ঢাকা: শিগগিরই ওয়াসা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্র্নীতির অভিযোগ তদন্তে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর ওয়াসার রাজস্ব পরিদর্শক আনিসুর রহমানের দাখিল করা অভিযোগপত্র (নথি নম্বর ৩০৬/২০১০) আমলে নিয়ে দুদক তা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
আর এ তদন্তের জন্য চলতি সপ্তাহেই তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ চূড়ান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
অভিযোগপত্র অনুয়ায়ী, ড. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওয়াসার চেয়ারম্যান থাকাকালে ওয়াসা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অস্ট্রেলিয়াস্থ এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে ওয়াসা থেকে ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৮শ’ ২০ টাকা বিল তুলে নেন। এছাড়া বিদেশি ওই সংস্থার প্রতিনিধি থাকার বিষয়টি গোপন করে তিনি ওয়াসার চেয়ারম্যান হন এবং প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করেই তার এক আত্মীয়কে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসবের বাইরে ২০০৯ সালের এপ্রিলে ওয়াসা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত মিরপুর, ধানমণ্ডি, বারিধারা ও উত্তরায় নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রায় ৪৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার চারটি ভবন কিনেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহেও ৭০ বিঘা জমি কিনেছেন ড. গোলাম মোস্তফা।
এ সব অভিযোগের সঙ্গে ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ দুদকে জমা দিয়েছে বলে দুদকসূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।
তবে দুর্নীতি-অনিয়মের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ড. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সত্যিই যদি দুদকে এমন অভিযোগ গিয়ে থাকে তবে আমার কিছু বলার নেই। এ ধরনের তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি প্রস্তুত। ’
পরিচয় গোপন করে চেয়ারম্যান হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ এর জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ২০০৯ সালের এপ্রিলে আমি ওয়াসায় যোগ দিই। ’
এদিকে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে অস্ট্রেলিয়াস্থ এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ-প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ওয়াসার পরামর্শকের কাজ করেন ড. গোলাম মোস্তফা। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সময় তিনি বিষয়টি গোপন করেন। এমনকি যোগদানের পরও আগের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যান। ওই সময় তিনি এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি হিসেবে ওয়াসা থেকে ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৮শ’ ২০ টাকা বিল তোলেন, যা ওয়াসা আইনের পরিপন্থি। তাই এ অভিযোগে এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালকে কালো তালিকাভুক্ত করে ওয়াসার উন্নয়ন সহযোগী ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
এছাড়া ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়াসহ সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগেও ড. গোলাম মোস্তফা আর্থিক অনিয়ম করেছেন বলে ওয়াসার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে নম্বরপত্র তৈরি করে ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও গোলাম মোস্তফা তার আত্মীয় প্রকৌশলী ড. তাকসিম এ খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এছাড়া সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের সময় তিনি টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। নিয়োগ দেন চাহিদার অতিরিক্ত লোক।
অভিযোগপত্র অনুয়ায়ী, ঢাকা ওয়াসায় যোগদানের পর ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে মিরপুরের সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের ২৩ নম্বর বাড়ির ৬ তলা ভবন কেনেন গোলাম মোস্তফা। এর তিন মাস পরই তিনি ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার রোড-৮/এ, বাড়ি ৬৯, ফাট-এফ-১ কেনেন ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়। বারিধারা আবাসিক এলাকার জে ব্লকের ৮ নম্বর সড়কে আ/এ নম্বরে ১০ কাঠার একটি প্লটেও ৮ তলা এক বিশাল ভবন রয়েছে তার। এর আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে উত্তরা আবাসিক এলাকায় ১০ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর সড়কে ৫ কাঠা জমির ওপর ১০ কোটি টাকার আরো একটি বাড়ি রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, ‘ড. গোলাম মোস্তফা তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহেও ৭০ বিঘা জমি কিনেছেনে এ অল্প সময়ের মধ্যে। এ সকল অভিযোগের সঙ্গে ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ দুদকে জমা দিয়েছে বলে দুদকসূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দুদক অভিযোগ তদন্তের কাজ শুরু করবে। এজন্য প্রথমে দুদকের পরিদর্শক মাহবুবুর রহমানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলেও পরে তাকে বিভাগীয় কার্যালয়ে বদলি করা হয়। একারণে তার স্থলে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে আসা কাজী আব্দুল হান্নানকে আগামী বৃহস্পতিবার এ পদে নিয়োগ করা হতে পারে।
স্থানীয় সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১১