ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বিশেষ স্কুলবাসে মাসে ৬ লাখ টাকা ভর্তুকি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিআরটিসি

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১১
বিশেষ স্কুলবাসে মাসে ৬ লাখ টাকা ভর্তুকি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিআরটিসি

ঢাকা: স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হওয়া ১৪টি স্কুলবাসের খরচ যোগানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি)। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা ৫ মাসেও পায়নি বিআরটিসি।



এছাড়া স্কুল সার্ভিসের জন্য বাসগুলো কিনতেও বিআরটিসিকে ঋণ নিতে হয় ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। এ টাকা শোধ করা নিয়েও জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি। ঋণ শোধ করা নিয়েও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বিআরটিসিকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না।

এসব ইস্যু নিয়ে দুই দফা চিঠি দিয়েও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না বিআরটিসি।  

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বিআরটিসি উল্লেখ করেছে, শিক্ষার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রির টাকা থেকে এ সার্ভিস পরিচালনার খরচ উঠছে না। বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে বিআরটিসি এই লোকসানের দায়ভার নিতে চায় না।

১৪টি বাস চালাতে প্রতিদিন বিআরটিসির খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার ১৬৮ টাকা। আর এ সার্ভিস থেকে প্রতিদিন গড়ে আয় হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। অতিরিক্ত খরচ হওয়া ২২ হাজার ৫৬৮ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ হিসাবে এক মাসে ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৬ লাখ টাকা।

আজিমপুর থেকে পল্লবী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গত ১৬ জানুয়ারি থেকে বিশেষ এই বাস সার্ভিস চালু করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ২৬টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ সার্ভিস থেকে সুবিধা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগেই এই বাস সার্ভিস চালু হয় বলে জানান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তবে বাস সার্ভিস চালুর ৫ মাস আগেই গতবছরের ২৪ আগস্ট এর খরচ ও বাস সংগ্রহের ঋণের টাকার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বিআরটিসি। সেই চিঠির কোনো প্রত্যুত্তর পায়নি বিআরটিসি। নিরূপায় হয়ে বাস সার্ভিস চালু হওয়ার চারদিন আগে গত ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা চিঠি দেয় বিআরটিসি।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এমএম ইকবাল চিঠিতে বলেছেন, ‘বিআরটিসি যেহেতু আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করে, সেহেতু এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এতো ভর্তুকি দিয়ে বাস পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ’

বিআরটিসির চেয়ারম্যান স্কুলবাস পরিচালনার খরচ ও ভর্তুকির ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, এই রুটে একটি বাসের দিনে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আয় হবে ৯০০ টাকা। এ হিসাবে ১৪টি বাসের এক মাসের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আয় ধরা হয় ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

আয়ের বিপরীতে ১টি বাস পরিচালনার পেছনে প্রতিদিনের সর্বনিম্ন খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৫১২ টাকা। এ হিসাবে ১৪টি বাসের জন্য একদিনে খরচ হয় ৩৫ হাজার ১৬৮ টাকা। আয় হয় ১২ হাজার ৬০০ টাকা।

ব্যয় ও আয়ের মধ্যে যোগ-বিয়োগ করে বিআরটিসি হিসাব করে দেখেছে, এই সার্ভিসের জন্য তাদের প্রত্যেক মাসে ব্যয় হবে অন্তত ৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৮ টাকা। আয় হতে পারে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৮ টাকা। এই হিসাবে প্রতিমাসে ভর্তুকি দিতে হবে অন্তত ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৮ টাকা।

এই টাকার অংক নিয়েই আপত্তি বিআরটিসির। ভর্তুকির টাকা বিআরটিসির তহবিল থেকে দেওয়া হলে বাৎসরিক হিসাবে তা বিপুল অংকের টাকায় পরিণত হবে। একটি বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে এই লোকসানের দায়ভার তারা নিতে রাজি নয়।

এদিকে প্রত্যেকটি বাসের মূল্য ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬১ টাকা। এ হিসাবে ১৪টি বাস কিনতে বিআরটিসিকে ঋণ নিতে হয় ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। এই টাকাও পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই ঋণ মওকুফ অথবা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে বিআরটিসি।

স্কুলবাস সার্ভিস পরিচালনায় বিআরটিসির এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ সচিব মোজাম্মেল হক খান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘খরচ তোলার জন্য বিআরটিসি নিজেই কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চায় বিআরটিসি। এ ব্যাপারে তারা আমাদের অনুমোদন চেয়েছে। ’

বাস সার্ভিস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে খুব শিগগিরই বিআরটিসির সঙ্গে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানান যোগাযোগ সচিব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।