ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

চাকরির মেয়াদ ১৫ বছর প্রসঙ্গে আকবর আলি খান:

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে প্রশাসনে অবিশ্বাস, অস্থিরতা দেখা দেবে

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে প্রশাসনে অবিশ্বাস, অস্থিরতা দেখা দেবে

ঢাকা: চাকরির মেয়াদ ১০ থেকে ১৫ বছর করার প্রস্তাবে প্রশাসনে অস্থিরতা ও অবিশ্বাস দেখা দেবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান।

সোমবার বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।



আকবর আলি খান বলেন, ‘চাকরির মেয়াদ এভাবে বেঁধে দিলে সরকারি চাকরিজীবীদের মনোবলও ভেঙ্গে যাবে। প্রশাসনে অস্থিরতাও ঠেকানো যাবে না। ’

মন্থর প্রশাসনকে গতিশীল ও কর্মস্পৃহ করতে সরকারের প্রশাসন পদ্ধতিকেই পাল্টে দেওয়ার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।    

অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আকবর আলি খান প্রশাসনে নিজের চাকরির অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীকে তার বক্তব্য আরও পরিস্কার করতে হবে। যারা এখন চাকরি করছেন তাদের ব্যাপারে কী হবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা সরকারি চাকরি বিশেষত প্রশাসনে যোগদান করেন তারা ৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করা যাবে এটা জেনেই চাকরি নেন। ১৫ বছর পর আবার চাকরি খুঁজতে হবে-- এটা অনেকের জন্যই সুখকর নাও হতে পারে। ’

‘এছাড়া ১৫ বছর পর আবার দলীয় আনুগত্য দেখিয়ে চাকরি যোগাড় করতে হবে এই নিয়ম হলে তো চাকরির শুরুর দিন থেকেই তিনি কোনো একটি দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করতে শুরু করবেন’, মন্তব্য তার।

আকবর আলি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন হলে সংবিধানও তো সংশোধন করতে হতে পারে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানেই রয়েছে সরকারি চাকরি হবে মেধাভিত্তিক। যদি ১৫ বছর পরের পদগুলোতে দলীয় বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তবে তো সেখানে আর মেধার মূল্যায়ন নয়, দলীয় আনুগত্যই মূখ্য হয়ে দাঁড়াবে। ’

সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘স্থায়ী আমলাতন্ত্র (পার্মানেন্ট ব্যুরোক্রেসি) নিয়েই তো বিশ্বের অনেক দেশ এগিয়ে গেছে, তাদের উন্নতিও চোখে পড়ার মতো। আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই স্থায়ী আমলাতন্ত্র রয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে সবসময় বলা হয়, সেখানে প্রশাসনের উচ্চপদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ (স্পয়েল সিস্টেম) দেওয়া হয়। কিন্তু এটাতো তাদের সব বিভাগে ও সব পদে করা হয় না। স্থায়ী ব্যুরোক্রেসির মতো সেখানেই সরকারি চাকুরেরাই উচ্চতর ও শেষ পদগুলো পর্যন্ত পদোন্নতি লাভ করেন। ’  

আকবর আলি খান আরও বলেন, ‘স্থায়ী আমলাতন্ত্র দিয়েও তো অনেক কিছু করা সম্ভব। তবে সেজন্য প্রয়োজন আমলাদের নিরপেক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা। রাজনৈতিক স্বার্থে আমলাদের ব্যবহার করলে তা নিয়েতো প্রশ্ন উঠবেই। ’

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ ও চাকরির মেয়াদ সম্পর্কে নিজের দেওয়া প্রস্তাব তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, ‘প্রশাসনে একজন কর্মকর্তা ১০ থেকে ১৫ বছর চাকরি করার পর অবসর নেবেন। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা এরপর বিভিন্ন উচ্চপদে নিয়োগ পাবেন। তবে তা হবে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক। ’  

অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এমনটি করা হলে প্রশাসনের কাজে গতি আসবে এবং সরকারের এজেন্ডাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।

অর্থমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতার পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়োগও বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রশাসনে নিয়োগ হবে রাজনৈতিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।