আওয়ামী লীগের একজন ব্যবসায়ী-রাজনীতিক জড়িত ছিলেন। কিন্তু এখন তার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন বিএনপি’র একজন রাজনীতিক-ব্যবসায়ীসহ আরও বেশ কয়েকজন।

তবে তাদের এই সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি নয়। তারা গত চার মাসে শেয়ারবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। কিন্তু এই টাকাটা তারা আর কোনও দিন বিনিয়োগ করবেন না। এই টাকা তারা মেরে দিয়েছেন। ’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর এবং কৃষিব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট এস এম গোলাম সামদানীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তার নিজের ভাষ্যেই তুলে ধরা হলো পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি।  

ইব্রাহীম খালেদ বলেন:

আমার প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজারে যখন দাম বাড়লো তখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনলো। কিন্তু যখন দাম পড়ে গেল তখন টাকাটা কোথায় গেল? আমি বলবো, এই টাকাটা কয়েকজনের পকেটে চলে গেছে।

আমি মনে করি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে শুধু একটি দলের লোক জড়িত নন। উভয় দলের লোকজন এখানে জড়িত। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও পুঁজিবাজারে তাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। বিরোধ হলো সংসদে গিয়ে। দেশের সাধারণ মানুষের টাকা একাট্টা হয়ে মেরে দিতে তাদের কোনো অসুবিধা নেই।
 
আমি বলবো কোনও কোনও ক্ষেত্রে এসইসি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। অথবা তাদের অসহায়ত্ব ছিল। তা না হলে এটি কীভাবে হলো। তাদের দায়িত্ব হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন সরকার থেকে শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল সেটা করা গেল না। যেখানে শেয়ার কম সেখানে এতো টাকা বাজারে এলো কী করে? এসইসির কাজ হলো বাজারে কোনও সমস্যা হলে প্রয়োজনে বাজার কখনও টেনে ধরা কিংবা ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু এসইসি সেটা না করে বরং উল্টোটা করেছে। যখন টেনে ধরার দরকার ছিল তখন তারা দাম বাড়ায় সহায়তা করছে। না হলে বাজারে দাম বাড়লো কেন?

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টতায় সরকার মানে তো এসইসি, সরকার মানেতো শেখ হাসিনা নন। এই কারসাজির জন্য এসইসিই দায়ী।     

বাজারে দরপতনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও দায়িত্ব নেই বলেই আমি মনে করি। বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেট মনিটরিং করে। স্টক মার্কেটের দায়িত্ব এসইসির। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসি-- এদুটির আলাদা চার্টার আছে। তারা বিনা চার্টারে কাজ করে না। কার চার্টারে কি আছে সেটা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আইন রয়েছে সেখানে কোথাও লেখা নেই যে স্টক মার্কেট বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।

এক খাতের বিনিয়োগ অন্য খাতে বিনিয়োগ না করা, এসএলআর, সিআরআর জমার পরিমাণ বাড়ানো এবং পরিশোধিত মূলধনের অতিরিক্ত অর্থ বাজারে বিনিয়োগ না করা সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে বাজার পড়ে গেছে- এমন অভিযোগ রয়েছে।

আমি বলবো, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে সেগুলো নেওয়া তার দায়িত্ব ছিলো। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করার পর ব্যাংকগুলোর কোনও সমস্যা হলে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে ধরতাম। ব্যাংকগুলো যখন বাজারে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলো ঠিক রাখার জন্য যা করার দরকার ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক তা-ই করেছে। ব্যাংকগুলো যখন অতিরিক্ত অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করা শুরু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক তখন তাদের ধরলো। তবে আমি বলবো এটা আরও আগে করা দরকার ছিল। যেটুকু বাংলাদেশ ব্যাংকের করা দরকার ছিল তারা সেটুকু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে বাজারে দরপতন হয়নি।

বাজার একবার উঠলে আবার পড়বে। এটাকে কারেকশন বললেও এটা কারেকশন না। কয়েকটি গ্রুপ রাতে বসে ঠিক করে আগামীকাল কোন শেয়ারের দাম বাড়বে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কী করার আছে! তবে এখানে এসইসির করণীয় আছে। কোনও কোনও শেয়ার যখন প্রিমিয়ামে বিক্রি হয়, সেখানে তারা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম কেন দেয়?
    
বাজারের এই অবস্থায় থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেন। তবে বিরাজমান অবস্থায় উত্তরণের কোনও পথ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। অস্বাভাবিক উত্থান হলে এভাবেই পতন হয়। তবে একটা পথ বলতে আমি বলবো এই অবস্থায় এসইসিকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করা না হলে শেয়ারবাজার ঠিক করা যাবে না। এখানে সৎ ও দক্ষ লোক বসিয়ে বাজার পরিচালনা করতে হবে।     

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা ২২ জানুয়ারি ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।